আসসালামু আলাইকুম / আদাব।
সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাই।
আজ ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ । আমার বাংলা ব্লগের স্টিমিট প্লাটফর্মে "গেস্ট ব্লগার" হিসেবে নিজের সৃষ্টিশীল লেখার যাত্রা শুরু করলাম। লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে নিজের যতটুকু মেধা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার সমন্বয় ঘটিয়ে সামনের দিনগুলোতে অগ্রসর হওয়ার আশা রাখি ।
আমি প্রত্যাশা করি আপনারা আমার সাহিত্যকর্মের গঠনমূলক ও ঐকান্তিক আলোচনা সমালোচনা করবেন এবং এই কমিউনিটিতে দীর্ঘ পথচলায় পথের সাথী হয়ে অনুপ্রেরণা যোগাবেন। সবার জন্য আরেকবার দোয়া ও শুভকামনা ।
আজ আমি একটি ছোটগল্প দিয়ে লেখা শুরু করছি। গল্পটি সম্পূর্ণ নিজের এবং ঘটনাপ্রবাহ, চিন্তা ভাবনা আর চরিত্রায়নে বাস্তবের কারো সাথে সম্পর্ক নেই। কোন ধরনের সামন্জস্য কিংবা মিল পাওয়া গেলে তা পুরোপুরি অনভিপ্রেত ।
তখন ব্রিটিশ আমল চলছে, ইংরেজরা বাংলা বিহার উড়িষ্যার দখল নিয়ে পুরো ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নিয়েছে যে সময় থেকে তারও শতাব্দীকাল পার হয়ে গিয়েছে। মোঘল আমলের যতটুকু শ্রীসৌন্দর্য্য ছিল প্রদেশে আর স্থাপত্যে তার ইতি টেনে ইংরেজি কায়দায় বাড়িঘর দালানকোঠা তৈরি হয়ে খদ্দের পাঞ্জাবির অফিসগিরি উঠে গিয়ে লেবাসে কোর্ট- শার্ট-প্যান্ট আঁটো করে পরার মধ্যে আয়েশ চলে এসেছে।
জমিদারি ভূমিব্যাবস্থা তার শ্রেষ্ঠ সময় পার করছে আর লাটসাহেবরা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন খাজনা -ট্যাক্স যোগাড় করার। প্রজারা সবাই জমিদার আর নায়েব মশাইয়ের অনুগত হয়ে বসবাস করতে আরম্ভ করেছে। কিছু ফসল আর দোকানপাট রয়েছে যারা জমিদার মশাইয়ের কর্মচারীরা চালায়। এভাবে সারা দেশজুড়ে নিত্যদিনের লেনাদেনা চলছে, দিনের কাজকর্ম শেষে মানুষজন সন্ধ্যার পরপর বাড়ি ফিরছে আবার সকাল ঘনিয়ে আসার পর কর্মস্থলে যাওয়ার তাগাদা দিচ্ছে।
Src
নবীন তার জমিদার বাবা ভুবনবাহাদুর মশাইয়ের একমাত্র সন্তান। তার বয়সক্রম ২৪ বছর। সবেমাত্র কলেজ পাশ করে এম.এ পাঠ আরম্ভ করেছে। ছোটবেলা থেকে বিশাল প্রাসাদটির অন্দরমহল আর বাইরে মানুষ হয়েছে। শৈশবের সময় থেকে যত্ন আত্তির কোন কমতি ছিল না, যা চেয়েছে আদরের সন্তান হিসেবে বাবা তাকে তা-ই এনে দিয়েছে। পাড়া প্রতিবেশীর ভক্তি আর প্রশ্রয় পেয়ে এসেছে ছোটবেলা থেকে, এখনো শহরের লেখাপড়ার ব্যস্ততা ছেড়ে বাড়ি গেলে তাকে নিয়ে আয়োজন আর তোড়জোড়ের ধুম পড়ে যাওয়ার কার্পণ্য দেখা যায় না।
নবীন যখন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রবেশিকার পাশ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য মনস্থির করলো জমিদার বাবা আর পরিবারের সবাই তাকে দূরে যেতে দিল না। সবার আদরের নবীন যদি শহরে গিয়ে যত্ন আত্তি না পায়, ঠিকমতো খাবার না পায়, আর একাকীত্বে ভুগে ব্যস্ত শহরের রাস্তায় পায়চারী করে বেড়ায় - তাহলে বেচারা না জানি কত কষ্ট পাবে !
এই ভেবে কয়েকদফা সে নিজের ও পরিবারের বাকি সবার সাথে কাচারির বসবার ঘরে বাক্যযুদ্ধ করেছে। যে ছেলেটা পণ করে নিয়েছে বি.এ পাশ করে আসবে ঐতিহাসিক শহরটির বিদ্যাপীঠ থেকে, নিজের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে ওকালতি করবে আর সমাজে নিজের পরিবার আর দরাজ মনের জমিদার বাবার মুখ উজ্জল করবে, সে আর যা হোক নিজের পণ রাখবে।
বেশ কিছুদিন সে ঠিকমতো খাবার দাবার খায়নি। কারো সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে ধীরস্থির ছিল, চুপচাপ নীরবতা আর মাঠঘাটের দিকে চেয়ে চেয়েই তার দিন কাটতো বেশিরভাগ। পরিবারের আর সবার শত অনুরোধ আর আকুতি সত্ত্বেও ভুবনবাবু বুঝলেন, তার নিজের ছেলে যা বুঝে আর ভবিষ্যত নিয়ে যা ভাবে - তার নিজের সিদ্ধান্তই তার জন্য নিয়তিসম ।
চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে ছেলেমেয়েদের বড় করতে নেই, তাহলে তারা একদিন নিজের স্বকীয়তা হারাবে। হাজার আদরে আর মায়ায় ছেলেমেয়েদের মানুষ করা হোক না কেন, একটা সময়ের পর তো তাদের স্বাধীন করে দিতেই হয়। জমিদারমশাই ঠিক করলেন, তিনি তার ছেলেকে নিজের পথ বেছে নিতে সাহায্য করবেন।
Src
যেই ভাবনা সেই কাজ, যখন সময় হয়ে হলো, চৈত্রের খরতাপ আর নেই তেমন, বৈশাখের আগমনী বার্তা আম, জাম আর মুকুলের ঘ্রাণে চারদিকে মেতে রেখেছে। কোন এক সকালে তাকে মোটরগাড়ি করে গাড়োয়ানের সাথে একটি পাইক সাথে করে পাঠিয়ে দিলেন। সাথে করে কিছু খাবার দাবার শুকনো আচার আর ফলমূল বোঝাই করে। না জানি ছেলেটি কতদিন পর আবার ফিরে আসে চেনা পথঘাট আর ঘরবাড়ির পাশ ঘিরে।
সময় বয়ে চলে, যখন চারদিকে গরমের দাবদাহ চলছে অথবা শরতের কাশফুল আকাশের সাদামেঘের সাথে ভাব করে ধরায় তার শুভ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কারো জন্য সারাবেলা মনপ্রাণ উদাসী হয়ে বসে থাকে না, তেমনি নবীনের জন্য বাকিদের চিন্তাধারা একটি ধাপ পর্যন্ত বর্তমান ছিল। ব্যস্ততা আর জীবনের যোগ অন্যদিকে সবাইকে মনোনিবেশ করালো, একইভাবে ভুবনবাবু আর পরিবারের সবাই যার যার কাজকর্ম সংসারে চলে গেলেন।
দিন যায়, মাস পেরিয়ে বছর আর লেখাপড়ার ব্যস্ততা ক্রমেই বেড়ে চললো। নবীন যোগাযোগের উপায় হিসেবে মাঝেমাঝে টেলিফোন করতো, তখনকার দিনে আজকের পৃথিবীর দ্রুত যোগাযোগের মেসেন্জার, হোয়াট্স অ্যাপ, ডিসকর্ড ছিল না। সে বুঝলো খামাখা বেশি টাকা খরচ করে টেলিফোন না করে, চিঠি ডাক মারফত পাঠানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে করে টাকাও বাঁচবে, মনের অনেক কথা সময় নিয়ে লেখা যাবে।
এক ঢিলে দুই পাখি সই।
Src
১০-১৫ দিন রোজ চিঠি লেখা চাই। তা ফেরত আসতে সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করা চাই আর জমিদার বাবা কত যত্ন করে তার উত্তর দেয়া, সবাই ভালো আছে আর আপনমনের কথাগুলো কি নিরালায় অক্ষরের খাতায় ঢাকা পড়ে যেত। আদরমাখা সেসব কথা তাকে ধোঁয়া ওঠা শহরে কোলাহল নীরবতার মাঝেও কল্পনার রেখাপাত করে যেত। সকালগুলো পার হয়ে বিকেলের দিন তার বেশ কেটে যেত।
এভাবে অনেক সময় কেটে গেছে, ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর ২ ঘুরে এলো ফের সেই নিরালা বৈশাখের দিন, ঠিক সে সময়টায় যখন সে প্রথম এ নগরশহরে প্রথম গ্রাম ছেড়ে এলো..
-- পরবর্তী পর্বের জন্য সাময়িক ইস্তফা ।