আসসালামু আলাইকুম / শুভ সম্ভাষণ।
সবাই কেমন আছেন ?
আশা করি ভালো আর সৃষ্টিকর্তার পরম করুণায় শান্তিতে আর সুখে আছেন। আজ ১৬ ই মে, ২০২৪ বৃহস্পতিবার ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতার হিসেব অনুযায়ী। বছরের মাঝামাঝি এই সময়ে এসে যারাই আমাদের সাথে আছেন, সবাইকে আশু আগামীর জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।
বেশ কয়েকদিনের টানস ব্যস্ততার পর লিখতে বসলাম প্রিয় কমিউনিটিতে। কি আর করবো, অভ্যাস যে হয়ে গিয়েছে প্রতিদিন একবার না হলেও কারো পোস্ট পড়া, কিছু অনুধাবন করা আর বাকি সবার ভাবনা চিন্তা আর সৃষ্টিশীল কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।
এতে করে যেমন বিভিন্ন ঘরানার মানুষের সাথে মিশতে, তাদের সম্পর্কে জানতে সুযোগ পেয়েছি - তেমনি আবেগীয় স্রোতে ভেসেছি বুঝতে পেরে জীবনের হালচাল !
আজকাল ডায়েরি লেখার ফাঁকে ফাঁকে সাহিত্যপাতার কিছু দিক নিয়ে চিন্তা করে চলেছি। এই যেমন : এমন কিছু বিষয় যা সম্পর্কে মানুষ খুব একটা কিছু ভাবে না, আর জীবনে তারই মূল্য কোন না কোন ক্ষেত্র দিয়ে বেশি। ভুলবশত প্রথমেই আমরা ধরে নিই, সংসারে আর কর্মজীবনে কারো অবদান কম কিংবা মূল্যের যে লম্বা একটি মানদণ্ড আছে - তাতে কারো অবস্থান ছোট।
এটি একটি চরম ভুল যা মানুষকে ভুল পথে নির্দেশ করে, এমন ধারণা যা আদৌ সত্যি নয় বরং কিছুটা বিভ্রমের মধ্যে পড়ে যায়। গত কয়েকটি পোস্টে আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, একেবারে গৌণ কিছুরও অনেক মূল্য দাঁড়ায় ক্ষেত্রবিশেষে যখন অন্য কারো সাহায্য আশা করা যায় না, অথচ সেই তুচ্ছ জিনিসটিই প্রাণ বাঁচায়, উদ্ধার করে জীবনের সেই দিকগুলো থেকে যখন অনিশ্চয়তায় চারদিক ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
আমি আজ উদাহরণ হিসেবে টানতে চাই, সেই ছোটবেলায় নীতিগল্পের রঙচঙে মলাটে বাঁধানো বইয়ে পড়া ঈশপের কাহিনী যা বলে চলে কীভাবে একটি সিংহ আর ইঁদুর কাল্পনিক একটি গল্পে বড় একটি দর্শনের ছাউনি হয়ে রয়েছে।
একটি সারাদিনের ক্লান্ত সিংহ যখন ঘুমাচ্ছে শিকারে বের হওয়া শেষে, তখন কোথা থেকে একটি ইঁদুর এসে জুটলো। বনের রাজা যখন প্রবল প্রতাপে একাকী হয়ে নিদ্রামগ্ন তখন ইঁদুরটি ভুলবশত খেলাচ্ছলে তার মুখের ওপর এসে পড়লো। আর তৎক্ষনাৎ ঘুমন্ত সিংহ জেগে উঠলো আর হাতের কাছে এ নগণ্য প্রাণীটিকে পেয়ে থাবা দিয়ে চেপে ধরে বসলো।
সিংহ তার বিশালাকার ক্ষমতা, শক্তি আর বিশালতা দিয়ে প্রথমে ইঁদুরটিকে মারার চেষ্টা করলো কিন্তু পরক্ষণে তার মনে হলো, কিছুক্ষণ এর সাথে খেলা যাক। প্রাণীটি ভয় পেয়ে শেষবারের মতো সিংহের কাছে অনুরোধ করলো তাকে না মারার জন্য। প্রতিদানে এই বলে যে, হয়তো একদিন সে তুচ্ছ, ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও একদিন না একদিন তার উপকারে আসতে পারে।
বনের রাজা এ কথা শুনে অট্টহাসি দিল। তারপরই বলে উঠলো, " হা হা হা ! তুই এত ক্ষুদ্র তুচ্ছ একটি প্রাণী! তুই করবি আমার উপকার ? হাসালি বটে, যা! তোকে ছেড়ে দিলাম। আজ কৌতুক বলার জন্য তুই নিস্তার পেলি ! "
দিন যায়, মাস পেরিয়ে বছর এসে পড়ে। ততক্ষণে ছোট্ট ইঁদুরটি কিছুটা বড় হয়েছে আগের থেকে, এখন তার শক্তি সামর্থ্য আর বিচারবুদ্ধি,ধূর্ততা জ্ঞান বেড়েছে কয়েকগুণ৷ যদিও সে আকারে সিংহের চেয়ে অনেক ছোট, কিন্তু তার নিজস্ব গুণ অবশ্যই রয়েছে।
দুপুরের পর বিকালের অল্প আলোয় সে নিজ গর্তের থেকে বাহির হয়ে ঘাসের সারি সারি তৃণরাশির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো। কিছুদূর আসার পর তার খেয়াল হলো সে একটি দৃশ্য দেখতে পেয়েছে। এক শিকারীর জালে সিংহ আটকা পড়েছে, আর সে ছটফট করছে কোনক্রমে সে জায়গা থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য।
কৌতুহলী হয়ে ইঁদুরটি আরেকটু কাছে গেল, এবং তখনই চিনতে পারলো সিংহটাকে। এটা সেই ঘুমন্ত পশুটা যেটা তাকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল।
এবার তাহলে বদলা নেয়া পালা, উপকার যেটা সে কখনো ভোলে নি। ইঁদুরটি কাছে গিয়ে সিংহকে বললো, চুপচাপ বসে থাকতে নড়াচড়া না করে। শিকারীর দল যখন অন্যত্র খাবারের সন্ধানে চলে গেল, সেই ফাঁকে জালের কাছে গিয়ে সে দা্ঁত বসিয়ে কুটি কুটি করে জাল ভাঁজ করে সিংহকে বের হতে সাহায্য করলো।
একদিনের উপকারের প্রতিদান সে এভাবে দিল যে তার থেকে উপকারস্বরূপ পুরো জীবনটাই বাঁচিয়ে দিল। তারপর সিংহ খুশি হয়ে তার কৃতজ্ঞতা জানাল।
এ গল্পটি নিছক কল্পনাপ্রসূত ও অবাস্তব হলেও তা আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। সেটি হলো, জীবনে কাউকে ছোট করে দেখতে নেই, এমনকি যে ব্যাক্তিটির থেকে আমরা কখনো উপকার আশা করতে পারি না।
যদি তা হয়, তাহলে একদিন ঠিকই আপণ ভেবে এমন প্রতিদান আসবে যা নতুনভাবে বাঁচতে শেখাবে। জীবন নানা শিক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় ,আর তার থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের নিজের ও সবার।
ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে পারেন কমেন্ট করে আর আশা করি সামনের ব্লগিং পথচলাতে সাথেই থাকবেন ।