১০% পে-আউট 'লাজুক-খ্যাক' এর জন্য
স্টিমিটের সহযোদ্ধারা
"আসসালামু আলাইকুম" আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। "আমার বাংলা ব্লক কর্তৃক" আয়োজিত প্রতিযোগিতা- 22, এবারের বিষয় "শেয়ার করো তোমার জীবনের প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতি" এই প্রতিযোগিতায় আমার অংশগ্রহণ। এখানে আমি প্রথমে @shuvo35 ভাইকে ধন্যবাদ জানাই যে এত চমৎকার একটা টপিক নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। সেই সাথে আমার বাংলা ব্লক কমিউনিটির ফাউন্ডার @rme এক্সিকিউটি @blacks এডমিন ও মডারেটর সহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই এত চমৎকার একটা কমিউনিটির মাধ্যমে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার অনেকগুলো বাঙালি মানুষকে নিয়ে খুবই চমৎকারভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সাথে এত চমৎকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য।
১৯৯৯ সালের ঘটনা, আমি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমার মনে আছে তখন মোবাইল মানুষের হাতে হাতে ছিল না। একটা গ্রামীন সিমের দাম তখন ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মত। আর মোবাইল সেট বাটন সেট ছাড়া তো কোনো প্রশ্নই উঠে না, তার উপরে আবার অনেক বড় বড় সেট এবং সাথে এন্টেনার ছিল কথা বলতে গেলে এন্টেনার টা উঠিয়ে বাইরে কোন খোলামেলা জায়গায় গিয়ে কথা বলতে হতো। না এটা আবার আমাদের ফোন ছিল না মানুষের কাছে দেখতাম এভাবে কথা বলতো। আমরা তখন চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনিতে থাকতাম। সেই এলাকার আমাদের এক পরিচিত বড় ভাই এরকম মোবাইল এর একটি দোকান দিয়েছিল। তার কাজ ছিল মানুষের মোবাইল আসলে ঘরে ঘরে গিয়ে মোবাইল পৌঁছে দিবে আর সেখান থেকে একটা চার্জ পাবে। এছাড়াও তার দোকান থেকেও মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতো। তখন এক মিনিট কল রেট এর মূল্য ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা এবং ৩০০ টাকার নিচে কোন স্কেচ কার্ড পাওয়া যেত না। পরিচিত হওয়া সত্ত্বে বড় ভাইয়ের দোকানে আমার প্রায় বসা হত, বড় ভাই যখন এদিক ওদিক যেত তখন দোকানে আমি বসে দোকান চালাতাম।
আমি প্রায় সময় বিকেল বেলায় সময় দিতাম বেশি। বড় ভাইয়ের একটা সাইকেল ছিল কারো ফোন আসলে তাকে পরবর্তীতে আবার দশ মিনিট পরে ফোন করতে বলে সাইকেল নিয়ে তাদের বাসায় চলে যেতাম মোবাইল ফোন নিয়ে। জানিনা কেন যেন ওই সময়টা আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। মানুষ কথা বলতো দেশের বাইরে থেকে ফোন দিত একটু আশ্চর্য হতাম মনে মনে ভাবতাম কি যন্ত্র বানাইলো বিজ্ঞানীরা কোন তারের সংযোগ নেই শুধুমাত্র একটা মোবাইল সেটে আর সাথে একটা সিম কার্ড এর সংযোগের মাধ্যমে কিভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে তারা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
যাইহোক পরবর্তীতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম যতদিন যাচ্ছে মোবাইলের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও কলরেট বেশি ছিল তারপরও মানুষ দিন দিন এর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। একটা সময় আমাদের পাশের বাসার আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের বাবা সেও একটা মোবাইল কিনেছিল। আমার তখন মনে আছে ওই মোবাইলটি বাটন সেট ছিল এবং একটি গ্রামীণফোনের সিম কিনেছিল ৫৭০০ টাকা দিয়ে আর সেটটি কিনেছিল সম্ভবত পাঁচ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা হবে। যেহেতু আমার স্কুলের বন্ধুর বাসা আমার পাশেই ছিল তাই আমাদের ও খুব আনন্দ হয়েছিল। এই কারণে এই যে আগে তো কারো ফোন আসলে দোকানে যেতে হতো এখন আর সেই ফোনটা আমাদের পাশের বাসায় আঙ্কেলের কাছে আসবে এটা ভেবে খুব ভালো লাগছিল এবং তারাও আমাদেরকে তাদের নাম্বারটা দিয়েছিল। আমরাও সেই নাম্বারটা নিয়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে ওই নাম্বারে আমাদের মোটামুটি সবগুলো ফোন কল আসতো আর ফোন করার প্রয়োজন হলে আমরা ফোনের দোকানে গিয়ে ফোন করতাম।
এভাবেই চলছিল বেশ কিছুদিন। আমি এসএসসি পরীক্ষা পাস করে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমি তখন পড়ালেখায় তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। সবদিক বিবেচনা করে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি শুরু করি টিউশনি দিয়ে সেভাবে চলছে না। আর ভালো সেরকম টিউশনিও পাওয়া যায় না। তখন এক একটা ছাত্র পড়ালে ২০০ টাকা ৩০০ টাকা পাওয়া যেত। যাই হোক পরে ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে একটা চাকরি নিয়ে নিলাম পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকলাম। একটা সময় এইচএসসি পাশ করে আমি ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছি। পারিবারিক একটা সমস্যার কারণে আমাদের সবাইকে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসতে হলো।
যাইহোক ঢাকায় এসে আমরা পুরো ফ্যামিলি নিয়ে এয়ারপোর্টের আশকোনা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছিলাম। তখন ২০০৪ এর ঘটনা। সেখানে আমার বাবা আগে থেকেই এসে একটা ফলের দোকানের ব্যবস্থা করে মোটামুটি আমাদের বাসা ঠিক করেছিল। আমিও তখন চিন্তা ভাবনা করলাম কিছু একটা করতে হবে। আমি তখন গার্মেন্টসের কাটিং ডিপার্টমেন্টে সহকারী হিসেবে একটা চাকরি নিলাম। আমার মনে আছে আমি তখন কাটিং এর সহকারী হিসেবে মাত্র ১৮০০ টাকা বেতনের চাকরি নিয়েছিলাম তো বাড়তি ওভারটাইম নিয়ে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা পেতাম।
বাবা ফলের ব্যবসা করছে, আমি গার্মেন্টসে চাকরি করছি মোটামুটি চলছিল। যদিও ওই সময় আমাদের পারিবারিক বা সাংসারিক আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরেও সবদিক বিবেচনা করে আমাদের সংসার চালিয়ে মোটামুটি সঞ্চয় করার মত কোন অবস্থায় ছিল না। যেহেতু আমাদের সংসারটা তুলনামূলক একটা বড় সংসার ছিল। আমরা পাঁচ ভাই বোন ছিলাম আমার ওয়াইফ ছিল আমার একটা বাচ্চা ছিল। (আপনারা হয়তো বলবেন এখানে ওয়াইফ আর বাচ্চা কোথায় থেকে এলো এ বিষয়টা আমি আপনাদের অন্য আরেকদিন বলার চেষ্টা করব।)
এরপরও আমাদের পরিবারের সকলেরই একটা শখ ছিল একটা মোবাইল ফোনের বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা ছিল আমার। একটা মোবাইল ফোন হলে মোটামুটি আত্মীয়-স্বজনের সাথে খোঁজখবর নেওয়া যায় বা খোঁজখবর রাখা যায়। কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল আব্বার ফলের ব্যবসার জন্য, কারণ তিনি আরতের মালিকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোনের প্রয়োজন ছিল। আব্বা যখন ফলের ব্যবসা করতো তখন সেই কাক ঢাকা ভোরে ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকার বাদামতলী ফলের আড়তে যেতে হতো এবং সেখান থেকে ফলের অর্ডার দিয়ে আসতে হতো। অনেক সময় অসুস্থ থাকলে যেতে পারত না সেদিন আর যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না। তো মোটামুটি সব দিক বিচার বিশ্লেষণ করে সত্যি বলতে কিছু টাকা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে একটি সিম ও একটি মোবাইল ফোন কেনা হয়েছিল।
যদিও তখন কিছুটা মানুষের হাতের নাগালে এসেছিল মোবাইল ও সিমের দাম। আমার খুব স্পষ্ট মনে নেই তারপরও যতটুক ধারনা হচ্ছে আমাদের যে মোবাইলটা আমরা কিনেছিলাম সেটা একজন লোকের কাছ থেকে পুরাতন মোবাইল কিনেছিলাম যার দাম ছিল ৩৫০০ টাকা এবং একটা নতুন সিম কিনেছিলাম। সিমটি কত দিয়ে কিনেছি আমার সঠিক মনে নেই। যেহেতু পরিবারের আমি বড় ছেলে ছিলাম তাই মোবাইল ফোনটি রাখার দায়-দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। আর আমি মোবাইল ফোন এর আগে ঘাটাঘাটি করেছিলাম তাই কিছুটা আমার ধারণা ছিল, সেজন্যই আমি মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করেছিলাম।
যদিও মোবাইল ফোনটি আমি কোথাও যেতে নিয়ে যেতাম না বাসায় থাকতো। যে কোন প্রয়োজনে বাসার সবাই ব্যবহার করত। কিন্তু যতক্ষণ আমি বাসায় থাকতাম ততক্ষণ আমার কাছে থাকতো। আমার মনে আছে যেদিন এই মোবাইল এবং সিম কিনে এনে ছিলাম আমি সহ আমার পরিবারের সবাই এত খুশি হয়েছিলাম বিশেষ করে আমার ছোট ভাই বোন গুলো ওরাও এত খুশি এত আনন্দ যা আমি আপনাদের ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সবাই খুশিতে এটাই বলছে যে সবার মোবাইল আছে সে সাথে আমাদেরও মোবাইল আছে এত খুশি হয়েছে বলার বাহিরে। যদিও মোবাইল ফোনটি কিনে আনতে আমাদের কিছুটা কষ্ট হয়েছিল তারপরেও এই কষ্টটা সকলের আনন্দের মাঝে কিছুই ছিল।
পরিশেষে বলবো আল্লাহতালার কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া যে আল্লাহতালা আমাকে এবং আমার পরিবারের সবাইকে ভালো রেখেছেন সুস্থ রেখেছেন। হয়তো ওই সময়টায় আমাদের পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছিলেন এবং যেখান থেকে আমরা হয়তো উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সকলের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। কথায় আছে কষ্টের পরে মানুষের কেষ্ট মিলে।
আশা করি আমার প্রথম মোবাইল মোবাইল হাতে পাওয়ার যে অনুভূতিটি আপনাদের মাঝে আমি শেয়ার করেছি, পড়লে আপনাদের ভালো লাগবে। অবশ্যই কার কাছে কেমন লেগেছে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
তারিখঃ ২৯-০৮-২০২২ ইং
বাহ দেখছি অনেক আগের ঘটনা। আপনার সেই বড় ভাইয়ের দোকানের মত আমার আম্মুও আব্বু সাথে যোগাযোগ করার জন্য বাজারে দোকানে গিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলতো। আসলেই মানুষ আগে অনেক কষ্ট করেছে এখন প্রতিটি বাচ্চার কাছেই ফোন থাকে। যাইহোক খুব ভালো লাগলো আপনার সেই পুরনো স্মৃতি ও মোবাইলকে ঘিরে লেখাগুলো। আর আপনার বউ বাচ্চার কাহিনী শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার মোবাইল ফোন প্রথম হাতে পাওয়ার অনুভূতিটা আপনি পড়েছেন জেনে খুব খুশি হলাম। আসলে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে অনেক পুরনো স্মৃতিকে আবার নতুন করে ফিরে পাচ্ছি এটা অনেক বড় একটা আনন্দের। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা অবিরাম আপনার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসাধারণ অনুভূতি শেয়ার করেছেন আপনি। পুরো পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে অতীতের অনুভূতিগুলো মনে করলে কেমন যেন অন্যরকম মনে হয়। প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি সুন্দরভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার পোস্টটি পড়ে খুবই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার ঘটনাটি পড়ে অনেক বেশি ভালো লাগলো আপনার এই ঘটনাটা অনেক আগের আর সেই আমলে ফোনের থেকে সিমের দাম অনেক বেশি ছিল। আমি আমার কাকুর কাছ থেকে শুনেছি আর তখন নাঅকি একটা সিম কিনেছিল ৫০০০ টাকা দিয়ে এটা শুনে খুবই হেসেছিলাম বর্তমান এখন একটা সিমের দাম এক টাকা। যাইহোক আপনার ঘটনাটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া শুভকামনা রইল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছেন ভাই সে আমলে ফোনের চাইতে সিমের অনেক দাম ছিল। আর তাছাড়া আমার মনে আছে একটা সিম আমার এক বড় ভাই কিনেছিল 5700 টাকা দিয়ে আমার স্পষ্ট মনে আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার পোস্টটি পড়ে চমৎকার মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit