মিস্টার রং নাম্বার - গল্পের দ্বিতীয় ও শেষ অংশ (@shy-fox 10% beneficiary)

in hive-129948 •  3 years ago 

মিস্টার রং নাম্বার

woman-5835747_960_720.jpg

ছবিটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে

আমার আজকের এই গল্পে মিতুর চরিত্রে গল্পটি লেখা হয়েছে।

গল্পের প্রথম অংশের পর ...............

আমি ওই পায়ের বেহাল অবস্থা নিয়েই এত বেশি অবাক হলাম যে মাথা কাজ করছিলো না ছেলেটার কাণ্ড দেখে। এরপর সাতদিন আর বাড়ি থেকে বের হওয়ার ভাগ্য হলো না। পা ফুলে খুব খারাপ অবস্থা, আমার কলেজ যাওয়া, কোচিং যাওয়া সব একদম মাটি। পায়ের দিকে তাকাতেই কান্না পাচ্ছিল খুব। একদিন বিকেলে এই ফোলা পা নিয়ে বসে আছি আমার ঘরটায়....এমন সময় মায়মুনা হাতে করে ছোটো একটা বাক্স নিয়ে এলো।
-কি রে এটা? খুব সুন্দর তো বাক্স টা।
-জানি না রে...তোর বাড়ি আসার পথে ঐযে ছেলেটা....আবির নাম করে...আমায় ডেকে হাতে দিয়ে বলল তোকে দিতে
-দেখি দে তো।
-কি রে,কি আছে ওটার মধ্যে?
-কি সুন্দর নূপুর জোড়া!
-সত্যিই অনেক সুন্দর রে! কিন্তু ওই ছেলে তোকে এইসব দিতে যাবে কেনো? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-আমিও না....এক কাজ কর...আমার পায়ে পরিয়ে দে তো দেখি...
-দে...পরিয়ে দেই
নুপুর গুলো খুব যত্ন করে আস্তে ধীরে পরিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় আবার সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল....
-হেলো,কে?
-আমি কিন্তু আপনার লিখা সব গল্প পড়ি
-কে?চিনি না তো। নাম?
-নেই...
-ধূর, ভুল নম্বরে কল দিয়েছেন। আর কোনোদিন এই নাম্বারে কল দিবেন না।
কেটে দিলাম। খুব বিরক্ত লাগছিলো। নাম নেই কিছু নেই আর বলে কিনা সে আমার সব গল্প পড়ে!

এরপর মাঝে প্রায় সাত আট মাস কেটে গেল। পরীক্ষা, বাড়ি বদল সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। আর এর মাঝে সেই ভুল নম্বর থেকে কল এসেছিল প্রায় ছয় সাত বারের মত। অত পাত্তা দিতাম না। বাড়ি বদলে আমরা গিয়ে উঠলাম ওই ছেলে যে বাড়িতে থাকতো ঐখানে, চারতলায়। ছেলে টা ওর মাকে নিয়ে ছয় তলায় থাকতো। শুনেছি, বাবা নেই। সংসার এই ছেলের রোজগারে নাকি খুব ভালো চলে যায়। এই ছেলে নাকি খুব ভালো রান্না পারে, ঘর গুছিয়ে রাখতে পারে। বাড়ি বদলে এখানে আসার পর থেকেই এই ছেলের প্রশংসা শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। একদিন মাকে নিয়ে দুপুরের খাবারের দাওয়াতে ওই ছেলের বাসায় গেলাম। আমি তো মনে মনে সত্যিই অবাক। এত সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে পুরোটা ঘর। আর আমাদের যত্ন আব্দীতে কোনো কমতি রাখলো না সে। খেতে বসে তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। এত দারুন খেতে খাবার!

এরপর থেকে ওই ছেলের সাথে মা আমার তুলনা করতে করতে বাড়ি মাথায় তোলার জোগাড়। আবারও একদিন সন্ধ্যায় ওই ভুল নম্বর থেকে কল।
-আপনার নাম জেনে কাজ নেই। আপনি কে তাও জানার ইচ্ছে নেই, আপনাকে না বলেছি কল দিবেন না?
-আমি কিন্তু আপনার দারুন ভক্ত। আপনার সব গল্প আমি পড়ি।এত ভালো লাগে.....
কেটে দিলাম। চিনি না তাকে...তাহলে কেনো আমি তার কথা শুনবো?
একদিন দুপুরে ঘরে চিনি নাই। মা বললো ছয় তলায় যেতে এক বাটি চিনি আনার জন্যে।
-আসলে চিনি শেষ। একটু হলে ভালো হতো।
-আসো মা,ভেতরে। দাড়াও, চিনি দিচ্ছি।
-ধন্যবাদ আন্টি....
ওমা.....ছেলে দেখি রান্নাঘরে। খুব মন দিয়ে রান্না বান্না চলছে। যদিও ঠিক না...তাও এক ফাঁকে ছেলেটার ঘরে উকি দিলাম। কি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা সবকিছু। পাশে থাকা পড়ার টেবিলটায় পেপার কেটে ফেলে রাখা এমন কতগুলো কাগজ চোখে পড়লো। ভালো করে দেখার সুযোগ আর হলো না সেদিন।
-এই নাও মা, চিনি। আবার কিছু লাগলে এসো কিন্তু। লজ্জা করো না একদম।
-আচ্ছা আন্টি...আসি....ধন্যবাদ।
তারপর একটা একটা করে দিন গেলো। সেই ভুল নাম্বার, আমার সেই নাম ছাড়া ভক্ত। কিছুটা আগ্রহ জাগলো জানার এই ভক্ত টা কে....
এইযে , দুইমাস পড়ে যার সাথে বিয়ে সেই আমার ভক্ত। ওনাকে অনেক কষ্টে খুঁজে পাওয়া। গুছিয়ে রাখা, ভালো রান্না পারা আর রাস্তার মোড়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে থাকা ছেলেটাই যে আমার ভক্ত এটা জানতে অবশ্য আমার একটু দেরি হয়েছিল কিন্তু জানতে পেরেছি এটাই অনেক।

প্রায় প্রতিদিন তার ভুল নম্বর থেকে কল দেয়া, আমার প্রশংসা করা, হুটহাট আমার জন্য উপহার পাঠানো এইসব কিছুই আবিরের কাজ ছিল। আমাদের ভালোবাসাটা হুট করেই হয়ে গেলো আবার পূর্ণতাও পেয়ে যাবে কয়দিন পর....ভাবতেই ভালো লাগছে ভীষন। ভুল নাম্বারে যোগাযোগ করে একদম ঠিকঠাক একটা জায়গায় চলে এসেছি এমন মনে হয় মাঝে মাঝেই। ছেলেটা এত ভালো যে বলার মত না। আমি সত্যিই ভাগ্য নিয়ে এসেছি....সুযোগ পেলেই তাকে মিস্টার রং নাম্বার বলে খেপাতে আমার কি যে ভালো লাগে.......... !!!!

......... সমাপ্ত ..........

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

গল্পের শেষটা পড়ে খুব ভালো লাগলো যে রং নাম্বারে পরিচয়ে ওদের বিয়ে হবে।আপনার গল্পগুলো ভালো লাগে আমার ,কারণ 2 পর্বে শেষ হয়।ধন্যবাদ ভাইয়া।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার লেখা গল্পটি পড়ার জন্য।