"দুটো পঁয়তাল্লিশ"- আর একবার হাত ঘড়িটার দিকে চেয়ে দেখলো সুমন। টানা দুই ঘণ্টা হয়ে গেলো একই ভাবে প্ল্যাটফর্মের এই বেঞ্চটায় বসে রয়েছে সে। চোখের সামনে থেকে বাড়ি ফেরার পর পর তিন তিনটে ট্রেন চলে গেলো তবুও তার কোনো হেল দোল নেই। হাত পা যেনো কিছুতেই নড়ছে না, চোখের সামনে যেনো সব কিছু তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে দেখছে সে।
কি করবে? কি ভাবে ফিরে গিয়ে সকলের সামনে দাঁড়াবে? রত্না কেই বা কি বলবে ও? যার সাথে সাত পাক ঘুরে নানান স্বপ্ন দেখেছিলো, নিয়ম মেনে যার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব পালনের শপথ করেছিল, আজ এক লহমায় সব কিছু তো চুরমার হয়ে গেছে। এতদিন ধরে যে কোম্পানিতে চাকরি করেছে সে, নিজের সবটুকু যে কোম্পানিতে উজাড় করে দিয়েছে আজ সেখান থেকেই তাকে হাতে একটা নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই নোটিশ টা খুলে দেখতেই ধপ করে বসে পড়ে সুমন নিজের চেয়ারে, নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
তবে শুধু যে সে একা তাই নয় , ওর পাশাপাশি আরও জনা তিনেক লোক কেও এই একই ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রাইভেট কোম্পানীর এই এক আজব নিয়ম, পার্মানেন্ট শব্দ টা যেন এখানে একেবারে মূল্যহীন।
এই তো বছর চারেক আগেকার কথা , কৃষ্ণনগর থেকে পাড়ি জমিয়ে ছিল সুমন কোলকাতার উদ্দেশ্যে , সঙ্গে নিয়েছিল একটা ফাইল , যার মধ্যে সমস্ত রকম নথিপত্র , সার্টিফিকেট আর বায়োডেটা , তারপর কোলকাতার এই অফিস - সেই অফিস ঘুরে তিন চার বার প্রত্যাখিত হয়ে অবশেষে একটা চাকরি জুটিয়েছিল সে , সেই দিনটাই মনে হয় সবথেকে খুশির দিন ছিল সুমনের কাছে । বাড়ি ফেরার সময় এক হাঁড়ি মিষ্টি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল সে, বাড়ির সকলের চোখে - মুখে যেন আনন্দের স্রোত বয়ে গিয়েছিল সেই দিন । ইন্টারভিউ পাশ করে সবার প্রথমে সুমন খবর দিয়েছিল রত্নাকে । বলেছিল বাড়িতে যেন ও জানিয়ে দেয় আর নতুন করে কোনো পাত্রপক্ষ কে হাজির না করাতে। সেই দিন সুমনের সেই আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ শুনে অনেক ভরসা পেয়েছিলো রত্না।সাহস করে নিজের বাবাকে গিয়ে বলেছিল , “ বাবা , আমার জন্য তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না , সুমন চাকরি পেয়েছে , আমি ওকেই বিয়ে করব । তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মহা ধুমধাম করে বিয়ে হয় দুজনের । ছয় বছরের ভালোবাসা প্রাপ্তি পায় । সেই দিন ফুলশয্যার ঘরে সুমন রত্নার কাছে জানতে চেয়েছিল , “ আচ্ছা এই ভাবেই সারা জীবন আমার পাশে থাকবে তো ? " উত্তরে রত্নার কথাটা যেন দাগ কেটেছিল সুমনের মনে , “ শুধু এই জন্মেই নয় মশাই , আগামী সাত জন্মে ।"হঠাৎ অ্যানাউন্সমেন্টের শব্দে সুমনের ভাবনা গুলোর বিরতি ঘটে ।
আপ কৃষ্ণনগর লোকাল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে।নিজের সমস্ত শক্তিকে যেন এক জায়গায় পুঞ্জীভূত করল সুমন , বাড়ির সকলের মুখ যেন একবার করে ভেসে উঠছিল তার চোখের সামনে । এই মানুষগুলো তো তাকে নির্ভর করেই বেঁচে আছে । নিজে চাকরি পাওয়ার পরই তো অসুস্থ বাবাকে রায় কাকুদের বাড়ির মোট বওয়ার কাজটা ছাড়তে বলেছিল । বাবা তো সেই দিনই গর্ব করে বুক ফুলিয়ে তার মালিককে জানিয়েছিল , "কাল থিকা আর আইসতে পারবো নাই মালিক , ছেলে চাকরি পাইসে, কইসে আমারে আর কাম করতে দিবো না ।" দিন আনা দিন খাওয়া বাড়িতে সেই সময় থেকেই তো মাস কাবারি মুদী মাল আসতে শুরু করলো। সারাদিন কায়িক পরিশ্রমের পর যখন ক্লান্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরত সুমন তখনই তো গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে আসত রত্না , সারা দিনের ক্লান্তি যেন রত্নার বানানো এক কাপ চা খেয়েই দূর হয়ে যেত তার । এই সব কিছু মনে করতে করতেই এক অদ্ভুত শক্তি পেল সুমন মনের মধ্যে । নিজেকেই যেন বলে উঠল সে , যা হবে দেখা যাবে , আর যাই হোক পরিস্থিতির চাপে হেরে যাওয়ার পাত্র আমি নই , বিপদ থেকে না পালিয়ে তার সম্মুখীন হব , সকলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো , বলবো হাল ছাড়িনি আমি , নতুন কিছু করবো , তোমাদের মুখের হাসিগুলো ধরে রাখবো , রাখবোই । " উঠে পড়ল সুমন ট্রেনে । দু বার বাঁশি বাজতেই ট্রেন রওনা দিল কৃষ্ণনগরের দিকে ।
গল্পটা বেশ দারুণ ছিলো ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। পড়ে ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আর আপনি যেহেতু নিউ মেম্বার। তাই আশা করি আমার বাংলা ব্লগের সকল নিয়ম কানুন গুলো পড়ে নেবেন এবং তা মেনে পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই, পরবর্তী পর্ব খুব শিগ গীর আসবে। আমি যথা সম্ভব নিয়ম মেনেই চলবো। আপনারা পাশে থাকলেই হবে।🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পরবর্তী পর্ব এসে গেছে, পড়ে ভালো লাগলে জানাবেন
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit