অবসর জীবনের স্ফূর্তি [ একরাশ নিরাশ অন্ধকারের মাঝে সে আলোকবিন্দু ]

in hive-129948 •  3 months ago 

তারিখ : ১৮.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার ।

সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,

আপনাদের সবাইকে আবারো আরেকবার আমার এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই। সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। সময়ের নানাবিধ প্রবাহমান স্রোতে আমাদের সবার জীবনই ভেসে চলেছে প্রতিনিয়ত যার থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন।

তবুও পথ চলতে হয়, গতিময়তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের ভিতরকার ছন্দ যা আমরা প্রায়শই বুঝতে পারি না। হয়তো কোন কারণে যখন ব্যস্ততা কিংবা জাগতিক চিন্তা ভাবনা কোন কাজেকর্মে খুব বেশি জড়িয়ে যায় তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার সময়ের প্রতিফলন বুঝে উঠা কঠিন হয়ে ওঠে।

free-photo-of-view-of-silhouetted-boat-and-trees-at-sunset.jpeg
Src

যাই হোক আজ এমন ধরণের অপ্রাসঙ্গিকতার মধ্য থেকে একটি প্রসঙ্গকে ধরে আজকের পোস্ট লেখা শুরু করছি।

যে বিষয়টি নিয়ে খুব ভোরবেলা ঘুম ভাঙার পর কিছুটা নিভৃতে চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম তা হলো সময়ের পরিক্রমায় কীভাবে জীবন বাঁধা হয়ে রয়েছে কিছু দৈনন্দিন কাজকর্মের ছকে। চাইলেও আমরা তার ভেতর থেকে বের হতে পারি না, হাজারো দুঃখসুখের মধ্য দিয়ে জীবন যা দাবি করে আর জীবন যা চায় তার মধ্যে বিস্তর তফাত রয়ে যায়। আছে মনোমালিন্য, আছে দুঃখবেদনা সুখের আড়ালে যতদিন জীবনপ্রদীপ বয়ে চলে।

যদিও আমি নিজেকে খুব একটা ব্যস্ত মানুষ ভাবি না, আশেপাশের জ্ঞানীগুনী মানুষদের দেখে শিখি যারা কর্মব্যস্ততাকে জীবনের একটি অন্যতম নিয়তি ধর্ম হিসেবে বেঁধে নিয়েছে। যে যেটায় সুখ লাভ করে সে বিষয়ে সময়শ্রম ব্যয় করে বেড়ে উঠবে তা-ই তো হবার কথা। এর বেশি কিছু চোখের দেখায় খুব বেশি দেখতে পারি নি, হয়তো চোখের আড়ালে আর মনের অন্তরালে তার সুনিবিড় উপস্থিতি বিরাজমান ছিল, তার সবটুকুই গৌণ হিসেবে রয়ে গিয়েছে ।

জীবনের পথ থেকে পথে নানা মানুষজন আসবে আবার সময়ের পর চলে যাবে এটাই জগতের নিয়ম। কখনো দেখেছি কেউ যখন একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কোন এক বাঁকে এসে পড়েছে, কিছু ক্ষনিকের প্রয়োজন তাকে বেঁধে ধরে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই কবে কোন এক নিরালা বসন্তের দিন চলছিল। আমি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম নিজের জেলা, সুপরিচিত জীবনধারা, মানুষজন আর চেনা আঙিনার থেকে কিছুটা তফাতে গিয়ে।

অনেক মানুষ রয়েছে যারা খুবই নিরীহ ও রক্ষণশীল স্বভাবের, নিজ বাড়িঘর চেনা পরিমন্ডলের বাইরে কখনো বেড়াতে বা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে গত্যন্তর করতে চায় না। এ ধরণের মানুষ যত দেখেছি ততই বুঝতে পেরেছি বাঙালি সত্তায় একটি রূপ অবশ্যই নিহিত হয়ে রয়েছে, এই যেমন যখন ঘরকুনো স্বভাবের হয়ে বসে থাকা আর সময়ে অসময়ে নিজ গৃহের প্রতি টান অনুভব করা, কম কিংবা বেশি ।

তারপর জীবন নিজেকে আরেকটু সামনে নিয়ে যেতে যখন শুরু করেছে তখন বুঝতে পেরেছি যে, নতুন কারো আগমনের অপেক্ষায় দিন গোণা শুরু হয়েছে। ভালোবাসা কিংব ভালোলাগা একদিনে গড়ে ওঠে কখনো, আবার ধীরে ধীরে তার পূর্ণতা পাওয়ার দিকে চলে যেতে শুরু করে।

free-photo-of-a-stunning-bouquet-of-roses.jpeg
Src

বাগানের পাশ দিয়ে যখন ভ্রমর নানান রঙের ফুলের মাঝ থেকে সুগন্ধি ও ঝলমলে রঙ ছড়ানো গোলাপ, টগর কিংবা সূর্যমুখীর ওপর গিয়ে বসে তখন তার মধু পানের চেয়ে যেটি বড় হয়ে ওঠে তা হলো - যেভাবে মোহমেঘের ধারা বেয়ে চলে আর অনুভব করে আপন বাঁধন ছাড়া প্রাণ এসে মিশেছে নতুন বসন্তের হাওয়ায় আর সুবাসের মধ্য দিয়ে নতুন পথ ধরে বয়ে বয়ে দুরন্ত বেগে, যার কোন আপাত স্থিরতা নেই।

আমি চোখের দেখায় বুঝতে পারলাম, হয়তো জীবনে নানাবিধ অনিশ্চয়তা দানা বাঁধতে থাকে, কারো সান্নিধ্যে আসতে পারার মাঝে একটি প্রাপ্তিযোগের খেলা তো চলমান রয়েছে। তার থেকেই বা নিস্তার কোথায়। যে নব অতিথি হয়ে আসলো তাকে স্বাগতম না জানিয়েই বা দূরে কোথায় যাওয়ার থাকে ?

সে যখন আসলো, তখনো আমি বেশিদূর ভাবতে শিখি নি। মুগ্ধতা শুধু সৌন্দর্যের উপস্থিতিতেই বেড়ে উঠতে চাইতো আর আমি যে স্বভাবতই ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে বাঁচতে চায় তার মধ্যে নিখুঁত একটি মেলবন্ধন পাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছি। দীর্ঘদিনের থেমে থাকা জীবন আর সৌন্দর্য খুঁজে চলা মনকে দেখেছি যা খুঁজে চলে কোন এক আগন্তুককে যে এখনো আসে নি জীবনে।

ঠিকানার পাড় ধরে দেখেছি কোনদিন আগন্তুকরা ঝড়ের মতো করে আসে, তার কোন পূর্বাভাস নেই আর তার সাথে যদি ভালোবাসা ধরে রাখা সময়ের মতো করে বেড়ে চলতে ভেসে চলে তাহলে তার রূপ চেনা কঠিন। সে যেমনি আসলো স্বল্পের সময়ের তরে, তারপর হারিয়ে গেল বিনা কারণে নীলাকাশকে আরেকটু দাহন করে।

free-photo-of-dramatic-orange-sunset-sky.jpeg
Src

কয়েকদিন ধরে মনের ভেতরে ধুয়া বয়েই চললো, একটি গান পরিবেশিত হয় আর তার রেশ যেন ফুরোতে চায় না। সামগ্রিক মনেপ্রাণে বাধা পড়ে রয় সেই সুর, তার লহমা আর হৃদয়ের মধ্যে থেকে বাজনা যা বাজতেই থাকে নিরবধি কিছু সময়।

শেষমেশ বুঝলাম তার অল্পের চোখের দেখায় মনের যোগবিয়োগে যে বাঁধা পড়তে গিয়েছি তার শেষ হয়েও হয়ে ওঠে নি। সে আমাকে বোধহয় মনে করে রাখে নি, আর আমিও জানি না তার ঠিকানা। সেই যে কিছু মানুষ আসে আবার হারিয়ে যায় ধোঁয়ার মতো, যা ক্রমশ ঘন থেকে ক্ষীণ হয়ে আকাশে মিলিয়ে যেতে থাকে।

শেষমেশ বুঝেছি, এই ভালোবাসা আমাকে জড়াতে চেয়েছিল বাঁধনে আর আমি বুঝতে পারি নি তার খেলা। তাই পথভোলা হয়ে ফিরে এসেছি চেনা প্রান্তরে, মাঝে অনেক দূরত্ব পাড়ি দেয়া হয়ে গিয়েছে আর সে আমার মনে নেই। দূরত্ব খেয়ার তরীর মতো ধীরে ধীরে চোখের বাইরে হাওয়া হয়ে গেল।

আমার পথ তার নতুন মোড়ে নিয়ে যেতে লাগলো...

অসমাপ্তভাবে সমাপ্ত।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা


Blue Abstract Watercolor Blank Template Instagram Story_20240516_152026_0000.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে গদ্য। ভীষণ ভালো লাগল। খুব সাবলীল চলনে লিখেছেন। কবি লেখকদের বোধহয় এমনই হয়, কলম ধরলে মনের কোন কোণের লেখা বেরিয়ে আসে আমরা তা বুঝতেও পারি না। জীবন পথের অনেক বাঁক থাকে। সেখানে অনেকেই আসে অনেকেই যায়। আমাদের তবু চলতে হয়। কারণ আমরা চলতেই এসেছি।

খুব ভালো লাগল।

ধন্যবাদ আপনাকে, একটি প্রজ্ঞাময় মতামত জানানোর জন্য। যার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন একটি জীবন সত্য যেটা প্রত্যেক ব্যাক্তিবিশেষকে কেন্দ্র করেই বেড়ে ওঠে।

আমি আপনার এ কথার সাথে পুরোপুরি একমত যে, কবিসাহিত্যিকরা যখন কল্পবাস্তবের আধো আঁধার আলোতে লিখে চলেন, তখন নানা পর্ব, মাত্রা, ঘটনার প্রলেপ এগিয়ে চলে নিজ গতিতে।
এক্ষেত্রে হয়তো আমি সে স্বরুপের সন্ধান পেয়েছি। তার জন্য অবশ্যই অনুশীলন আর কিছুটা মেধার সমন্বয় ঘটাতে হয়েছি।

আপনিও অবশ্য নিজস্ব সৃজনশীলতায় ও সৃষ্টিশীল উপস্থাপনায় অসামান্য, তাই কিছু বাহবা আপনারও প্রাপ্য বলে মনে করি।

সর্বোপরি ধন্যবাদ মতামত জানানোর জন্য। আপনার সময় ভালো কাটুক এ প্রত্যাশা করি৷ 💐