অর্থনৈতিক দুর্নীতির ভয়ংকর এক রুপ মজুতদারী

in hive-129948 •  3 years ago 

সম্প্রতিকালে ব্যবসা-বাণিজ্যে আড়াঁলে এক ধরণের অসাধু কালোবাজারী অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ব্যবসার নামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ।তাদের রয়েছে এসব অনৈতিক কাজের জন্য বহুমুখী ফাঁদ ও বিশাল সিন্ডিকেট।মজুতদারী সিন্ডিকেট হলো গরীব অসহায়দের তিলে তিলে পিষে পুঁজিপতিদের সম্পদ কুক্ষিগত করার অপকৌশল। বর্তমানে অর্থনৈতিক দুর্নীতির ভয়ংকর এক রুপ মজুতদারী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পায়। ক্রেতাদের মধ্যে হাহাকার বিরাজ করে।সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায়। জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ ও হতাশা। এর অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্হা ধংসের বীজ বহন করে।ব্যবসা ও শিল্পের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। সাধারণ মানুষের কর্মক্ষেত্র ও জীবন-জীবিকার দ্বারগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ইসলাম এ ধরনের অর্থনৈতিক সব অপকর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অবৈধ করেছে মজুতদারী সিন্ডিকেটের আড়াঁলে থাকা সব ধরনের প্রতারণা ও লোভ লালসা। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কায়) অন্যায় ভাবে কোন ধর্মদ্রোহি কাজ (মজুতদারী) করতে চাইবে আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।’ (সূরা হজ্জ আয়াত ২৫) এ আয়াতে ধর্মদ্রোহী কাজ বলে এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী মজুতদারী ব্যবসা বোঝানো হয়েছে।(তাফসির ইবনে কাসির) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একাধিক হাদিসে মজুতদারী ব্যবসা থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাপিষ্ট ছাড়া কেউ মজুতদারী করতে পারে না।’ (মুসলিম) অন্য হাদীসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের সমাজে মজুতদারী সিন্ডিকেটে জড়িত হবে আল্লাহ তার ওপর মহামারী ও দারিদ্র চাপিয়ে দেন।’(ইবনে মাযাহ আহমদ) অন্য আরেক হাদীসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।’( আহমদ) অর্থাৎ কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে মজুতদারী সিন্ডিকেট সম্পূণ অবৈধ এবং জঘন্য অপরাধ। হানাফী মাযহাবে তা মাকরূহে তাহরীমী বা হারাম। অন্যসব মাযহাবে ও মজুতদারী ব্যবসা একটি হারাম কাজ হিসেবে গন্য হয়।সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা খুবই ন্যক্কারজনক প্রতারণা ও মানবিকতার পরিচায়ক। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসলিম) খলিফা ওমর (রা.) অত্যন্ত কঠোর হাতে মজুতদারী প্রবণতাকে দমন করতেন। ইসলামী শরীয়তের আলোকে নিজের উৎপাদিত পণ্য তার ইচ্ছামত সময় বিক্রি করার অধিকার রাখে। নিজেদের ব্যবহারের প্রয়োজনে এক বছরের খাদ্যসামগ্রী মজুদ করার অনুমতি আছে। মজুদের কারনে বাজার মূল্য যদি কোনো প্রভাব না পরে অথবা এই কারণে মানুষের যাতে কোন ক্ষতি না হয় বা এসব জিনিসের প্রতি যদি মানুষের চাহিদা না থাকে, এ অবস্থায় মজুর করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই। এছাড়া ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বা অসুবিধার কারনে অনুর্ধ ৪০ দিন পর্যন্ত ব্যবসায়িক পণ্য গুদামজাত থাকতে পারে। অনুরূপভাবে দেশের প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা খাদ্যপণ্য মজুদ করতে পারবেন। তবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফা অর্জনের লালসায় মজুদদারী কোন অবস্থাতেই বৈধ হবে না'। বরং তা মহাপাপ ও মারাত্মক অপরাধমূলক অপকর্ম হিসেবে গণ্য হবে।চলমান বিশ্ব বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মজুতদারী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ খুবই প্রয়োজন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়তে অনেক ভালো লাগে

NICE

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই সুন্দর একটি লেখা। কিন্তু ভাই, আমাদের যে, ”সর্ষের মধ্যেই ভুত”, তাই ভুত তাড়ানোর ওঝাদেরকে বিশ্বাস করতে পারিনা যে।

সুন্দর পোষ্ট