স্টিমিটের সহযোদ্ধারা,
"আসসালামু আলাইকুম" আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। আজকে আমি আমার বাংলা ব্লক কমিউনিটিকে ধন্যবাদ দিতে চাই এই কারণেই যে এখানে আমি আমার নিজস্ব মতামত স্বাধীনভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারছি এই কমিটির মাধ্যমে।
একজন মানুষ অনেকটা ঝড়ঝাপটা, অদম্য পরিশ্রম ও শতভাগ চেষ্টার মাধ্যমে সে তার নিজের হাতে অল্প অল্প করে বহু দিনের সাধনার মাধ্যমে ছোট্ট একটি ব্যবসাকে দাঁড় করায় তা আমরা যারা ছোট থেকে একটা ব্যবসাকে দাঁড় করিয়েছি শুধুমাত্র তারাই বলতে পারবে। আর যদি সে ব্যবসা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে সে কতটা কষ্ট পায়, তা যার গেছে সে ছাড়া আমরা আসলে কেউ এর আর্তনাতটা বুঝতে পারব না। এর ফলে ওই মানুষটা কতটা অসহায় হয়ে পড়ে কতটা সে কষ্ট পায় এবং কতটা সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে সেটা একমাত্র সেই বলতে পারবে। আমরা শুধু বাইরে থেকে দর্শক হিসেবে সেটাকে দেখব, কেউ হাসি ঠাট্টা করবে, কেউ তার সাথে একাত্মতা বোধ করে সান্তনা দিবে, কেউ বকা ঝকা করবে এটাই হলো বাস্তবতা।
আর এই বাস্তবতাকে ঘিরে আমি আজকে আপনাদের সামনে এরকমই একটি বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব যেটার শিকার আমি নিজেও হয়েছি। আমি এখন আপনাদের সামনে যে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করব এই ঘটনাটি চার দিন আগের একটি ঘটনা।
আরাফাত একজন সফল মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী, সে তার ব্যবসার পাশাপাশি সকল ধরনের মোবাইল রিচার্জ, মোবাইলের স্ক্যাচ কার্ড, মোবাইল সিম ও সিলিন্ডার গ্যাস ইত্যাদি বিক্রয় করেন। আমার সাথে তার ভালো একটি সম্পর্ক যেহেতু আমিও একই ব্যবসার সাথে জড়িত। আরাফাত সাদাসিদে একটি ছেলে নম্র-ভদ্র সবার সাথে ব্যবহার ও তার আচার-আচরণ সবকিছুই ঠিক আছে। এই জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে খুব পছন্দ করি। যদিও আমার দোকান থেকে তার দোকান ২ থেকে ৩ মিনিট সময় হেঁটে যেতে লাগে। তারপরেও আমি যখন সময় পাই তখনই তার সাথে গিয়ে আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা যদিও একজন একজনের বন্ধু নই, কিন্তু অল্প কিছুদিনের পরিচয়েও একজন একজনের সাথে টাকা পয়সা নিয়ে লেনদেন বা বিপদে আপদে সহযোগিতা করতাম।
হঠাৎ গতপরশু আনুমানিক রাত নয়টার সময় সে আমার দোকানে এসে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করলো। আমি তো ওর কান্নাকাটি দেখে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাইহোক আমি তাকে কান্নাকাটির থামিয়ে, কি হয়েছিল জিজ্ঞাসা করলাম? সে এতটাই আফসেট ছিল কোনভাবেই কান্না থামাতে পারছিল না। তারপর আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম বললাম ভাই কি হয়েছে বল আমারে, কি সমস্যা তোমার? সে শুধু এটাই বলছে ভাই আমি শেষ। আমাকে তো একবারে শেষ করে দিয়েছে। আমি তাকে বললাম কেন কি হয়েছে কে শেষ করে দিয়েছে? তখন সে বলল ভাই আমি দুপুর ১:৩০ সময় দোকান বন্ধ করে গোসল এবং খাওয়া-দাওয়া শেষ করে যখন দোকানে ফিরে আসলাম এসে দেখি আমার দোকানে তালা ভেঙ্গে শাটার খুলে আমার সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। দোকানে ওই মুহূর্তে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, চারটা মোবাইল, ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো মোবাইল স্ক্যাচ কার্ড ও সিম এবং আমার নিজের মানি ব্যাগটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে।
আমার দোকানের পাশে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল এবং সেই সিসিটিভি ক্যামেরায় আমি সবকিছু দেখতে পেলাম কারা কারা এই কাজটি করেছে যদিও তাদের প্রত্যেকের মুখে মাক্স পরা ছিল। প্রায় ১০ থেকে ১২ জন সঙ্গবদ্ধ হয়ে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই কাজটি করেছে। কাউকে আমি ওইভাবে চিনতে পারছিনা। এই মুহূর্তে আমি যে দোকান থেকে এক কাপ চা কিনে খাব সেই পরিমাণ টাকা ও আমার কাছে নেই। কথাটা শোনা মাত্রই আমি একেবারে আসমান থেকে পড়লাম ওর কান্নার সাথে আমিও প্রায় কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। পরবর্তীতে চিন্তা করলাম কি আর হবে কান্নাকাটি করে। তখন তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম এবং তাকে পরামর্শ দিলাম তাড়াতাড়ি একটা থানায় মামলা করার জন্য। সে আমাকে বলল ভাই থানায় মামলা করেছি, পুলিশ এসে সবকিছু তদন্ত করে গেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো রকম বা কোন খবর দিতে পারেনি, শুধু বলে গেছে পাঁচ দিন পরে যোগাযোগ করার জন্য।
আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত পাশের লোকের কী হলো, কী হচ্ছে, কী হবে কিছুই আমরা খবর রাখি না এটাই হলো তার বাস্তব একটা প্রমাণ। তার কারণ হলো পাশের দোকান থাকা সত্বেও পাশের দোকানের লোক গুলো কেউ বিষয়টা দেখতে পায়নি দিনে-দুপুরে এরকম একটি কাজ তারা করতে সক্ষম হল শুধুমাত্র আমাদের অসচেতনতার কারণে।
এখানে দুইটা বিষয় আর একটু বলি আরাফাত ছেলেটি এই মুহূর্তে টাকার জন্য সে তার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেনা এই দিকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সে কোন রেজাল্ট পাচ্ছে না পুলিশের পক্ষ থেকে। তার কারণ হলো এই মুহূর্তে সে খুবই অসহায় পুলিশের উর্ধ্বতন পর্যায়ে হয়তো কেউ নেই এই কারণেও হতে পারে আবার পুলিশকে এখানে হয়তো খুশি না করলে সে তো তারও কাজগুলো করবে না সব মিলিয়ে সে কোনটাই করতে পারছে না বলে সে আজকে খুবই অসহায়। আর আরাফাতদের মত এরকম ছোটখাটো মানুষগুলো এভাবেই তার ব্যবসা থেকে ঝরে যায় এবং একটা পর্যায়ে অসহায়ত্বকে মেনে নিতে না পেরে জীবন থেকেও ঝরে যায়।
উপরের উল্লেখিত বিষয়টি আমার জন্য খুব একটি বেদনাদায়ক বিষয় ছিল। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। কারণ এরকম একটি ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল যদিও আমি আবার সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। জানিনা আরাফাত কি তার সেই পর্যায় আবার যেতে পারবে কি না। তারপরও আমি তার জন্য দোয়া করি যাতে সেই ঐ খারাপ মুহূর্তটিকে অতিক্রম করে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
কি বলে যে সান্তনা দিবো😥😥
আমারও খুব কষ্ট লাগছে ওই ভাইয়া টার জন্য।
দিনের বেলায় এতো মানুষ থাকার পরেও কি ভাবে সম্ভব হলো।
আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়েত করুক।
পুলিশ তো কিছু করবে না, আমার ফোন নিয়ে গেছিলো কয়েক দিন পুলিশ খবর নিলো এরপর শেষ 😥😥😥
দুআ করি আল্লাহ যেনও ভাইয়াকে সাহায্য করেন😥
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি পড়ে একটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জানিনা তাকে যে কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত। আসলে সান্ত্বনা দিয়েও কোনো লাভ আছে বলে আমি মনে করিনা। এই যে যারা এই কাজ গুলো করলো তাদের কিন্তু পুলিশ চাইলেই ধরতে পারবো। আর আমাদের সমাজের এই অবস্থা যে বেশিরভাগ পুলিশ নিয়ে কথা বলতেই লজ্জা লাগে। দোয়া করি উনি যেনো আবার নিজের পায়ে দাড়াতে পারে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার পুরো পোস্টটি পড়ে আপনি অসাধারণ একটি মন্তব্য করেছেন। এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে কান্না চলে আসলো ভাই তিল তিল করে গড়া সম্পদ যদি ১০মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। যার যায় নেই বুঝে আজকে কিছু নড়পশুর কারনে সমাজে টিকে থাকার মুশকিল। দোয়া রইলো আরাফাত ভাইয়ের জন্য আল্লাহর রহমতে উনি যেনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit