অপেক্ষার ডানা মেলা প্রজাপতি । [ নৈমিত্তিক গল্পের ভীড় থেকে একটি উপস্থাপনা ]...

in hive-129948 •  7 months ago 

আসসালামু আলাইকুম / আদাব।

তারিখ : ২৩.০৫.২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার।

সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালো আছেন। একদিন, দুইদিন করে সময় তার নিজস্ব গতিতে পার হয়ে যাচ্ছে যা সত্যিই একটি আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে আর আমরা প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন একটি সমীকরণে দেখতে পাচ্ছি।

বন্ধুগণ, আপনারা নিশ্চয়ই অনেকে খেয়াল করেছেন, যখন আমরা কোন একটি জিনিস, কোন প্রত্যাশিত বিষয় - কারো সঙ্গলাভ কিংবা ফলাফল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করি, তখন সময় ধীরে চলতে শুরু করে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চায় না যেন, শত শত জল্পনা কল্পনা এগিয়ে যেতে থাকে। কখনো আশায় অবিচল হয়ে স্বপ্ন নির্মাণ হয়ে ওঠে, কখনো হতাশার চাপা একটি প্রলেপ পড়ে মনে।

তবু প্রত্যাশার পৃথিবীতে নতুন করে স্বপ্ন দানা বাঁধতে সময় নেয় না। আমি সবসময় ভেবে উঠি, জীবনে কিছু অভিজ্ঞতা বোধহয় সম্পূর্ণ আমার নিজের, অন্য কারো জীবনে বোধহয় তার অস্তিত্ব নেই। কিন্তু না, বাস্তবে কমবেশি সবারই ঘুরেফিরে কোন না কোন সময় জীবন অনেক কিছু শেখায়, যা আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালাভ যেমন স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিস্তৃত প্রাঙ্গণেও এসে শিখতে পারি না।

pexels-photo-3029699.jpeg
Src

আজ বলবো অপেক্ষা সংক্রান্ত একটি ব্যাপার নিয়ে, ছোট্ট একটি গল্প, তা অতি সাধারণ ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েও সহজে নিজের অবস্থান ধরে রাখবে। মানুষের ভাবনার পরিসর কমবেশি ছোটবড় হয়ে থাকে, সবার চাওয়া পাওয়ার গন্ডিও নিজস্ব বাস্তবতার নিরিখে গড়ে ওঠে। কারো দিনশেষে স্বপ্ন কিংবা প্রত্যাশা পূরন হয় - কারো অধরাই থেকে যায়।

তো চলুন বেশি বাক্যব্যয় না করে গল্পে প্রবেশ করা যাক।

মীরা উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। কলেজে আসা যাওয়া আর বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাওয়া, মাঠের কিনারে থাকা বেদীতে বসে আড্ডা দেওয়া, খোশগল্পের মধ্য দিয়েই দিব্যি কেটে যাচ্ছে সময়। কখনো হোমওয়ার্ক শেষ করা চাই, আবার কখনো সময় করে বাইরে আত্নীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা তার অঢেল আছে।

তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ক্লাসের শেষে যে সময়টা মধ্যাহৃভোজের বিরতি দেয়া হয় আর সে দুপুরের খাবার শেষ করে তার পরিচিত কয়েকজন বান্ধবীদের সাথে বেরিয়ে পড়ে কলেজ কম্পাউন্ডের যে দিকটায় বাগান আছে সারি সারি, হালকা রৌদ্রময় আবহাওয়া আর কড়ই গাছের পাড়ঘেরা পুকুরটায় মাছেদের দল ঝাঁক বেঁধে টোপ গিলছে। নানা বিষয়ে তাদের কথোপকথন চলতেই থাকে, আর দুপুরের পরের ক্লাস কিংবা পরীক্ষায় বসে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল সে ছয় মাস হবে প্রথমে, তারপর অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে - কিন্তু তার মনে হচ্ছে এইতো সেদিন যখন সে প্রথম ক্লাসে এটেন্ড করেছে আর বাকি সহপাঠীদের সাথে সে মনোযোগ দিয়ে স্যারদের লেকচার শুনছে। দেখতে দেখতে টেস্ট পরীক্ষা চলে এলো আর তারপর ফাইনাল দেবার পালা।

pexels-photo-1454360.jpeg
Src

ক্লাস ও পরীক্ষার চাপ তার ছিল বেশি, অন্য সবার মতো সে নিজের লেখাপড়া আর শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়নে নিয়মিত ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করতো। শিক্ষা কার্যক্রমের এ দিকটার পাশাপাশি তার মনে হতে যদি নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা না যায়, তাহলে সে একটি মানানসই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এমন করেই তার দিন কেটে চলেছে।

একদিন সে দেখতে পেল ফটোকপির দোকানের সামনে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটি পত্রিকা আর গভীর চিন্তিত মনে পড়ছে চেয়ারের সামনে ঝুঁকে। মীরা যখন একটি লেকচার শীট ফটোকপি করে ব্যাগে রাখছে তখন সে তাকে দেখে টেস্ট পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে জিগ্যেস করলো কত মার্ক পেয়েছে।

মীরা জবাবে বললো সে আশানুরুপ ফল করে নি, কিছুটা হতাশা তার চোখেমুখে ধরা পড়লো। ছেলেটি উচ্চশিক্ষায় নিজের অবস্থান গুছিয়ে নিয়েছে আর যখন সে বুঝতে পারলো মেয়েটি ভবিষ্যৎ রূপরেখা আর ক্যারিয়ারগড়ার ভাবনা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, সাথে তার মা -বাবা ও নিকট প্রতিবেশীরাও ; তারপর সে বললো, চিন্তা নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। রেজাল্টের দিকে ফোকাস না করে, নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে।

pexels-photo-7972481.jpeg
Src

তারপর, কয়েকদিন পরপর বিকেলে তারা ভবিষ্যতের পাথেয় নির্মাণে মনোযোগী হতে লাগলো। মীরা অনুভব করলো তার দুশ্চিন্তাগুলো হালকা হতে আরম্ভ করেছে আর একটি সুন্দর দিকনির্দেশনা যা তাকে বাস্তবসিদ্ধ পথে নিজের উচ্চশিক্ষা ও পথ বেছে নিতে সাহায্য করছে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

মাসছয়েক পর। মীরা উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। একটি স্বনামধন্য ইন্জিনিয়ারিং কলেজে চান্স পেয়েছে। এবার তার খুশি আর ধরে না। বিগত সময়গুলোতে সে যার সান্নিধ্য পেয়ে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল, তার পূর্ণতা মিলেছে অবশেষে।

সে ফোন বের করে তাকে কল দিতে চাইলো, কিন্তু নাম্বারটি বন্ধ দেখাচ্ছে। কয়েকবার চেষ্টা করলো,আবারো সেই একই সুর - সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন।...

মীরা অপেক্ষা করে রইলো। মা বাবাকে জানিয়ে সেই মানুষটির জন্য যে তার দুঃসময়ে পাশে ছিল, তার নিজের গল্পকে সাজিয়েছে আর সুসময়ে এসে হারিয়ে গেল। হয়তো তার দিশা সে পাবে না, জানবে না কোথায় কেমন আছে, অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হবে।
এভাবে একদিন এমন গল্প নিজের মনের মতো না হয়ে, অল্প সময়ে স্বপ্নকে বিলীন করে দিয়ে চলে যাবে দীর্ঘকাল।

pexels-photo-2131659.jpegSrc

ধন্যবাদ ।

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা


Blue Abstract Watercolor Blank Template Instagram Story_20240516_152026_0000.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!