গত পর্বে আমি ডিপ্লোমা লাইফ সম্পর্কে ছোট ছোট কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। শেষ পর্বে পরবর্তীতে কি হলো সেটা নিয়ে আলোচনা করব। ডিপ্লোমা লেভেল শেষের দিকে মোটামুটি ভালোই ছিলাম। কিন্তু তখন পড়াশোনার চাপ অতিরিক্ত ছিল, শেষের দিকের সেমিস্টার গুলোর মান টোটাল রেজাল্টে খুব বেশি কাউন্ট হয় সেজন্য সে রেজাল্ট ভালো করা খুবই দরকার ছিল। মাঝখানে আমার শরীর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পরে এবং ঢাকা শহরে বলতে গেলে আমি একাই থাকতাম। এমন একটা অবস্থার মধ্যে পরেছিলাম নিজের ওষুধ আনার জন্য কোন একটি ব্যক্তি ছিল না। সত্যিই ওই সময় গুলো অনেক খারাপ কেটেছে। প্রায় সাত-আট দিন বিছানায় পরে থাকার পরে খুব কষ্ট করে একটি বাসের টিকিট কেটে রওনা দিয়েছিলাম নীলফামারীতে যা খুবই কষ্টকর এবং দুঃখজনক একটি বিষয় ছিল। আসলে ব্যাচেলার ছেলেগুলো লাইফ এরকমই হয়। আশে পাশে কেউ থাকে না নিজের যত্ন নিতে হয় আর যখন শরীর খারাপ থাকে তখন যে কি রকমের অবস্থা সৃষ্টি হয় সেটা শুধুমাত্র তারাই জানে।
সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল এর মাঝে পড়াশোনার মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গিছিল। শুধুমাত্র সেই সেমিস্টারের রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিল যার কারণে শেষের দিকে হয়তো আউট অফ ফোর রেজাল্ট হয়নি যা আমার কাছে একটু খারাপ লেগেছে। যখন ডিপ্লোমা শেষের দিকে তখন আমার এই চাকরিটি ছারতে হয় কারন আমার ইচ্ছা ছিল কোন একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবো। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে যারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করেন তাদের জন্য শুধুমাত্র একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সেটি হচ্ছে ডুয়েট। সেখানে যে পড়াশোনা হয় তার এক পারসেন্ট ডিপ্লোমা লেভেল এ পড়াশোনা করানো হয় না। তার জন্য আলাদা কোচিং করতে হয় তাই আমি এই জবটা ছেড়ে দিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ডুয়েট এর পাশেই সেখানে একটি কোচিং এ ভর্তি হই।
সেখানে কোচিং করা শুরুতে আমাদের কলেজ থেকে গিয়েছিলো সাতজন কিন্তু দুঃখের বিষয় শেষপর্যন্ত শুধুমাত্র আমি একাই থাকতে পেরেছি কারণ সেখানে যে লেভেলের পড়াশোনার চাপ দেওয়া হয় সেই লেভেলের চাপ অন্য কোন কোচিংয়ে দেওয়া হয় কিনা আমার জানা নেই। ডিপ্লোমা পড়াশোনা করেছি সেগুলো কে সত্যি বলতে পড়াশোনা বলে না, মাত্র ফাঁকিবাজি বলে। সেখানে গিয়ে বুঝতে পেরেছি আর পড়াশোনাটা কি। ডিপ্লোমা লাইফে যেসব পড়ানো হয় তার কোনকিছু কাজে আসেনা শুধু ডিপার্টমেন্ট এর পড়াশুনা ছারা। নতুন করে নতুন নতুন বিষয় শিখতে হয় বুঝতে হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো আউটপুট দিতে হয়। বিশেষ করে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ম্যাথমেটিক্স এবং ইংরেজিতে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ডিপার্টমেন্ট এর সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা হয়।
আমাদের ডিপার্টমেন্টের যেই সাবজেক্ট রয়েছে সেখানে সবাই মোটামুটি ভালো করে কারণ সম্পূর্ণ বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে শুধুমাত্র তাদের কলেজের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় স্থান অধিকার কারী ছাত্ররা এসেছিল এবং সেখানে কম্পিটিশন ছিলো মাত্রা অতিরিক্ত। এখানে একটি ছিটের পিছনে মিনিমাম ১০ থেকে ১৫ জনকে কম্পিটিশন করতে হয় যা সত্যিই অনেক প্রতিযোগিতামূলক একটি বিষয় ছিল। শেষ পর্যন্ত সেখানে টিকতে পেরেছে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানে আমার ভর্তি হয়নি। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি আরো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেখানেই আমি পরীক্ষা দেই এবং সেখানেই আমার ভর্তি কনফার্ম হয়। মূলত এভাবেই ডিপ্লোমা লাইফের কেটেছিলো এরপর থেকে শুরু হল করোনা সময় এবং যা আমার জন্য সত্যিই একটি দুঃখের বিষয় ছিল এবং পড়াশুনায় দুই বছর প্রায় পিছিয়ে গিয়েছি।
ডিপ্লোমা লাইফ থেকে আমি অনেক শিক্ষা পেয়েছি তার মধ্যে একটি হলো, জীবনে যখন কোন কিছু করার সুযোগ থাকবে সেই সুযোগ অবশ্যই নিতে হবে এবং ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। যে কোনো একটি কাজে লেগে থাকতে হবে কারণ আমাদের এই জীবনটা কতদিনের? স্বপ্নগুলো পূর্ণ লক্ষ্যে নিজেকে আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হতে হবে. যাই হোক এই ছিল আমার ডিপ্লোমা লাইফের বিষয়টি। আশা করি আপনারা সবাই সবার ভালো লেগেছে। আসলে আমি কোন কাজ কে ছোট করে দেখতে চাই না এবং আমার মাঝে সেই অহংকারও নেই। তাই আমি সৎ সাহস নিয়ে আজ বলতে পারছি যে আমি প্রথমের দিকে এত ছোট কাজ পর্যন্ত করেছি। যাইহোক আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।
বিষয়: আমার জীবনের ছোট্ট একটি অধ্যায় (শেষ পর্ব)
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.........
করোনা তো আমাদের অনেক কিছুর বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলো ভাই। তারপরেও আপনার জীবনের গল্প পড়ে ভালো লাগলো। আপনার ডিপ্লমা শেষ করলেন জাতির উদ্দেশ্যে একদিন কিছু খাওয়ান ভাই। ❤️❤️❤️
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা শুধু একটি গল্প নয় বরং আমার কষ্টে অর্জিত কিছু অভিজ্ঞতা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কোন কাজকেই আসলে ছোট করে দেখতে নেই। তবে আমরা অনেকেই ছোট কাজ করতে লজ্জাবোধ করি যা জাতি হিসেবে আমাদের উন্নতির জন্য একটি বড় অন্তরায়। আমি একবার অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে ফরিদপুর এসেছিলাম তখনই বুঝেছিলাম একা একা দূরে থাকার কি কষ্ট। আশা করি আপনার কষ্টের প্রতিদান কোন একদিন আপনি অবশ্যই পাবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাস্তব একটি কথা বলেছেন ভাই, আমরা ছোটকাজ কে অনেক অসম্মান করে দেখি। বর্তমানে সমাজের যা অবস্থা যারা ছোট কাজ করে তাদেরকে অনেক ছোট করে দেখা হয় কিন্তু আমি সব কাজকে সম্মান ভাবে শ্রদ্ধা করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit