সাহিত্যলেখার একাল -সেকাল | { দূরদৃষ্টিতে আধুনিকতার পরিক্রমা }...

in hive-129948 •  4 months ago 

তারিখ : ১৩.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার।

হ্যলো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,লেখক ও পাঠকবৃন্দ,

সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাই। আপনারা সবাই কেমন আছেন?

আশা করি ভালোই আছেন আর বেশ সুস্থ সুন্দর সাবলীল সময় পার করছেন। সব সময়ের মতো আজও এই আশা ব্যক্ত করি যাতে নানা চড়াই উতরাইয়ের মাঝে সমিধ গতিতে সবকিছু সুন্দরভাবে বয়ে চলে।

বেশ অনেকদিন ধরেই মূলধারার কিছু সাহিত্য থেকে দূরে সরে রয়েছি। কিছু ব্যস্ততা ঘিরে ধরেছে সময়ের এ পর্যায়ে এসে তা অস্বীকার করার জো নেই। তারচেয়ে বেশি যেটা অনুভব করি তা হলো সময়ের আধুনিকতায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে চলেছে, তার সবটুকু আমরা বুঝতে পারি না।

pexels-photo-6037572.jpeg
Src

কয়েক দশক আগে যখন ইন্টারনেটের এত বিস্তৃত পরিসর ছিল না, তখন সবথেকে বেশি যেটা দেখতে পাওয়া যেত - তা হলো পত্রিকা, ম্যগাজিন ও নানা সাময়িকীর ছড়াছড়ি । বিভিন্ন বইয়ের দোকান, মনোহরি স্টল কিংবা মেলা, ছাপানোর যন্ত্রপাতি কিংবা প্রেসের আশপাশ, আনাচে কানাচে বিভিন্ন বাহারি সাজে সজ্জিত সাহিত্যপত্র চোখের সামনে চলে আসতো। তার অনেকখানিই এখন ততটা প্রবলভাবে নেই।

যে পরিবর্তনটার কথা বলছি আজকের ব্লগে তা হলো, এই যে অনলাইন প্রকাশনী, ছাপানোর বদলে আর তা নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ঝুটঝামেলা পোহাতে চাওয়া হয়ে ওঠে না সে বিষয়টা।

কাগজের দাম, কালি,ছাপার বিষয়বস্তুর অপব্যয়, প্রকাশক ও সম্পাদককে বিরক্ত কম করা কিংবা পাঠকদের প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো যুগোপযোগী হওয়ার মানসিকতা পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।

যখন সময় ছিল মাসের শেষে প্রিয় লেখকের একটি বই জমা খরচের পাশ কাটিয়ে সঞ্চয় করে রাখা পয়সা অন্য খাতে ব্যয় না করে কিনে নেওয়ার মাঝে পরিতৃপ্তির রেশ ছিল, তা অনেকাংশেই বদলে গিয়েছে।

pexels-photo-1493079.jpeg
Src

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি নিজেও যে গ্রিন টি, কিংবা লিকারের একটি কড়া সতেজ চা পাতার সুঘ্রাণের চা পানের সাথে করে হকারের গেটের নিচে দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া পত্রিকার পাতাটি উল্টিয়ে দেখি না।

তার বদলে স্মার্ট ট্যাবলেট সাইজের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণের দিকে তাকিয়ে থাকি আর সর্বশেষ সংবাদ আর খবরাখবর পড়ে নিজেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা একটি আধুনিক রূচি ও মনন সম্পন্ন মানুষের সাথে মিলিয়ে নেই। নইলে প্রেস্টিজ বজায় রেখে প্রেয়সী মহলে নিজের অবস্থান খুইয়ে ফেলার যে পিছুভয় থেকে যায়, হা হা।

এখন কবিতা গদ্যগুলো ঢাকা পড়ে গেছে সে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেখানে অনেক কাল আগের মতো করে অ্যালবাম কিংবা সংগ্রহ করা খন্ডগুলোর শোভা পাওয়া যায় না। তবে ভালো-লাগার যে দিকটা, সবসময় বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি, যে আধুনিকতা আমাদের ঘিরে ধরে রেখেছে তার থেকে পূর্ণতা আর মনের যে দিকটা এক ধরণের বাস্তবসম্মত অনুভূতির চড়া অনুরাগের বাঁধন খুঁজে পেত, তার উদ্বোধন এখনো কতটা জাগ্রত রয়ে গেছে ?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি চৈত্রের নিরালা দুপুরে, চারদিকে শুনশান নীরবতায় ঢাকা পড়েছে আর কখনো কাক, চড়ুই পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে, এক চিলতে রোদ আমার জামগাছের নিচের ছাউনির জানালার গ্রিল কাটিয়ে ঘরের মেঝেতে এসে পড়েছে। হালকা বাতাসের পরশে গাছের লতাপাতারা ঢেউ খেলছে নিজের মতো করে, আর আমি বিছানায় শুয়ে বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ উদাসী হয়ে পড়েছি।

যখন ইন্টারনেটের আধুনিকতা এতটা ছিল না যা এখনকার যুগে এসেছে তখনকার দিনগুলো কতটা ভালো ছিল, তা তুলনারহিত। একখানা কবিতার বই হাতে নিয়ে ধরে দেখতাম, ভেতরটা কেমন আছে। শব্দের ভাঁজে লুকিয়ে থাকতো আলাদা একটি জগত, সেখানে কখনো এতটা প্রবল আকর্ষণ ছিল যা এগিয়ে নিয়ে যেত কখনো ভালোবাসায়, কখনো দুরন্ত বেগে কোন স্থানে, কিংবা বিরান মাঠে, মনের এক কোনে যে বসে আছে মনের অন্দরমহলে।

pexels-photo-4638258.jpeg
Src

আজ কখনো পুরনো কয়েকটি কবিতার লাইন পড়ে দেখা হলে, যা হঠাৎ করে চোখের সামনে ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে - স্মৃতির জানালা দূর দিগন্তের দিকে টেনে নিয়ে যায়। দেখতে যেতে মন চায়, সজনী কি আজো আমায় গোপনে ভালবাসে ? দূর থেকে বিরহে অস্থির হয়ে ডেকে চলে কখনো সেই মায়ায় আটকে গিয়ে চোখের কোণে হাসি কান্নায় বাধা পড়ে ?

তার উত্তর খুঁজে যাই নি। এখনো হয়তো পত্রিকার দু পাতা সাহিত্য কিংবা প্রিয় গল্পখানা এড়িয়ে কারো ব্লগপোস্ট নিয়মিত পড়ে যাই, সে অনেক দূরের হলেও কাছের সত্তা খুঁজে চলি। প্রশ্ন ওঠে কার প্রতি হাত বাড়িয়ে মন এখনো বিবাগী হয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে, সে বলেকয়ে ধুয়া ওঠে ভালোলাগায় আর শেষ হয় ধোঁয়ার কুন্ডলীর মতো উড়ে উড়ে আকাশে।

ভেবে পাই না পুরোটা। তবে যতটুকু বুঝি, এভাবেই নিত্যনতুন গন্তব্যে সময় এগিয়ে চলেছে, নিজেও ধেয়ে চলেছি পিছুপিছু। এ ধাওয়ার কোন আপাত শেষ নেই, ভোরের পরের সন্ধ্যার তারার মতো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। তবে শেষমেষ যদি ভালো লাগে নতুন অনলাইনের পৃথিবী বেশ মানিয়ে নিয়েছে আধুনিকতাকে, তখন আর কিছু বলার থাকে না।

pexels-photo-2770376.jpeg
Src

শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের সবার জন্য একরাশ শুভেচ্ছা রইলো, সাথে নতুন দিনের জন্য শুভাকাঙ্ক্ষা। দেখা হবে আবার নতুন কোন দিনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, ভালো রাখুন নিজেকে।

অবসান।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা


Blue Abstract Watercolor Blank Template Instagram Story_20240516_152026_0000.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!