তারিখ : ১০ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭ ই জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার।
হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।
ধন্যবাদ৷
সময়ের স্রোত মানুষকে নতুন একটি গন্তব্যে নিয়ে যায় যা আমরা সবসময় টের পাই না। দেখতে দেখতে আমার বাংলা ব্লগে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করার সময় চলে এলো, তিনটি বছর ক্যালেন্ডারের হিসেবে দিন পক্ষ মাসের হিসেবে কম সময় নয়। অনেক চড়াই উতরাই, সুসময় দুঃসময়ের মাঝেও অব্যাহত পথচলা প্রমাণ করে লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের আস্থায় অবিচল এই ব্লগ তার অবস্থান বেশ অটলভাবেই ধরে রাখবে।
এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই, নেই কোন দ্বিধা । নতুন আরেকটি বছরে মুক্তলেখার এই প্লাটফর্ম এগিয়ে যাক তার নিজস্ব কলেবর বাড়িয়ে, অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসা রইলো সবার প্রতি।
আজ আমি আপনাদের সাথে উপস্থাপন করতে চাই একটি ছোটগল্প যা গ্রামীণ বাংলার একটি পুরাতন স্বর্ণালি অতীতকে প্রতিফলিত করবে কম বেশি। ছোট গল্পই সেই শাখা যাতে সাহিত্যের কিঞ্চিৎ যতটুকু চর্চা অব্যাহত রাখি, তার মধ্যে থেকে বড় পরিসরের স্থান ধরে রেখেছে।
আধুনিকতার সত্তায় যদি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটানো হয়ে থাকে, তাহলে সাধ জাগে সেই স্মৃতিতে ভরা সময়টায় ফিরে যেতে যেখানে সময়কে ধরে বেঁধে থমকে রাখতে মন চায়।
আশা রাখি ভবিষ্যতে আরো এ ধরনের গল্প আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করবো, অনেক মনপ্রাণে সাড়া জাগানিয়া ভাবসর্বস্ব কিংবা স্মৃতিময় লেখাকে উপজীব্য করে অবশ্যই। নতুন সময়ের আবাহনকে ঘিরে রেখে তার সৌধ নির্মাণ হবে এই আশা করি ভূমিকাপর্ব শেষ করে মূল লেখনীতে চলে যাই।
একদা এক সময়ে বঙ্গের কোন একটি নীরব গ্রামে বাস করতো দুই ভাই, রমেশ ও পরমেশ। তারা যে গ্রামে বাস করতো সেখানটায় সারি সারি নানা বৃত্তির মানুষ বসবাস করতো ; কেউ কৃষক, কেউ জেলে, কেউ তাঁতী আর অধিকাংশই বণিক সম্প্রদায়ের। বর্তমানকালের যে শ্রেণিভিত্তিক আবাসন কিংবা কলোনি করে বসবাসের নজির পাড়াভিত্তিক বাংলায় দেখতে পাওয়া যায়, তার নজির তাদের সময়েও বর্তমান ছিল।
দুই ভাই স্থানীয় কালেজের পাঠ চুকিয়েছে সে চার পাঁচ বছর হবে, এখন তারা বেশ অবসরের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। কয়েক বছর আগে তাদের একটি বেশ কারবার ছিল গ্রামের কয়েক মাইল পরে যে গঞ্জ আছে সেখানে। তাঁতীরা কাপড় বুনে তা পাঠাতো খদ্দেররা যে দোকানগুলো থেকে কাপড় কিনছে সেখানটায়।
রমেশ ও পরমেশ কিছু পয়সা বিনিয়োগ করে সেখান থেকে চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায় নেমে পড়ে - বেশ টাকাকড়ি লাভও হয় যা দিয়ে তারা বেশ ভালোই চলছিল।
কিন্তু কিছুদিন পর তাদের এক দূরসম্পর্কের মামা বহু ক্রোশ দূর থেকে এসে তাদের সাথে বহুবছর পর দেখা করতে এলো। মামাকে পেয়ে তারা যার পর নাই খুশি, সে কি খাতির যত্ন আত্তি আর কুশল বিনিময় করার ধুম। মনে হয় যেন তারা হাতে পেয়ে গেল আকাশের কোন এক তারা যেটা খসে পড়েছে কোন এক উল্কার সহযোগে।
রমেশ তার ভাইকে বলতে লাগলো যে, দেখ রমেশ ! আমাদের মামা কত ধনী লোক বটে। তার একটি মস্ত ঘোড়ার গাড়ি যা দিয়ে তিনি যাতায়াত করেন, আর কত দামী আলখাল্লা পাঞ্জাবি পরিধান করে আছেন। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। কত মূল্যের তামাক টানছেন আর হাতের আঙটি সবই তো বিদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো। চল, মামাকে একটু ভালো করে বাজিয়ে নেই।
মামার সাথে কথাবার্তা বলে তারা বেশ প্রীত হলো। মামাও তার পরম ভাগীনয়দেরকে পেয়ে খুশি, কত বছর পর দুটোর চাঁদমুখ দেখতে পেয়েছে। তারপর, কয়েক ঘন্টা কথাবার্তা বলে বুঝতে পারলেন, বেশ তবে এবার আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক। যেই বুদ্ধি সেই কথা পাড়লো, বলে উঠলো, " এবার বেশ কয়েকদিন থাকবো তোদের সঙ্গে ”।
রমেশ ও পরমেশ আপত্তি করলো না, বললো তা ঠিকই, চলবে আমাদের। তুমি যদি কয়েকটা দিন আমাদের সাথে কাটাও তাহলে আমরা বেশ আনন্দে দিন কাটাতে পারবো। অনেক কথাবার্তা হবে বেশ আর পুরনো দিনের কথা, গ্রামের বেশ অনেকটা স্থান ঘুরে দেখতে পারা যাবে বেশ করে। "
তারপর তারা বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ জুড়ে দিল। শেষমেষ মামা বিদায় নেয়ার আগে বললো, একবার যদি তোরা আমার সাথে শহরে চলিস, তাহলে তোদের আমার কিছু ব্যবসার উপায় শিখিয়ে দেব। দেখ আমার তো ছেলে সন্তান নেই, তোরা যদি এ ধারে আসিস তাহলে তোদের ভালো লাগবে, আমারও। গ্রামে থেকে তোরা তো জীবন পার করে দিতে পারিসনে ।
তারপর মামাকে বিদায় করে তারা এ বিষয়টি নিয়ে বেশ অনেকদিন ভাবলো। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা ঘুরে দেখবে বিষয়টা আর যদি সুযোগ জোটে তাহলে বেশ ভালোই হবে তাদের। যেই ভাবনা সেই কাজ, সপ্তাহ শেষে এসে হাজির হলো মামার বাংলো বাড়িতে। পথে তাদের কোন সমস্যা হয়নি।
মামার হালহকিকত দেখে তারা বেশ অবাকই হলো। বিশাল শান বাঁধানো প্রাচীরের বাংলো বাড়ি, তাতে বেশ অনেক মানুষজন আছে, সব ধরণের উপকরণই মজুদ আছে। একবার তারা দেখতে পেল, তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনাররা আসছে আবার হিসেব বুঝে নিয়ে বিদায় নিচ্ছে। মামা বেশ মোটা অঙ্কের লাভ বুঝে নিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে।
তারা মামাকে কয়েকদিন পর ব্যবসায়িক অংশীদার করে নিতে বললো, সাথে মামার দেয়া কথা যা তিনি বলেছিলেন বেশ কয়েক মাস আগে। মামা তাদের কথাই প্রীত হয়ে তার একটি প্রজেক্ট দেখতে বললেন। তারা বললো, ঠিক আছে কাল থেকে আমরা নেমে পড়বো। যেই কথা সেই কাজ, পরেরদিন রমেশ -পরমেশ হাজির হলো সেই স্থানে।
যেহেতু তাদের খুব ভালো একটি অভিজ্ঞতা ছিল, খুব সহজেই বুঝে নিল। কয়েক বছরের মধ্যে মামার ব্যবসায় উন্নতিও হলো ভালো। শেষমেশ তারা লাভের পর একটি বড় লোকসান দেখতে পেল। যখন দুই ভাই ভাবলো লাভের ঘরে বড় একটি সংখ্যা বসাবে, তখনই মূলধন সমেত তারা পিছলে পড়ে আগের জায়গায় আসলো।
এরপর রমেশ ভাবলো লোভের ফল ভালো হয় না। তাদের গ্রামের ব্যবসাটাই ভালো৷ সেখানে সুখ আছে, নিজের মতো করে ঝক্কিঝামেলা কাটিয়ে বেড়ে ওঠার শান্তি আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় সরল সহজ ঝুঁকিমুক্ত মুনাফা লাভ করে নিজের মতো করে বসবাস করার সুযোগ যার কোন তুলনাই হয় না।
তারপর তারা বাড়ির পথ ধরলো। ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তারা বুঝতে পারলো, অনুভব করলো - গ্রামীণ শান্তি, মাটির ঘ্রাণ, শ্যামল ছায়ার সুবাস ও ফুলের সৌরভ যাতে বুকভরে নিঃশ্বাস নিল। দুই ভাই এখন আবার নতুন করে শুরু করার পথে...