জীবনটাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি || { একটি ভ্রমনকাহিনী ভিত্তিক লেখা } ...

in hive-129948 •  6 months ago 

তারিখ : ২১.০৫.২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার ।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,
আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের পোস্ট লেখা শুরু করছি।

দিন যায়, মাস যায়, একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে এসে হঠাৎ মানুষ তার ধূ ধূ মরুভূমির মতো যাযাবর জীবনে একটি স্থির হওয়ার মতো উপলক্ষ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও সবার জীবনযাপন প্রণালী আলাদা আর নৈতিক শিক্ষা, নিজের ও চারপাশের মানুষের সম্পর্ক নির্ধারণে ভূমিকা যে যার মতো করে সংজ্ঞায়িত।

কিন্তু সত্যটা হচ্ছে এই, সবার ক্ষেত্রে নিজেকে উপস্থাপনের ঢঙ বিশেষায়িত, সাধারণভাবে তার প্রকাশভঙ্গী নয়।

অনেকদিন ধরে আমি কিছু সময় বরাদ্দ রেখেছিলাম নিজের চেনা গলি, রাস্তাঘাট আর ঘরবাড়ির নিজস্ব চৌহদ্দি পেরিয়ে নতুন আরেকটি পরিমন্ডলে যাওয়া যেখানটায় চোখের আড়াল হয়ে রয়েছে। দৃষ্টিপাতের বাকি অংশে হয়তো লুকিয়ে আছে এমন কিছু সত্য যা নতুন কোন শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার সন্ধান দিতে পারে।

যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন বিকাল বেলা যখন বেশ অবসর সময় পার করছিলাম, তখন কিছু টাকাপয়সা আর সানগ্লাসটা বুকপকেটে রেখে বেরিয়ে পড়লাম কিছু মাইল দূরের জায়গাটিতে যাওয়ার যেখানে শ্রমিকরা বাস করছে । সাথে অন্যান্য শ্রেণির মানুষ যেমন বেদে,যাযাবর, ছিন্নমূল কিছু লোকজন বসবাস করছে।

pexels-photo-1477194.jpeg
Src

তারা নিজেদের মতো করে ঘরবাড়ি বানিয়ে নিয়েছে, সাথে করে বসবাস করার রীতিও আলাদা, একেবারে সহজ সাধারণ ভাবে বেড়ে ওঠা জীবন যা অনেক না বলা কথা বলে চলে।

বাসে করে চলে এলাম শহরের মূল রাস্তাটা ছেড়ে যেখানে প্রচুর মানুষ ভীড় করেছে তাদের নিজেদের জীবিকার প্রয়োজনে। সেই সাতসকালে খেয়ে না খেয়ে বের হওয়া মানুষগুলো তাদের যে দিকটায় অভাব অনুভব হয়, কারো আর্থিক চাকা সচল রাখার প্রচেষ্টা আবার কেউ নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যকে বাড়িয়ে নিয়ে আরেকটু ভালো অবস্থানে যাওয়ার খেলায় অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে।

দুপুরের পরের সেই আবহাওয়াটা আমার ভীষণ ভালো লেগে গেল। সাধারণভাবেই গরমের দিন, রোদের তেজ থাকার কথা, কিন্তু বাতাস থেমে থেমে বওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রোদের ছোটখাট তাপ গায়ে লাগে নি। ব্যস, যখনই বিকেল পড়তে আরম্ভ করেছে আর আমি পৌঁছে গিয়েছি রাস্তার ধারের শেষমাথায় তখন বড় সড়কটি দুটি ছোট বাঁক নিল, আর আমার ভালো লাগতে শুরু করলো।

বাস থেকে নেমে রিকশা নিলাম।

পথঘাট আগের চেনা নেই তাই তেমন বেগ পেতে হলো না, নদীর ধারের যে জায়গায় সারি সারি গাছ নেমে গিয়েছে, তাতে রিকশাওয়ালাকে থামিয়ে দিয়ে বিদায় করলাম। এবার নদীর জলের বয়ে যাওয়ার শব্দ মনে দোলা দিয়ে চলেছে আর তখনই টের পেলাম কয়েকটি ছেলে খেলছে তীরের থেকে একটু উঁচু জায়গা জুড়ে ঢিবির মতো স্থানে।

pexels-photo-3023534.jpeg
Src

ছেলেদের দলের ভেতর থেকে কয়েকজনকে ডাক দিলাম এদিকে আসার জন্য। একটি ছেলে কাছে আসলে তাকে বললাম, দূরের যে জনপদটা দেখা যাচ্ছে ওখানে কারা থাকে ? সে প্রত্যুত্তরে বললো - মশাই, ওটা জেলেপাড়ার গ্রাম। সাথে বেদেরাও থাকে নিজেদের মতো করে। কখনো নৌকায়, কখনো মাঝিমল্লাদের মতো ভেসে পড়ে, দিনের পর দিন ধরে - কোন খোঁজ থাকে না।

আমি তাকে কিছু চকলেট কেনার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম, তাদের জীবনযাত্রা দেখার জন্য। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নদীর ধারে পৌঁছে গেলাম যেখানে তারা ছাউনি টাঙিয়ে বসে আছে নীরবে, কেউ জাল বুনছে, মাছের দামদস্তুরে ব্যস্ত কেউ, আবার নৌকা মেরামতে কাজে লেগেছে অনেকে। ভেতরে পাটাতনে বসে তামুক টানছে আরো কিছু মানুষ - তারা সম্ভবত মোড়ল শ্রেণির কেউ হবে।

আমি পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই তারা বললো, নৌকার মূল মহাজন তারা। তারপর কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম। কি ধরনের খাবার তারা খায়, নদীতে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা আর নানা রকম সুবিধা অসুবিধা কেমন চলছে এসব কিছু । বুঝতে চেষ্টা করলাম, তারা কিভাবে জলের স্পর্শে ভালোলাগা আর সজীবতা খুঁজে পায়।

এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার তাদের জন্য যখন তারা কোন ডাঙায় ঘেরা স্থানে বেশিদিন থাকতে পারে না। কারো কাছে শুনেছি, বড়জোর ২-৩ রাত্রি কাটাবে তারপর ঘুরে বেড়াবে যেখানে দুচোখ যায়।

কখনো পানিতে জাল ফেলে মাছ ধরবে, আবার সময় সুযোগ মতো তা ধরে ছইয়ের ভেতর জমা রেখে কাছেপিঠে কোন বাজারে তা বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রওনা হবে নিরুদ্দেশের পানে।

কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে তারপর যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে শুরু করলো, তখন খুব চায়ের তেষ্টা পেল। নদীর তটরেখার সীমানা পেরিয়ে একটা গঞ্জের মতো বাজারের কাছে ছুটলাম। সেখানে একটি টঙ দোকান বেড়ে উঠেছে আর তার ভেতরে বসে একটি লোক রঙবেরঙের চা বেচে চলেছে। কমলালেবুর চা অর্ডার দিলাম আর একটি ছোকরা কাঠের কারুকার্যের কাপ হাতে দিয়ে গেল।

pexels-photo-14884842.jpeg
Src

চায়ের কাপে চুমুক দিলাম আর মনে ভাবনার উদয় হলো কি করে এসব যাযাবরেরা প্রতিদিনের জীবন বেছে নেওয়ার মধ্যেই সুখ খুঁজে পেয়েছে। কত অনিশ্চিত তাদের জীবন, অথচ চড়াই উতরাইয়ে ভরা৷ নদীতে তুফান বইতে পারে আর মাছ বেশি না উঠলে হয়তো তাদের সবার কয়েকবেলা উপোস থাকা লাগবে।

এসবের তোয়াক্কা না করেই তারা নিজেদের জীবনযাপনের ঢঙের মধ্যেই সুখ খুঁজে পেয়েছে, তৃপ্তি এসেছে বয়ে যাওয়াতে আর নদীর স্নিগ্ধ আবহাওয়ায়। অথচ আমরা নাগরিক জীবনে অল্পের অপূর্ণতায় আফসোস করি, কেন সবকিছু নিজের মনের মতো হলো না। এটা নাই, ওটা এমন হলে ভালো হতো৷!

শেষমেশ অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে জীবনে একটি নিজের মতো বেড়ে ওঠার ক্ষেত্র থাকা চাই। যদি তা থাকে তাহলে অন্তত কিছু সময় সুখ পাওয়া যাবে যা নিয়ে যাবে সেই স্বপ্নীল সময়ে যা নিঃশ্বাস নিতে হৃদয় খুলে সাহায্য করবে। আর কিছু কি বেশি চাওয়ার আছে ?

ধন্যবাদ। 💐💖✒️✅

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা


Blue Abstract Watercolor Blank Template Instagram Story_20240516_152026_0000.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!