আসসালামু আলাইকুম |
---|
চলুন তাহলে শুরু করা যাক- আমার ভাগিনা রাকিব গাড়ির হেল্পারকে আ-কার এর জায়গায় ঈ-কার বলায় যে দূর্দশা ঘটলো তার বিস্তারিত শেয়ার করছিঃ
- পোস্ট ক্যাটাগরিঃ শিক্ষামূলক পোস্ট।
- পোস্টের শিরোনামঃ আ-কার এর জায়গায় ঈ-কার বলায় যা ঘটলো।
- পোস্টের তারিখঃ ২২ শে কার্তিক ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দ(বাংলা)।
----বেশ কয়েকদিন যাবত ভাবছি একটা কাজে সাভার যাবো। কিন্তু সময় এবং ছুটি না থাকার কারণে আর যাওয়া হচ্ছিল না। আমি আমার ভাগিনার সাথে একটা কাজের জন্য যাবো। আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হচ্ছে সোমবার। তো আমার ছুটি হলে ভাগিনার ছুটি হয় না, আবার ভাগিনার ছুটি হলে আমার হয় না। অনেক কষ্ট করে আজকে দুজন সময় ম্যানেজ করে সাভারে যাবো বলে নিয়ত করলাম। ভাগিনা রাকিব যাবে ওদের বাসা কেরানীগঞ্জ এর বনগ্রাম থেকে আর আম যাবো মিরপুর ২ নাম্বার থেকে।
ভাগিনা রাকিব যখন আসতেছিল |
---|
রাতে আমাদের কথা হলো যে, সকাল বেলা যার যার স্থান থেকে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। আমরা যাবো সাভারের শিমুলতলা বাস স্ট্যান্ডে বা সি আর পি বাস স্ট্যান্ড। আজকে আমার ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভাগিনা আমাকে ৮.২১মিনিটে ফোন দিয়েছিল, কিন্তু আমি টের পাইনি। আমি যখন ঘুম থেকে উঠি তখন বাজে সকাল ৮.৪৪ মিনিট। ভাগিনা তখন সাভারের হেমায়েতপুর চলে এসেছে।
আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে মিরপুর দুই নাম্বার থেকে ইতিহাস গাড়িতে উঠে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। তখন বাজে সকাল ৯.২০ মিনিট। গাড়িতে উঠে আমি ভাগিনা রাকিবকে ফোন দিলাম যে, তুই কোথায় আছিস? ভাগিনা রাকিব আমাকে বললো মামা আমি শিমুলতলা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে গেছি। রাকিবের কথা শুনে আমি ভাবলাম আমার তাহলে অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।
মামা ভাগিনা পাশাপাশি হওয়ার মুহূর্ত |
---|
তারপর আমি সকাল ১০.৩০ দিকে সাভার শিমুলতলা বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালাম। বাস স্ট্যান্ডে নেমে আমি ভাগিনা রাকিবকে ফোন দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তুই কোথায়? ও বললো মামা আমি শিমুলতলা পূবালী ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর আমি ওকে বললাম যে, তুই সাভার ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে আয়, আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু ভাগিনা সাভার ডাচ বাংলা ব্যাংক চিনতে পারছে না। তারপর আমি বললাম, তাহলে সাভার ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে আয়। কিন্তু সে ইবনে সিনা হাসপাতাল ও সে চিনে না। তারপর আমি বললাম যে তুই একটা রিকশা নিয়ে সাভার নিউ মার্কেট চলে আয়। কিন্তু রিকশা ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলে রিকশা ওয়ালা ও নাকি চিনে না। তখন আমার মনে একটা খটকা লাগলো আসলেই কি রাকিব সাভার শিমুলতলা আছে।
মামা-ভাগিনা একসাথে বসে ঠান্ডা খাওয়ার মুহূর্ত |
---|
তারপর আমি রাকিবকে বললাম তুই ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক চিনিস না। তুই এখানে চলে আয়। এভাবে করতে করতে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট সময় চলে গেল। কিন্তু রাকিব আমার কাছে আসতে পারলো না। এরপর আমি রাকিবকে জিজ্ঞেস করলাম যে তুই কোথায় আছিস আমাকে ঠিক মতো বল। এবার রাকিব বললো সে সাভার-আশুলিয়া রোডে আছে। আমি এবং রাকিব কেউ জানতাম না যে সাভারের মধ্যে শিমুলতলা এবং শিমুলতলী নামের কাছাকাছি দুটি জায়গা আছে। পরে আমি আমার এক পরিচিত ভাইকে বিষয়টা খুলে বললাম। তখন সে বললো যে আপনার ভাগিনা তাহলে আশুলিয়া শিমুলতলীতে চলে গেছে।
ভাগিনা চলে যাওয়ার মুহূর্ত |
---|
তারপর আমি আমার পরিচিত ভাইয়ের কাছে মোবাইলটা দিলে সে ভাগিনা রাকিবকে লোকেশনটা ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিলে সে আবার রাজধানী গাড়িতে করে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সাভার শিমুলতলা আসলো। আশুলিয়া শিমুলতলী থেকে সাভার শিমুল তলা আসতে ভাগিনার সময় লেগেছে ৩০ মিনিট আসার পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে ভুল হলো কেন সে আমাকে বললো, গাড়ি ওয়ালাকে সে নাকি শিমুলতলির কথাই বলেছে। রাকিব একটা আ-কারের জায়গায় ঈ-কার বলার কারনে যাওয়া-আসা এবং এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে সময় অপচয় করেছে প্রায় ২ ঘন্টার মতো। এবং কতটা কষ্ট পেয়েছে সেটা না হয় নাই বললাম।
শিক্ষাঃ আসলে আমাদের প্রত্যেকের ই উচিৎ কোন জায়গায় যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নেওয়া। সাথে সাথে এটা ও জেনে নেওয়া উচিৎ যে একই নামে বা কাছাকাছি কোন নামে আশে পাশে এমন আর ও কোন জায়গা আছে কিনা। তাহলে হয়তো আমাদের এই সমস্যাগুলো আর হবে না। তা না হলে ভাগিনা রাকিবের মতো অবস্থা আমাদের যে কারো হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় খারাপ লোকের পাল্লায় পড়তে সর্বস্ব হারানো এবং জীবনের ঝুঁকি ও থাকতে পারে। শুধুমাত্র একটি ঈ-কারের জন্য সময় নষ্ট, টাকা নষ্ট এবং অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয়েছে।