ঈদুল ফিতর এর গুরুত্ব ও করণীয়

in hive-129948 •  3 years ago 

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার। ঈদ শব্দটি আরবি ‘আওদুন’ মূলধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ ফিরে আসা, বারবার আসা। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ বলতে আমরা উৎসব, আনন্দ ইত্যাদি বুঝি।ফিতর অর্থ ফাটল,ভাঙন,ভাঙা ইত্যাদি।সুদীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর নির্দেশে তার প্রিয় বান্দারা এদিন রোজা ভাঙ্গে তাই এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর । রাসুর (সা.) এদিন সম্পর্কে বলেছেন,‘এ দিনটিতে তোমরা রোজা রেখ না। তোমাদের জন্য এদিনাটি আনন্দ উৎসবের, খাওয়া আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উৎসব করার, আল্লাহকে স্মরণ করা।’মুসনাদ আহমদ,ইবনে হিব্বান।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন।মদিনায় এসে দেখলে মদিনাবাসী পারসিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমা রাতে ‘মেহেরজান’ হেমন্তের পূর্ণিমা রাতে ‘নওরোজ’ নামক উৎসবে মেতে উঠত ; যা কোন সুস্থ বিবেকবান লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই তিনি মদিনাবাসী কে ডেকে বললেন, ‘আল্লাহ এ দুটি দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন তোমাদের আনন্দ উৎসব পালনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হল ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। তোমরা পবিত্রতা সঙ্গে এ দুটি ঈদ বা উৎসব পালন করবে।’ আবু দাউদ, নাসায়ি।

দ্বিতীয় হিজরির পহেলা শাওয়ালকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন ঘোষণা করেন।আল্লাহ তার প্রিয় নবীর ইচ্ছা অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য ঈদের আনন্দ বরাদ্দ করেন। তারপর থেকে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব। রমজানের রোজাও একই বছর চালু হয়। ওই বছর রোজা শেষ হওয়ার ১২ দিন আগে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আর রোজা শেষে পহেলা শাওয়াল অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ঈদুল ফিতরের উৎসব।আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে দিতে মদিনার মুসলমানরা খোলা ময়দানে গিয়ে হাজির হয়।

রাসুল (সা.) উপস্থিত সমস্ত মুসলমানকে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা পরে ঈদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ঈদ কেবল আনন্দ বা পানাহারের উৎসব নয়,ঈদের উৎসব পালনের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব,তাকওয়ার বন্ধন রয়েছে তা উপলব্ধি করতে হবে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার অনল দহনে দগ্ধ হওয়ার পর মুমিন বান্দার পক্ষে মহান আল্লাহর দরবারে পরিশুদ্ধভাবে উপস্থিত হওয়ার দিন ঈদুল ফিতর।

ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন (ঈদ উল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।’বুখারী শরীফ।ঈদের নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।’ ইমাম মালিক।ঈদের নামাজের জন্য মাঠে যাওয়ার আগে কিছু আহার করার কথা হাদিসে আছে। বিশেষ করে হাদিসে খেজুর বা মিস্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার কথা উল্লেখ আছে।হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না।’ বুখারী শরীফ। ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত।ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতি ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়া মুস্তাহাব।’ ঈদের আরেকটি করণীয় এই দিনটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। জাবির (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামের একটি সুন্দর জোব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুম্মার দিনে পরিধান করতেন।’ বায়হাকী।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় ঈদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শরীয়াতে সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করা হয়েছে; একদিকে ক্রটিযুক্ত রোজাকে পবিত্র করে, অন্যদিকে এর দ্বারা অসহায় মানুষদের প্রয়োজন কিছুটা হলেও পূরণ হয়।’

ঈদুল ফিতরের আনন্দ যাতে আমাদের বিনয়ী,নম্র করে তুলে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।ঈদের দিনের শুরু থেকেই গরিব-দুঃখীসহ পরের সুখে সুখী হওয়ার তাগিত অন্তরে অনুভব করতে হবে।ছোটদের প্রতি স্নেহ মমতা ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তিতে আমাদের হৃদয় মন ভরে যাবে আল্লাহ এমনটি দেখতে চান। স্রষ্টার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সৃষ্টিকে ভালোবেসে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারি।নিছক একদিনের হইহুল্লড় ও মাতামাতিতে ঈদের সার্থকতা নেই বরং প্রতিটি ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন মনমানস ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার মধ্যে রয়েছে ঈদ উৎসবের আসল সার্থকতা।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

nice

nice

Nice

আপনাকে গতকাল সতর্ক করা হয়েছিল। আপনার কোন রিপ্লাই পাইনি। আপনি নিজে সংশোধন ও হননি। আপনাকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গতকাল ডিসকোর্ডে আপনাকে মেনশন দেয়া হয়েছিল। তবুও আপনি কোন রিপ্লাই করেন নি। আপনি যখন ডিসকোর্ডে আপিল করবেন তখনই আপনার একাউন্ট unban করে দেয়া হবে।

dsad.PNG