জীবনের মূল্য ২৫০ টাকা।

in hive-129948 •  6 days ago  (edited)

বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম
আসসালামু আলাইকুম

শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি।

প্রিয়, আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম। আজ আমি আপনাদের, জীবনের মূল্য ২৫০ টাকা।
এই বিষয় সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।

আসুন শুরু করি

1000052834.jpg

source

ক্যালেন্ডারের পাতায় সালটা ২০২৪। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকার পরে রাতে বাসায় এসে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম । রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজে। সারাদিনের অধিক ক্লান্তিতে মাথা যখন বালিশের সাথে লাগলো তখন ঘুম চলে আসলো। ঘুমটা খুবই গভীর। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ স্বপ্ন আরম্ভ হলো। আমি প্রাচীন যুগে চলে গিয়েছি। যে সময়টা মানব সভ্যতা শুরু হচ্ছে মাত্র। প্রাচীনকালের খুবই লম্বা মোটা দেহাকৃতির মানুষ গুলো দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তাদের গায়ে কোন কিছুই নেই। যাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মতোন তাদের গায়ে গাছের কিছু লতাপাতা রয়েছে। মাথার চুল দেখে বুঝা যায় না কোনটা নারী কোনটা পুরুষ। মাথার চুল গুলো খুব বড় ।

পুরুষদের দাড়ি, মোছ নাভি পর্যন্ত এলোমেলো ময়লাযুক্ত। চুল দাড়ি এবং শরীরের অনেক অংশের পশম বেশ অস্বাভাবিক। দেখতে বেশ ভয়ংকর লাগছে। তারা হচ্ছে সভ্যতার সূচনার প্রথম মানুষ। আর আমি হচ্ছে আধুনিক সভ্যতার প্রযুক্তিগত উন্নত বিশ্বের মানুষ। তাই তাদের দেখে আমার মনে ভয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাদের আচার-আচরণ খুবই অন্যরকম যা বর্তমান আমাদের সাথে কোন কিছুই মিলে না। তাদের ঘরবাড়ি জায়গা সম্পত্তি কোন কিছুই নেই । গাছের তলে তাদের বসবাস। শিক্ষা এবং গণনা বা, সংখ্যা বলতে তাদের কোন ধারণা নেই। তারা খাদ্য কখনো মজুদ করে না। প্রতিদিনই বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে গাছের লতাপাতা ফলমূল খেয়ে থাকে।

আর মাঝে মাঝে পশু পাখি ধরে পাথর উপর ঘসে আগুন তৈরি করে কিছুটা হালকা গরম করে কাঁচা মাংস খেয়ে থাকে। তাদের কাঁচা মাংস খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার গা শিহরিত হয়ে উঠলো। আমি তাদের সবকিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু তাদের মাঝে শিক্ষার কোন জ্ঞান নেই । তারা সভ্যতার আদিম যুগের মানুষ তাই তাদের মাঝে মনুষত্ব, বিবেক, বুদ্ধি তেমন কিছু আমি দেখতে পাই নি। তারা বনে জঙ্গল থেকে যা নিয়ে আসে তা সবাই মিলে খায় । আবার জঙ্গলে যায় খাবার সংগ্রহ করে খায়। এভাবে তাদের দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে। তাদের তেমন কিছু আমি পরিবর্তন দেখতে পাই নি।

তাদের মাঝে থাকতে থাকতে আমি তাদের মাঝে একেবারে মিশে গেলাম। যখন আমি কয়েকমাস তাদের মাঝে ছিলাম তারা আমাকে খুব ভালো ভাবে কাছে ডাকলো। এবং তারা যা খাচ্ছে তা আমাকে খেতে দিলো। আমি অনেক দিন তাদের মাঝে ছিলাম‌। তাদের খাদ্য সংকট ছিলো খুবই বেশি। তারা অনেক কষ্ট করতো খাবারের জন্য। প্রতিদিন খাবার সংগ্রহ করতে পারতো না। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত প্রত্যেক ঋতুতে তারা সমান খাবার সংগ্রহ করতে পারতো না । যদিও তাদের মাঝে কোন মনুষত্ব, বিবেক, জ্ঞান ছিলো না। তারপরও তাদের মাঝে আমি সহানুভূতির লক্ষ্য করলাম । একজন অন্যজনের প্রতি অনুভূতি দেখাতো। কে যদি উপবাস থাকতো তাহলে তাকে খাবার সংগ্রহ করে এনে দিতো।

তারা কখনো মারামারি করত না। তারা কাঁচা মাংস খায়। কিন্তু অনেকদিন উপবাস থাকার সত্তেও তারা একে অন্যজনের মাংস কখনো খায় নি। এইটাই তাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। তাদের মাঝে অন্য কোন কিছু না থাকলেও তাদের হৃদয় সহানুভূতি ছিলো । একে অন্যজনের রক্ত মাংস খেত না এই বিষয়টা আমার খুব অবাক করেছে। যে জায়গায় তারা পশুপাখিদের কাঁচা মাংস খেয়ে থাকে। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আমি মোবাইল দেখে নিলাম তখন সকাল ছয়টা বাজে। আমি কোন কিছু বুঝতেছিনা আমার পুরা শরীর কাপতেছে। এরই মাঝে মোবাইলের নোটিফিকেশন দেখলাম একটা ছোট বাচ্চাকে হত্যা করা হলো।

আমি হয়তো ভাবছি আমি ভুল কিছু দেখতেছি। টিভির রিমোটে হাতে নিলাম । টিভির হেডলাইন দেখলাম সেই একই কথা শিশু মুনতাহার হত্যা। আমি শুয়া থেকে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। তাড়াতাড়ি আমার আম্মাকে ডাকলাম। আম্মাকে বললাম, আম্মা আজকে টিভির নিউজ দেখছো। আমা বললো হাঁ। টিভিতে দেখলাম খুবই সুন্দর ফুটফুটে মুনতাহা নামে একটা মেয়েকে হত্যা করা হলো। এই বিষয়টা আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না। রাতের স্বপ্ন এবং সকালে বাস্তব ঘটনা আসলে পুরো বিষয়টা আমার কাছে খুবই অন্যরকম মনে হচ্ছে। আমি বারবার টিভি চ্যানেল পরিবর্তন করে দেখতেছি ফুটফুটে মুনতাহা মেয়েটিকে কিভাবে হত্যা করা হলো।

পরবর্তীতে জানতে পারলাম মাত্র ২৫০ টাকার জন্য মেয়েটিকে হত্যা করা হলো। মেয়েটির চেহারার দিকে তাকালেও হত্যা করার কথা ভুলেও ভাবা যায় না। সেখানে মাত্র ২৫০ টাকার জন্য তিনজন মহিলা মিলে একজন মেয়েকে হত্যা করলো তা খুব নৃশংসভাবে। আসলে হত্যার বর্ণনা স্বাভাবিক মস্তিষ্কে দেওয়া সম্ভব নয়। কি লাভ হলো আমরা এতো উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলে? কি লাভ হলো আমরা এতো শিক্ষিত হয়ে? কি লাভ হলো আমরা এতো প্রযুক্তি উন্নত করে। যেখানে আমরা চাঁদে এবং মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সেখানে মাত্র ২৫০ টাকার জন্য একটি মেয়েকে হত্যা করে তিনজন মানুষ মিলে। আমরা আধুনিক সভ্যতায় বসবাস করি এটা বলতে খুবই লজ্জা হচ্ছে। তাদের কি কোন মায়া, মমতা, বিবেক মনুষত্ববোধ ছিল না। আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে। আদিম যুগের মানুষের মাঝেও সহানুভূতি ছিলো। কিভাবে একটা মেয়েকে হত্যা করা হলো তাদের হৃদয়ে কিছুটা সহানুভূতি ছিলো না।


পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

এতক্ষণ আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পেলে আমি অন্য কোন বিষয় উপস্থাপন করবো, ইনশাআল্লাহ।

অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন । এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো।

আমার পরিচিতি

G0mIPwfurEJVlbirXIKFAUZVIuK.jpg

আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে পেরে আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলায় প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন, মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করে থাকি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।


VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

puss_mini_banner4.png

Banner PUSS.png

♥️ আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ 🖤

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এক নারকীয় ঘটনার উল্লেখ করলেন ভাই। মাত্র আড়াইশো টাকার জন্য এমন ঘটনার কথা ভাবা যায় না। শিশুদের দেখলেই মন বিগলিত হয়। সেখানে একজন শিশুকে সামান্য কটা টাকার জন্য হত্যা করা মহাপাপ। তবে আপনার স্বপ্নটি বেশ ছিল। আদিম মানুষের সঙ্গে আপনিও তো পুরনো পৃথিবীতে বিচরণ করে এলেন। আর সেই অভিজ্ঞতার কথা বেশ ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই পোস্টটি পড়ে অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।

মুনতাহার বিষয় টি আসলেই বেশ বেদনাদায়ক ভাই! অবাক লাগে মানুষ নামধারী পশু গুলো আমাদের চারপাশে এমন ভাবে থাকে, অথচ চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলে আমরা তা টের ও পাই না!! আসলেই কি লাভ এমন সভ্যতা দিয়ে? কিসের এত গর্ব! আমারও ভীষণ লজ্জা লাগে!!

জি আপু, মানুষ নামধারী পশু গুলো আমাদের চারপাশে এমন ভাবে নিরবে বিচরণ করে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

বর্তমান এরকম নৃশংস হত্যাকান্ড বহু জায়গায় ঘটেই চলেছে। যেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়ার নয়। সামান্য কিছু অর্থের কাচের নিষ্পাপ জীবন মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এটা কখনোই করতে পারেনা। আমি মনে করি দিন যতই যাচ্ছে সমাজের কর্মকাণ্ডগুলো খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরকম মৃত্যু গুলো খুবই কষ্ট দেয় যেটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।

জি ভাই, স্বাভাবিক মানুষ নৃশংস হত্যাকান্ড কখনোই করতে পারে না। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

ব‍্যাপার টা এমন ভাই আগের মানুষ গুলোর মধ্যে সভ‍্যতা ছিল না কিন্তু মনুষ্যত্ব ছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যে সভ‍্যতা আছে অথচ মনুষ্যত্ব নেই। মুনতাহার ব‍্যাপার টা সত্যি হৃদয়বিদারক। এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষ ভাবতেও বেশ খারাপ লাগে।

জি ভাই, আমাদের মধ্যে সভ‍্যতা আছে অথচ মনুষ্যত্ব নেই। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।