গল্পের প্রথম অংশের পর ...............
আপনার তখন খুব বেশি কষ্ট হবে, কাদতে পারবেন না, কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে না......শুধু ওই মানুষটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হবে যাকে আপনি প্রিয় মানুষ বানিয়েছেন, যাকে আপনি নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছেন। ওই মানুষটা কে জড়িয়ে ধরে খুব করে কাদতে ইচ্ছে হবে আপনার যে ছেড়ে গেছে, যাকে পাওয়ার আশা একদম শূন্য আপনি নিজেও জানেন। যার কাছে আপনার ভুলগুলো বিশাল কোনো পাহাড়ের মত, যার কাছে আপনি যে একটা মানুষ এটার চেয়ে আপনার কি কি আছে, কেমন গুন সেটা বড়ো, যার কাছে নিজের চাহিদার দাম আপনার আগে ওই মানুষটাকেই বেহায়ার মত চাইতে ইচ্ছে করবে, ওই মানুষটাকে আবারও বলতে ইচ্ছে করবে যে আপনি সব শুধরে নিবেন, আপনি সব ঠিক করে দিবেন...তাও যাতে সে ছেড়ে না যায় আপনাকে। আপনার মাঝরাতের চাপা কান্নায় ভেঙ্গে পড়াটা তার কাছে কিছুই না, তার চাওয়া মত আপনি চলতে পারেন নি, তার কথা মেনে চলতে পারেন নি সেটাই আপনার অপরাধ। আপনাকে একটা বারও জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করবে না সে, আপনাকে বুঝার বা বুঝিয়ে বলার বা মানিয়ে নেয়ার....কোনটার ই সময় তার নেই। আপনি কেঁদে ভাসালেও সে তার একরোখা জেদ নিয়ে বসে থাকবে। এমন ই.... প্রিয় তো....তাই একটু আলাদা ই!
পাগলের মত ছুটে যেতে ইচ্ছে করবে আপনার....আপনি পারবেন না। তার সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হবে "ভালোবাসি"....আপনি পারবেন না। তার পায়ে পড়ে নির্লজ্জের মত তাকে চাইতে ইচ্ছে হবে....সেটাও আপনি পারবেন না। আর এই না পারার কারণেই আপনার বুকের উপর থাকা ভারী পাহাড়টা আরো ভারী হতে থাকবে। আপনার দম নিতে কষ্ট হবে, আপনার কথা বলতে কষ্ট হবে, পুরো দুনিয়াটা আপনার চোখের সামনে একদম সাদা কালো হয়ে যাবে, আপনি কোনো রং খুঁজে পাবেন না। আপনার প্রিয় মানুষটার প্রিয় রঙ খুঁজতে তখন আপনি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন....সেটাও খুঁজে পাবেন না। ঐযে প্রিয় যে.....দরকার এ তাকে খুজে পাওয়া যায় না কখনোই। নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করবে......চারপাশটা খুব তেতো মনে হবে তখন....আপনার কিছুই করার থাকবে না। আপনি শুধু সহ্য করে যাবেন, চুপচাপ দেখে যাবেন।
আপনি প্রিয় বলে আগলে রাখতে চাইবেন আর সে তত বেশি দূরে চলে যাবে। তাই কোনোকিছু প্রিয় না থাকাটাই ভালো। এতে আপনি ভালো থাকতে পারবেন। আপনার কাছেই সবকিছু থাকবে। আপনাকে প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর দরকার পড়বে না, আপনার মানুষকে বিরক্ত লাগবে না, আপনার কাদতে কাদতে হাপিয়ে উঠার প্রয়োজন পড়বে না, নিজেকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছে জাগবে না। সত্যিই আপনি ভালো থাকতে পারবেন। সবকিছু থেকে নিজের দখলদারি, যত্ন, অধিকার খাটানো যত কমিয়ে দিবেন ততই কষ্ট কম পাবেন আর ভালো থাকতে পারবেন। আপনাকে এটা মেনেই নিতে হবে যে সবার কপালে তার প্রিয় জিনিস থাকে না, চাইলেও পাওয়া যায় না। হয়তো এটাতেই ভালো।
একটুখানি ভুলের জন্য সে আপনাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ভাবে না আর আপনি কিনা তার পায়ে পড়েই তাকে ফেরত চান! আমি জানি যে ভালোবাসায় কিংবা কোনো সম্পর্ক তে পাগলামি, বেহায়াপনা, জেদ, ছেলেমানুষী এইসব থাকবেই কম বেশি । তাই বলে নিজেকে একদম পথের ভিখিরি সাজিয়ে আরেকজনকে চাওয়ার মানে হয় না। আপনাকে নিজের জায়গা আর গুরুত্বটা বুঝে নিয়ে তারপর যা চাওয়ার চাইতে হবে। দু কড়ির দাম যেখানে পাবেন না, আপনাকে যেখানে বুঝবে না সেখানে কেনো হাতজোড় করতে হবে? সেখানে কেনো জোর করে বুঝানোর দরকার আপনার? যা যেভাবে চলবে চলতে দিন....যেমন আছেন তেমনটা থেকে জান। চেয়ে চেয়ে ভালোবাসা কয়দিন পাবেন? একদিন ঠিকই একবারের জন্য ছেড়ে যাবে । হয়তো আপনার বেহায়াপনা, জোরাজোরি তাকে কিছুদিন আটকাতে পারবে....পুরো সময়ের জন্য তো আর না। যার যাওয়ার তার পায়ে পড়ে থাকলেও সে যাবেই। এত চেয়ে চেয়ে শুধু নিজেকে ছোটো করতে পারবেন। এর বেশি আর কিছুই না। যা থাকবে সেটা নিয়েই অনেক অনেক ভালো থাকার চেষ্টা করে যাবেন। এখন আপনি নিজের শান্তির জন্য তাকে একরকম জোর করে রেখে দিলেন ....তারপর হঠাৎ একদিন আরো অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে সে চলে যাবে। তখন ওই কষ্ট টা সহ্যও করতে পারবেন না আপনি। ভেতরে চির ধরা, ঘুণে খেয়ে ফেলা সবকিছু তখন একদম ভেঙেচুরে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মিশে যাবে। আপনি আপনার ভেতরে আর কিছুই খুঁজে পাবেন না। এরচেয়ে ভালো কিছু সময় থাকতেই মানিয়ে নিন, নিজের জন্য অন্তত কিছু রেখে দিন। এত বেশি ভিখিরি হয়ে যাওয়ারও দরকার নেই যাতে নিজেকে ভালোবাসার মত আপনার কিছুই না থাকে!
যত যাই বুঝানো হোক না কেনো আপনার সেই প্রিয় ব্যাপারেই আগ্রহ থাকবে জানি। আপনি এতক্ষণে কাদতে শুরু করেছেন এই কান্না ভোরের আলো ফুটে ওঠা অবদি চলবে....মাঝে মাঝে কান্না ভেতরটা হালকা করতে খুব কাজে দেয়।
প্রিয় নিজ..... সবসময় ভালো থাকুন, ভেতরকার সব কষ্ট হালকা করতে খুব করে কাদুন, হাসির কোনো কথা পেলে ইচ্ছেমত হাসুন, মন খুলে বেচেঁ নিন আর যে কয়টা দিন আছেন......কিন্তু কথা একটাই....আর কোনোদিন কাউকে প্রিয় বানিয়ে নেয়ার দরকার নেই। কাউকে নিজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব, সময়, যত্ন বা ভালোবাসা দেয়ার দরকার নেই।