কারফিউ চলাকালীন ব্যস্ততম এবং কঠিনতম একটি দিন -।

in hive-129948 •  2 months ago  (edited)
আসসালামুয়ালাইকুম / আদাব

হ্যালো ,আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্যগণ সকলে কেমন আছেন।আশা করি সকলে ভালো এবং নিরাপদে আছেন।আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে নিরাপদে এবং ভালোই আছি।আজ আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশে কারফিউ চলাকালীন আমার সবচাইতে ব্যস্ততম এবং সবচাইতে কঠিনতম দিনটির কথা শেয়ার করবো।

বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে পরিপেক্ষিতে সরকার এক সময় সারাদেশে কারফিউয়ের ডাক দেয়।যার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে সকল ধরনের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষের কারফির এর জন্য কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। আমারও তার ঊর্ধ্বে ছিলাম না। সবকিছুর মাঝে সব চাইতে চিন্তার বিষয় ছিল আমাদের বাসার বিদুৎ সরবরাহ নিয়ে।আমার বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার। যাতে ব্যবহারের আগে থেকেই অগ্রিম টাকা ভরে বিদুৎ ব্যবহার করতে হয়। যেহেতু আমরা মিটারে টাকা মাসের শুরুতে ভরি এবং কারফিউ এর সময়টা ছিল মাসের কিছুটা শেষের দিকে ছিল তাই আমাদের মিটারে কত টাকা ছিল তা আমাদের সঠিক জানা ছিল না।যখন কারফিউ এর প্রথম দিন মিটারে টাকা চেক করি তখন দেখা যায় মাত্র ১৫০ টাকা আছে , যা দিয়ে আমাদের ২ দিন পার হয়েছিল।তারপর ১০০ টাকা ইমারজেন্সি ব্যালেন্স নিতে হয়।সেই ১০০ টাকা দিয়ে আর কত দিন যাবে।এইদিকে ৭ দিনের আগে ইন্টারনেট আসার কোনো নিউজ পাচ্ছিলাম না। ইন্টারনেট না থাকার কারণে আমাদের মত অনেকেই এই পরিস্থিতিতে ছিল।

কিন্তু একদিন পর খবরে দেখায় যে নিকটস্থ ডেসকোর অফিসে গিয়ে কার্ডে টাকা লোড করা যাবে। কিন্তু সেইদিন সকাল নয়টার দিকে আমাদের বাসার বিদ্যুতের মিটারের টাকা শেষ হয়ে যায়। আমরা যেই সময় খবরটা জানতে পারি তখন সকাল ১১ টা সময় ছিল। দ্রুত আমি আর আমার চাচাতো ভাই মিলে মিরপুর ১৩ তে ডেস্কোর অফিসে চলে যাই। কিন্তু যেয়ে দেখি এতো মানুষের সমুদ্র।কম করে হলেও দুই থেকে তিন হাজার মানুষ ছিল।এক এক এলাকার এক এক লাইন ছিল।আমি আমাদের কাফরুলের লাইনে দাড়াই। কিছুক্ষণ পর আমাদের টোকেন দেয়া হয়। আমাদের টোকেন নাম্বার ছিল ৯৪৮ তম। আমাদের পিছনে আরও মনে হয় ১০০/১৫০ জন মানুষ ছিল। এইটা শুধু ছিল একটা লাইনের মানুষের পরিমাণ। অফিসার চারদিকে এই রকম ছোট বড় ৪/৫ টা লাইন ছিল। সকাল বারো ১১ টার পরপর সেখানে গিয়েছিলাম । সেদিন আবহাওয়া তেমন গরম না থাকলেও এত মানুষের কারণে সেখানে প্রচণ্ড গরম লাগছিল।আমি নিজে মনে হয় ৫/৭ গ্লাস লেবুর সরবত খেয়েছি। অনেক বয়স্ক আংকেল আণ্টি তো গরমে প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। তাদেরকে মাথায় পানি দিয়ে ডাব খাওয়ানো হয়।কি ই বা করবে এই বয়সে না এসে। কারেন্ট ছাড়া বাসায় এই গরমে কতক্ষন থাকা যায়। তাছাড়া ফ্রিজের খরার তো সব নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে তাদের তো সবচাইতে বেশি চিন্তা ছিল তখন। অনেকই কার্ডে সেইদিন টাকা ভরতে পারে নাই। তারা আবার পরদিন যেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা ভরে নিয়ে আসে।

সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিকাল চারটার দিকে আমরা প্রিপেইড মিটার কার্ডে টাকা ভরতে পারি। দ্রুত বাসায় এসে মিটারে কার্ড ঢুকিয়ে মিটারে টাকা ভরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।সেই দিনের মত এত সময় কোনো কাজের জন্য কোনো লাইনে আমার এই জীবনে এত সময় যাবৎ দাঁড়িয়ে থাকি নাই। আমাদের মত ঢাকার প্রায় সব জায়গায়ই এমন অবস্থা ছিল। এত মানুষের ভোগান্তি দেখে বেশ খারাপ লাগছিল। আমরা না হয়ত দুই ভাই অল্প বয়স বেশি কষ্ট হয়নি।তবে আমাদের বাবা - মা, দাদার বয়সী লোকগুলোর কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগছিল। পরিস্থিতির শিকার হয়েই তারা এখানে আসতে বাধ্য হয়েছে।আমাদের মত আপনারা অনেকই হয়ত এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন।সেই দিনটির কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। কিছু ছবি শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু বার বার ছবি আপলোড ফেইলড দেখাচ্ছে। হয়ত নেটওয়ার্কের অথবা সার্ভারের সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে।

যাই হোক সকলে নিরাপদে থাকবেন।সবাই নিজেকে সুস্থ্য রাখার চেষ্টা করবেন।সবাই ভালো থাকবেন।সবাই বেশি বেশি গাছ লাগানোর চেষ্টা করবেন। সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।

44bfe4b3-34ef-4ca1-ac52-ea76af851866-1_all_3329.jpg

আমি আরাফাত হাসান সৌনক। বর্তমানে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টেরএকজন ছাত্র । আমি ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। আমি ভ্রমণ করতে অনেক পছন্দ করি।আমি আমার পরিবারকে খুব ভালোবাসি।




New_Benner_ABB.png


- - - ধন্যবাদ - - -

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.