সময়ের প্রকৃত যোদ্ধা
সময় গুলো বেশ বালোই কাটতেছিলো। বাসার সকলেই অনেক আনন্দে ছিল। বিশেষ করে এই সময়টাতে আমার মা-বাবা বেশি আনন্দ থাকতো কারণ তার সব ছেলেমেয়ে বাহিরে থাকে কেউ চাকরি করে, কেউ পড়াশোনা করে। ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তারা অধীর আগ্রহে থাকে তার চেয়ে বেশি আগ্রহে থাকে কবে আমার ছেলে-মেয়ে বাসায় আসবে।আমিও বুঝতে পারতাম না যে আমরা তো বাহিরেই থাকি বাবা-মা হয়তো বাসায় অনেক ভাল থাকে কিন্তু আজকের দৃশ্যটি দেখে আমার নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।আমিও রাস্তা পর্যন্ত গিয়েছিলাম গিয়ে দেখি বড় একটি ট্রাকে আমার ভাই-বোন উঠতেছে এবং গাড়ি রওনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মা কান্না করে উঠেছেন। আমি অনেক বার বললাম কান্না করছো কেন?! কিন্তু তার কান্না থামাতে পারলাম না। মা তখন আমাকে বলে উঠল আমার ছেলেমেয়ে যাচ্ছে দেশের একটি কোনায়! আমি মাকে অনেক বার বললাম ঢাকা তো খুব বেশি দূরে নয়। দু' তিন ঘণ্টায় বাসায় এসা যায়। আবার চলে আসবে তুমি চিন্তা করো না তাদের জন্য দোয়া করো।পৃথিবীতে একটি মাত্র কান্না সেটা হচ্ছে মা-বাবার কান্না। যার মধ্যে কোন অভিনয় থাকেনা, যার ভালোবাসার মাঝে কোন অভিনয় থাকে না, যার ভালোবাসা মাঝে কোন লোভ থাকে না। তারাই হচ্ছে মা-বাবা!
আমি ট্রাকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শুধু আমার ভাই বোন নয় আমাদের আশেপাশে গ্রামের অনেক লোকজন আছে ট্রাকের মধ্যে। আমি ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলাম ট্রাক রওনা দিলো, তারা অনেক দূর থেকে তাকিয়ে রইলো গ্রামের সুদুরপ্রসারী রাস্তার দিকে। তারপর তারা চোখ বন্ধ করে নিলো।আমি যাদের কথা বলছি তারা হচ্ছে গার্মেন্টস যোদ্ধা। তারা পোশাক শিল্প কারখানায় কাজ করে।গতকাল রাতে হঠাৎ ফোন এসেছে তাদের যেতে হবে, যদিও লকডাউন ৫ তারিখ পর্যন্ত কিন্তু তাদের তো যেতেই হবে।যদিও বাংলাদেশের এখন সবকিছুই অনিয়মের মধ্যে চলমান আছেন কিন্তু একশ্রেণীর যোদ্ধাদের নিয়ম কখন অনিয়ম হয়না। আমি তাদের জন্য দোয়া করি তারা এখন আমাদের বাংলাদেশটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেছি।