তারিখ : ৩১.০৫.২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, শুক্রবার।
হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণোচ্ছল জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।
ধন্যবাদ৷
বেশ কিছুদিন পর আবার আপনাদের সাথে ব্লগের মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার জন্য একান্তই আনন্দিত অনুভব করছি। বারবার ফিরে আসার মাঝে এক ধরণের ভালোলাগা আছে যা বিভিন্ন ব্যাক্তিকে বিভিন্নভাবে আলোড়ন জাগায়। মে মাসের শেষ দিনটিতে একটি ছোটগল্প দিয়ে আজ লেখা শুরু করবো।
গল্পটি কিছুটা বাস্তবভিত্তিক, কিছুটা কল্পনা মিশ্রিত। পুরোপুরি সত্যকে খুঁজে বেড়ালে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় যা মূল একটি মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে না। আমার নাতিদীর্ঘ সাহিত্য জীবনে যতটুকু জ্ঞান সঞ্চয় ও আহরণ করতে পেরেছি তার থেকে একটি শিক্ষা হলো - বাস্তবতাকে পুরোপুরি নিজ লেখায়, সাহিত্যপটে তুলে ধরতে নেই। নতুবা, ঘুরেফিরে নীরস, সহজ সিদ্ধ একটি ঘটনার চিত্রায়ন হবে যার তুল্যমূল্য নিছকই সামান্য ।
সকালবেলার সূর্য যখন তার কাঁধ উঁচু করে পুরো দিগন্তটাকে ছুঁয়ে বেড়ে উঠছে তখন ঘুম ভাঙলো সবুজের। সে একটি কলেজে পড়ে আর তার সাথে গান গাইতে ভালোবাসে। গ্রামে বড় হয়েছে সেই ছোটবেলা থেকে আর তারপর যখন বিদ্যার্জনের তাগিদ আরেকটু গভীরভাবে জেঁকে ধরলো তখন সে শহরের এলোমেলো ব্যস্ত রাস্তাগুলোর বাঁক বদল দেখে চলেছে।
মিউজিকের প্রতি তার টান ছোটবেলা থেকে আর তার এই শখটা ধীরে ধীরে একটি ভালোলাগায় পরিণত হয়েছে। ঘরের যে পাশটিতে তার টেবিল চেয়ার আর বইপত্রে ঠাসা, তার বিপরীতে একটি কোণে সাজানো আছে রুপালি রঙের গিটার, একটি হারমোনিয়াম আর তার সাথে ভায়োলিন, পরের সিরিয়ালে আছে তানপুরা, একটি বাঁশি । এই সমাবেশটি একদিনে গড়ে ওঠে নি, বেশ কয়েক বছর সময় নিয়ে আজকের রূপ পেয়েছে ।
স্কুল জীবন থেকে তার গান গাওয়ার শুরু, বার্ষিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার সবসময় প্রথম পুরস্কার গানের প্রতিযোগিতায় বজায় থাকতো, যেন বাঁধাধরা বরাদ্দ একটি বিষয় যা কখনোই অন্য কারো হতো না । তার গানের গলার জুড়ি মেলা ভার ; কখনো দেখা যেত যে মূল যে গায়কের গান সে কাভার করে গাইছে, সেটা আসল গায়কের থেকেও সুরে, মানেগুণের ন্যায়বিচারে আর শ্রাব্যতার মাধুর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে উঁচুদরের।
বন্ধুবান্ধবদের পাল্লায় পড়লে তাকে গান না শুনিয়ে যাওয়ার কোন উপায় থাকতো না । কখনো যখন ফাল্গুনের তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে আর স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে, তখন সে নদীর ধারে বসে আড্ডার সাথে গান জুড়ে দিয়েছে, ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেছে - কোন খোঁজখবর নেই ।
আবার শত দুংখ কষ্টের মাঝেও নিজেকে খুঁজে পেত গানের সুরের মাঝে, হতাশা কিংবা খুশির মাঝেও সে একাকী কয়েকটি মুহুর্তে হারিয়ে গিয়েছে পুরনো দিনের গানের কলি মনে করে । এভাবে তার ঝোঁক যত বেড়ে গেল, তারপর সে গানের সরঞ্জামের সমাহার বাড়াতে থাকলো । জীবন এমনি করে তাকে নিয়ে এসেছে যেখানে তার ভালোলাগার একটি জায়গা গুছিয়ে রেখেছে নিজের মতো করে ।
হঠাৎ সে একদিন দেখতে পেল, তার মোবাইলে একটি মেসেজ এসেছে যা সে এতক্ষণ খেয়াল করে নি । একটি সাধারণ নাম্বার আর কারো ব্যাক্তিগত ক্ষুদে বার্তা এসেছে হয়তো তা মনে করে সে ভেতরে বিস্তারিত পড়ে দেখলো । যেই মাত্র পুরোটা পড়ে শেষ করলো, তখন বুঝতে পারলো যে তার জন্য একটি বড় সুযোগ অপেক্ষা করছে নামকরা গায়ক হবার ।
কেউ কারো ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, ঠিক তেমনি সে ও জানে না তার জন্য ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করে আছে । সেই কবে যখন একটি ট্যালেন্ট হান্ট অডিশন হলো তখন কৌতুহলের বশে সে তার ভোকাল বাজিয়ে প্রিয় কয়েকটি গান গেয়েছে। তা নিজের অজান্তে বিভিন্ন প্ল্যাবেক মিউজিক কম্পোজাররা রেকর্ড করে নিয়ে, নিজেদের স্টুডিওতে বাজিয়েছে।
প্রথমে অনেক সাধারণ সুর হবে এই ভেবে অগ্রাহ্য করে বাজিয়েছে, তারপর যখন পুরোটা সুর বিশ্লেষণ করে দেখলো, তাদের চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠলো । ঠিক কিভাবে একটি মানুষ এত সুন্দর করে গাইতে পারে, তাও এত কম বয়সে আর রেওয়াজ প্রশিক্ষণ, উন্নত বাদ্যযন্ত্র ছাড়া - তারা এটা কোন মতেই ভেবে পেল না ।
তারপর, শুরু হলো গায়কের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া । প্রথমে তারা অডিশনের জায়গায় খোঁজ নিল, তারপর যখন যোগাযোগ করার তথ্য পেল তারপর মেসেজ পাঠালো এই বলে যে তারা তার গানের একটি রেপ্লিকা বানাতে চায়৷ একটি জাতীয় নাটকের জন্য কিছু গান তৈরি করতে হবে, আর সুর ও লিরিক্স কম্পোজ করা হয়ে গেছে আর শুধু ভালো মানের গায়ক লাগবে।
উঁচু খ্যাতিসম্পন্ন গায়ক তারা নিবে না এমন কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল , বাজেটের একটি বিষয়ও ছিল৷ এই সুবাদে সবুজ গাইতে রাজি হয়ে গেল আর পরেরদিন এসে পড়লো গাইবার জন্য। বেশ ভালোভাবেই রেকর্ড করলো, তারপর তা নাটকের মাঝে প্রকাশ করা হলো। যখন দেখতে পেল যে, দর্শকরা গানের গায়ককে তারিফ করছে, অল্প সময়ে বেশ ভক্ত তৈরি হয়েছে, তখন নামকরা মিউজিক ডিরেক্টররা তাকে নিজেদের দলে ভীড়াতে শুরু করলো।
বছর দুয়েক পরে সবুজের গান রাস্তার পাশের দোকানে, চায়ের টঙে, ক্যাসেট প্লেয়ারে, এমপিথ্রি স্লটে বাজছে, ছেলেরা যুবকেরা গলা ছেড়ে গাইছে, কেউবা কাভার বের করছে । তার গান সোশাল মিডিয়ায় সয়লাব, আর বেশ কয়েকটি পত্রিকাও তাদের কলামে ছাপিয়ে চলেছে - " কে এই অসাধারণ গায়ক ? " আর তার সাক্ষাতের জন্য দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে লাইন জুড়ে দিয়েছে।
এক বছরের এই নাটকীয়তায় সে বদলে গেল। আর সময়ের হাত ধরে বেড়ে উঠে সে একদিন নিজেকে নতুন একটি বাস্তবতায় নিয়ে যেতে দেখলো। এখন তার কেবলই মনে হয় - পৃথিবীটা আসলেই নাটকীয়, সেই নাটকে কোন কাহিনী নেই, পথ জানা নেই গল্প থামবে কবে, যাত্রারও শেষ নেই। তা নিরন্তর বয়ে চলেছে...