আসসালামু আলাইকুম।
আমি আলামিন ইসলাম আছি আপনাদের সাথে। আমার ইউজার নেমঃ@alamin-islam। আমি বাঙালি, বাংলাদেশের একজন নাগরিক।আশা করি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি এর সকল সদস্যবৃন্দ আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে সবসময় অসাধারণ চমৎকার পদ কনটেস্ট এর আয়োজন করা হয়। এই কনটেস্টে আমার কাছে বিশেষ করে অনেক অনেক মজা লেগেছে, মজার লাগার প্রধান কারণ এই কনটেস্ট এর মাঝেই খুঁজে পাবো আমরা আমাদের ছোটবেলার গ্রীষ্মকালীন ফল চুরি করে খাওয়ার গল্প কাহিনী। ফল চুরি করে খাওয়ার গল্প কাহিনী বলার প্রধান কারণ আমি মনে করি ছোটবেলায় বা শৈশবকালে প্রতিটি ছেলের গ্রীষ্মকালীন এর কোন না কোন ফল চুরি করে খাওয়ার ঘটনা ১০০% ঘটে থাকে। আমি আমার ছোটবেলায় গ্রীষ্মকালীন ফল চুরি করার একটি মজার বাস্তব কাহিনী আপনাদের সাথে তুলে ধরব, আশা করি আপনাদের খুবই ভালো লাগবে।@hafizullah ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই খুবই সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমাদের ছোটবেলার গ্রীষ্মকালীন ফলের স্মৃতিসমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আমার শৈশবটা কেটেছে শহরে। তবে গ্রীষ্ম কালীন ফল পাকুড় চুরি করার অনেক ঐতিহাসিক কাহিনী আমার জীবনে অনেক বার ঘটেছে। তার মধ্য থেকে একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
তখন সময়টা ছিল গ্রীষ্ম কাল। বাংলা মাস ছিল জ্যৈষ্ঠ। এ সময় প্রচুর পরিমাণে গ্রীষ্ম কালীন ফল পাওয়া যায়। আর ঠিক এই সময়ে আমাদের স্কুল গরমের ছুটি দিয়ে দিয়েছিল। আমি তখন হয়তো ক্লাস ফাইভে পড়ি। স্কুল ছুটি হতেই বাড়িতে এসে আম্মুকে বললাম, আম্মু স্কুল ছুটি দিয়েছে, আমরা কালকে মামার বাড়িতে বেড়াতে যাবো। অবশ্য বেড়াতে যাওয়া টা অনেক দিন আগে থেকেই ঠিক ছিল। তো সেই প্ল্যান মতই আমরা সবাই আমার মামার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমার মামার বাড়িটি ছিল গ্রামে। গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। এরপর মামার বাসায় উঠে হাত মুখ ধুয়ে, খাওয়া-দাওয়া করে আমি বেরিয়ে পরলাম আমার সমবয়সী কিছু বন্ধুদের সাথে, বন্ধু ঠিক নয় আমার মামার বাড়ির ঐ দিকের সবাই আমার মামা ই লাগে। তারা বয়সে কিছুটা আমার সমবয়সী ছিল।মামার বাড়িতে গেলে আমি সব সময় তাদের সাথেই খেলাধুলা এবং ঘোরাফেরা করতাম। আমরা ছিলাম দলে চারজন। ওরা গ্রামের ছেলে হওয়াতে আমার তুলনায় একটু বেশি দুরন্ত ছিল। তবে আমিও দুরন্ত ছিলাম কিন্তু শহরে থেকে অভ্যস্ত তাই কোথাও তো একটু শহরের ছাপ থেকেই যায়।
তো আমাদের চারজনের মধ্যে একজন বলে উঠল অনেকদিন পর তুমি এসেছো চলো তোমাকে আম পেড়ে খাওয়ায়। তখন আমি বললাম তাহলে চলো আমার মামাদের বাগানে। তখন তারা বলল না ওই বাগানে যাবো না, আমরা স্কুল থেকে আসার পথে অন্য একটি বাগান দেখে রেখেছি, সে বাগানে প্রচুর পরিমাণে আম পেকে রয়েছে। ওই পাকা আম গুলো পাড়তে যাবো। তখন আমি শহুরে ভাবে বললাম, বাগানের মালিক কিছু বলবেনা তো? তখন একজন বলে উঠল যে, বাগানের মালিক টের পেলে তো কিছু বলবে! আমি খবর নিয়েছি বাগানের মালিক কোথাও যেন গেছে, আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আর এর মধ্যে আমাদের কাজও সাড়া হয়ে যাবে। এরপর আমরা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে চলে গেলাম সেই কাঙ্খিত আম বাগানে।
সেই বাগানের প্রায় সবগুলো গাছেই আম ধরে ছিল। তো সবথেকে যে গাছটা একটু উঁচুতে ছিল সেই গাছ টাতেই সব থেকে বেশি পাকা আম ধরে ছিল। আমরা সেই গাছটাকেই লক্ষ্য করলাম। ওরা গ্রামের ছেলে হওয়াতে তিনজনেই গাছে উঠতে পারত কিন্তু আমি গাছে উঠতে পারতাম তবে ওদের মতো অতটা দক্ষ নয়। এরপর তাদের মধ্যে সবথেকে দক্ষ একজন আম গাছে উঠে পরল আম পাড়ার জন্য এবং নিচে আমরা বাকি তিনজন পাহারায় ছিলাম। যে আম গাছে উঠে ছিল তার নাম ছিল পিয়াল। পিয়াল গাছে উঠে প্রথমে কতগুলো নিজের পকেটে ভরে নিলো এরপর বাকি আমগুলো সাথে নিয়ে যাওয়া একটি ব্যাগে ভরতে লাগলো। আর আমরা ছিলাম কড়া পাহাড়ায়, যদি কেউ চলে আসে তাহলে পিয়াল কে শিস দিয়ে সিগন্যাল দিব। বেশ ভালোমতোই আমাদের আম চুরি চলছিল। কিন্তু আমার আবেগি মনে হঠাৎ খেয়াল আসলো আমিও গাছে উঠবো। এরপর মজা করতে করতে নিচের দুইজন আমাকে কোনরকম কাঁধে তুলে সব থেকে নিচু গাছটাই তুলে দিল।এরপর আমি ছোটখাটো ডাল বেয়ে গাছের একটু উপরে উঠে গেলাম। আর এই উপরে উঠাই হলো আমার কাল।
ডাল বেয়ে উপরে উঠে আমি বেশ কিছু আম পেড়ে আমার পকেট ভর্তি করে ফেলেছি। এরপর যখন আমার নিচে নামার পালা আসলো তখন আমি আর গাছ থেকে নামাতে পারছিলাম না। আম গাছের ডালগুলো বেয়ে উপরে উঠে তো গিয়েছি কিন্তু উপর থেকে নিচের ডাল গুলোতে আর নামতে পারছি না। এদিকে সবথেকে উঁচু গাছে উঠেছিল পিয়াল। তার আম পাড়া শেষে সে নিচে নেমে এসেছে। আর এদিকে আমি বোকার মতো গাছের উপরে বসে আছি নামতে পারছি না। কি একটা অবস্থা ভাবুন তাহলে।
একে চুরি করতে এসেছি অন্যের বাগানে, তারপর আবার গাছে উঠে নামতে পারছি না। এর থেকে লজ্জার আর কি আছে বলুন তো ! আর এখনই ঘটে গেল সেই কাঙ্ক্ষিত ঘটনা অর্থাৎ ঠিক সেই সময়ে বাগানের মালিক বাগানে চলে আসে। বাগান মালিক এর উপস্থিতি টের পেয়ে আমার সেই সাথী গুলো আমাকে একা ফেলে যে যে যার যার মতো পালিয়ে গেল। এদিকে আমি বেচারা ছেলে গাছে উঠে আর নামতে পারি না। পালাবো কি করে? কি করুণ পরিস্থিতি একবার ভেবে দেখুন।
বাগানের মালিক কিন্তু এখনো কিছু বোঝেনি যে তার বাগানে আসলে কি হচ্ছে। সে এসেছিল এমনি বাগানে এক পাক ঘুরে যেতে। বাগান ঘুরতে ঘুরতে সেই মালিক চলে আসে সে আম গাছটার নিচে। আম গাছের নিচে আমার চটি দেখে বাগানের মালিক আম গাছের উপরের দিকে তাকায় এবং আমাকে দেখে আর সেই মুহূর্তটা যে আমার কাছে ঠিক কি মুহূর্ত ছিল তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। বাগানের মালিক আমাকে যেই মুহূর্তে দেখে তখন আমার মনে হচ্ছিল যে আমার আত্মা টি মনে হয় আমার হাতে বেরিয়ে এসেছে। একবার পরিস্থিতি টা বুঝেন তাহলে। এরপর বাগানমালিক কর্কশ গলায় বলে উঠলো কে তুমি? আম গাছে কি আম চুরি করতে উঠেছো? এদিকে আমি বুঝতে পারছিলাম ভয়ে আমার হার্টবিট বাইরে থেকেও প্রচুর জোরে শোনা যাচ্ছে হয়তো। আমি ভয়ে কেঁদেই ফেলেছি প্রায়। এরপর লোকটি আমাকে ভালো মতো দেখে বুঝতে পারল আমি আসলে কে আর কার ছেলে। আমার পরিচয় বুঝতে পেরে সে কিছুটা নরম সুরে আমাকে বলল গাছ থেকে নেমে আসো, কিছু বলবো না তোমাকে। তখন আমি কাঁদো কাঁদো সুরে বললাম তাকে, "আমি গাছ থেকে নামতে পারছি না"। আমার এ কথা শুনে সেই লোকটি হেসে বলেন, তাহলে গাছে উঠলে কি করে?
তখন আমি তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম, আর সেই লোকটি আমার কথা শুনে খুবই হাসতে লাগল। তারপর লোকটা কিছু ছেলেপেলে ডেকে আমাকে গাছ থেকে নামালো। এরপর আমাকে সাথে করে আমার মামার বাড়িতে দিয়ে গেল।এরপর তার মুখে আমাদের এই সমস্ত কৃতকর্মের কথা শুনে প্রথমে আমার আম্মু আমাকে একটু বকা দিয়েছিল কিন্তু পরে এই ব্যাপারটি নিয়ে সবাই খুবই হাসাহাসি করেছিল। আসলে মান সম্মান বলে আর কিছুই ছিলনা তখন। কিন্তু এখন সেই ঘটনাটা মনে পড়লে নিজে নিজেই খুবই হাঁসি পায়।
আমি@Al-Amin ইসলাম , আমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার ইচ্ছা আমি দেশ ও দশের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করতে চাই, আমার গর্ব হয় নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে। আমি গর্বিত বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, বাংলাদেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙালি, প্রকৃতির রূপ, রস ,গন্ধ সবকিছুই আমার অহংকার।
প্রয়োজনে পাশে আছি আমার সাথে যোগাযোগ করুন:-
ফেসবুক || টুইটার || ইউটিউব || ডিস্কোড
দিলেন সব ফাস করে বাচার জন্য বাগান মালিকের কাছে । আর বন্ধু গুলাও বিপদ দেখলে পালাবেই। ভালই লিখেছেন গল্পটি পড়ে অনেক মজা পেলাম। ভাল থাকবেন । শুভেচ্ছা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে, জি ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন ছোটবেলার বন্ধু গুলো বিপদ দেখলেই পালিয়ে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার গল্পটি আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনি চমৎকার ভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার সুন্দর ও গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে, আপনার সুন্দরতম মন্তব্য পেয়ে আমি অনেক অনেক খুশি আনন্দিত হলাম। শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit