আস্সালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের প্রাণ প্রিয় বন্ধুরা, সম্মানিত এ্যাডমিন ও মডারেটরবৃন্দ, কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। নিজের জীবনের কেটে যাওয়া ১২ বছর নিয়ে একটি পোষ্ট লিখতে যাচ্ছি। ভুলত্রুটি হলে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ!
সাল টা ছিল ২০১২ বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে সর্ব শেষ শহরের একটি প্রাইভেট ফার্মে ইন্টারভিউ দিলাম, যেহেতু তাদের একটি অনলাইন সফটওয়্যার এবং হিসাব রক্ষক এর জন্য লোক প্রয়োজন ছিল তাই আমাকে ইন্টারভিউ ঐ ব্যাপারে নেওয়া হয়েছিল। আমিও কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট নিয়ে সব সময় কাজ করতাম তাই আমার বসের সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পেরেছিলাম। তারপরও চাকরিটা অনিশ্চিত ই থেকে যাই। কারন বলা হয় নিয়োগের ব্যাপারে পরবর্তীতে জানান হইবে। যাই হোক আমিও আমার কয়েকজন বড় ভাইকে বলে একটু সুপারিশ করলেই চাকরিটা হয়ে যাই।
শুরু হল বন্দি জীবন অফিস শুরু হয় সকাল ১০ টায় আর শেষ হয় রাত্র ১০ টায় মাঝে দুপুরের খাবারের জন্য কিছুটা সময় পাই বাড়ি যাওয়ার জন্য কিন্তু কাজের চাপে দ্রুত চলে আসতে হয়। এভাবে চলতে থাকে বন্দি জীবন। আমি যেহেতু অফিসের হিসাবরক্ষক পদে ছিলাম তাই আমার ছুটির তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। শুধুমাত্র শুক্রবার টা ছুটি পেতাম। অন্যকোন দিন ছুটি চাইলেও পেতাম না। মাঝে মধ্যে আমি আমার বসকে বলিতাম আমার যদি শরীল খারাপ করে তাহলে আপনি কিভাবে অফিস চালাবেন বস বলে, চলবে কোন রকমে। সত্যি যদি কখনও আমার শরীল খারাপ হইত তবুও সেই খারাপ শরীল নিয়ে আমাকে অফিসে এসে কাজ করিতে হইত।
এমন এক সময় আসল বাইক দূর্ঘটনায় আমার পায়ের একটি আঙ্গুল ভেঙ্গে যাই এর জন্য আমাকে প্রাই ২৫ দিন বাসায় থাকতে হয় তারপরও বাসা থেকে অফিসের যাবতীয় কাজ করিতে হইত। বাসায় ল্যাপটপ অন করে রাখতাম এবং বাসা থেকেই অফিসের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করিতাম।
আমার বসের রড ও সিমেন্ট এর ব্যবসা তাই আমি ছাড়া অন্য যত স্টাপ তারা সব সময় বাইরে রড ও সিমেন্ট বিক্রয় এর জন্য থাকত। শুধুমাত্র আমি একা অফিসের মধ্যে সারাদিন থাকতাম। অফিসের বাইরে শুধুমাত্র নামাজের সময় বাদে বাকী সময় থাকতে হয়। কারন বস একটার পর একটা কাজ দিতেই থাকে। এ জন্য বাহিরে কোন কাজে যেতে পারিতাম না। কয়েকদিন ব্যাক্তিগত কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম এবং সেই মুহুর্তে বস একটি কাজের জন্য ফোন করে আমাকে অফিসে না পেয়ে অনেক বকাবকি করেছিল বিধায় নিজের যাবতীয় প্রয়োজন শুধুমাত্র শুক্রবারেই মিটিয়ে নিতাম।
জীবনের ১২টি বছর একটি রুমের মধ্যে কাটিয়ে দিলাম এখনও পর্যন্ত ঐ বন্দি জীবন কাটাচ্ছি আমার সঙ্গী আমার একটি মোবাইল ফোন আর একটি কম্পিউটার। সারা দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকে বন্ধদের সাথে একটু চ্যাট করা ছাড়া কারো সাথে সময় দিতে পারতাম না। এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তির জন্য অন-লাইনে বিভিন্ন আয়ের উপায় দেখতে থাকি মাঝে ফরেক্স ট্রেড শুরু করি অনেক লাভের আশার কিন্তু এখান থেকে লাভ এর চেয়ে বেশি লস করে ফেলি। এ ছাড়াও আরও অনেক কাজ অন লাইনে করেছি কিন্তু চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলার মত অর্থ এখনও উর্পাজন করিতে পারি নাই।
এই মাসের প্রথম দিকে ইউটিউব এ একটি ভিডিও দেখে স্টিমিটে যোগদান করি। পরবর্তীতে আমার বাংলা ব্লগে যোগদানের মাধ্যমে আমি স্টিমিটে লেখালেখির কাজ শুরু করি। আমার বাংলা ব্লগে যোগদানের পর থেকে যাবতীয় সাহায্য আমি এ্যাডমিন হাফিজুল্লাহ ভাইয়ের নিকট থেকে পেয়েছি। তিনি আমাকে সার্বিক সহযোহীতা করেছেন।
আমি আশাকরি এখান থেকে আমি আপনাদের সহযোগীতায় ভাল একটি স্থানে যেতে পারব এবং এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সামনে আরো নতুন ও আকর্ষণীয় পোস্ট নিয়ে হাজির হবো। ততদিন পর্যন্ত সাথেই থাকুন।