আমার আজকের পোস্টে || ছেলেকে মারার অনুতপ্তে নির্ঘুম একটি রাতঃ

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরাঃ


আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

বন্ধুরা আজ আবার চলে আসলাম। নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আআজকের পোস্টটি সম্পুর্ণ ভিন্ন রকমের। আশা করি সবার ভালো লাগবে।


৫ই ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
১৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে রজব, ১৪৪৪ হিজরি
রবিবার


আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। বন্ধুরা অনেক ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন পোস্ট করতে পারিনা। তাই দু-দিন পরে আবার নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।

বন্ধুরা আজ আমি সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। ঘটনাটি গতকাল রাতের। আমাদের মসজিদের উদ্যোগে গতকাল রাতে মসজিদের সামনে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তো আমি বরিশালে থাকতে জানতাম না এই মাহফিলের কথা। শুক্রবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখি মসজিদের সামনে সামিয়ানা টানিয়ে পেন্ডেল করতেছে। তারপর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে জানতে পারলাম যে শনিবার রাতে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

IMG_20230218_102030.jpg

চিত্র: ১ মাহফিলের স্থান

আমার কাছে ভালোই লাগছিলো মাহফিলের কথা শুনে কারণ অনেক বছর হয় এলাকার কোন মাহফিলে থাকতে পারিনা। যাই হোক শনিবার বিকাল থেকেই এলাকার লোকাল হুজুরেরা বা মাওলানাগন বয়ান শুরু করে। আমি একেবারে মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর মাহফিলে গেলাম। সাথে আমার ছেলে নিহানকে ও পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়িয়ে নিয়ে গেলাম।

কিন্তু আমার ছেলে আমার সাথে না বসে এলাকার কয়েকটি সমবয়সী ছো ছোট ছেলেদের সাথে একটু পিছনে বসলো। তো আমি আর কিছু বলিনি। আর যে ছেলেগুলোর সাথে বসেছে তাদের আমি কাউকেই চিনিনা।

মাহফিলে উপলক্ষে একটি ফুসকা এবং পপকোন এছাড়া আরও কয়েকটি দোকান বসেছে। এর মধ্যে একবার আমি ফুসকা কিনে দিয়েছি,সেটা খেয়েছে, পরে আবার পপকোন কিনে দিয়ে আমার পাশে এনে বসিয়েছি। কারণ আমি দেখেছি নিহান অন্য ছেলেদের সাথে দৌড়া-দৌড়ি করছে এতে করে মাহফিলে বিঘ্ন ঘটতে পারে, আবার যেহেতু রাত সেক্ষেত্রে একটা দুর্ঘটনা ও ঘটে যেতে পারে।

IMG_20230218_102008.jpg

চিত্র: ২ মাহফিলের স্থান

কিছুক্ষণ আমার পাশে বসার পরে বলে বাবা আমার ভালো লাগেনা, আমি একটু বাহিরে যাবো। প্রথম আমি না করলাম তারপর আমার পাশেই বসে রইলো কিন্তু কিছুক্ষন পর নিহান আমার পাশে থেকে উঠে বাহিরে চলে যায়। আমি ভাবলাম কোথায় আর যাবে এখানেই হয়তো অন্য ছেলেদের সাথে খেলবে।

এরপর আমি কিছুক্ষণ পরে পেন্ডেলের বাহিরে তাকিয়ে দেখি নিহানকে দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমি বাহিরে এসে খুজতে লাগলাম, দেখলাম বাহিরে ও নাই। তারপর নিহানের আম্মুকে ফোন দিলাম যে বাড়িতে গেছে কি না, বললো বাড়িতে ও যায় নাই।কিছক্ষন খুজে আমি বাড়িতে গেলাম দেখি বাড়িতে যায় নি।

এরপর এশার নামাজের সময় হলে আমি নামাজে চলে আসি এবং ওর আম্মু কে বলি যে আমাদের বাড়ির সামনে কিছুদিন আগে একটা মেলা বসেছিলো, সে মেলা শেষ হয়ে গেলেও সেখানে মেলার একটি নৌকার দোলনা রয়েছে যেটিতে এখনো টাকার বিনিময়ে ছেলে মেয়েদের চড়ানো হয়। ওই নৌকার কাছে গেছে কিনা দেখে আসতে বলি। কিন্তু রাত হওয়ার কারণে সে আর যায়নি। নামাজ শেষ করে আমি আবার মাহফিলের কাছে খুঁজলাম দেখি নাই।

এবার আমি মেলার নৌকার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি প্রায় আট দশটা ছেলের সাথে নৌকার উপরে বসে আছে নৌকায় ঝুলমি খাবে বলে, দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। আমি নিহানকে নৌকা থেকে নামিয়ে আনলাম। প্রথমে নামতে চায় নি। বলে বাবা আমি একটু নৌকায় চড়বো এই বলে আমাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করেছে।

IMG_20210514_073803_948.jpg

চিত্র: ৩ নিহানে মাহফিলে যাওয়ার প্রস্তুতি।

পরে অনেক জোরে ধমক দেওয়ার পর নেমে আসে। নেমে আসার সময় নৌকা ওয়ালা নিহানকে টিকিটের ১০ টাকা ফেরত দেয়। এবং ওর কাছে দেখি ৬৫ টাকা আছে, পরে আমি জিজ্ঞেস করলাম ১০০ টাকা বাকি টাকা কই? তখন নৌকা ওয়ালা বলে বাকি টাকা ও খেয়েছে। পরে আমি আমার ছেলেকে বেশ কয়েকটি চোড় মেরেছি, এত জোরে চড় মেরেছি যে আমি নিজেই হাতে ব্যাথা পেয়েছি। পরে আমি আর একটি লাঠি নিয়েছিলাম ওকে মারার জন্য কিন্তু আমার মা এসে ওকে আমার কাছে থেকে নিয়ে যায়।

নিহানকে মারার পরে আমি নিজে ও কেঁদেছি। রাতে ও আমি ঘুমাতে পারিনি। পরে চিন্তা করলাম কেন যে আমি ওকে এভাবে মারলাম। এমনে হয় ওর থেকে আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি। পরে চিন্তা করলাম ওকে এভাবে মারাটা মোটে ও ঠিক হয়নি। নিহান তো শুধু একবার নৌকায় চড়তে চেয়েছিল।

IMG_20230204_164533.jpg

চিত্রঃ ৪ সার্কাসে আনিত নৌকা

তবে একটা বিষয় সেটা হলো এই রাতে নিহান যদি ওই নৌকায় চড়তো এবং সেটা যদি চালাতো তাহলে সে নিশ্চয়ই ভয় পেতো কারণ নৌকাগুলো বিদ্যুৎ এর মাধ্যমে চলে। পরে আমি ওর আম্মুকে বলে যে আমিতো বরিশালে চলে যাচ্ছি, তুমি ওকে একবার নৌকায় চড়াই ও। কিন্তু ওর মা সকালে ওকে জিজ্ঞেস করায় সে নাকি বলেছে যে আমি যাওয়ার আগে সে আরও দু বার ওই নৌকায় উঠেছে।


শিক্ষাঃ আসলে রাগের মাথায় আমরা সকলেই সন্তানকে এভাবে হয়তো বা মেরে থাকি। কিন্তু যখন রাগ চলে যায় তখন বুঝি যে সন্তানের কান্না বা ব্যাথাগুলো মনে হয় নিজের কলিজায় আঘাত করে। তখন মনে হয় এভাবে না মারলে ও পারতাম কিন্তু রাগ যখন ওঠে তখন কিন্তু এই সব কথা মনে থাকে না। তাই আমি বলবো আমরা বাবা মা যারাই আছি কেউ যেন আমার মতো রাগের মাথায় সন্তানের গায়ে হাত না তুলি বা না মারি। বুঝতে হবে রাগ হচ্ছে শয়তান আর শয়তান চায় কিভাবে আমাদের ক্ষতি করা যায়। ধন্যবাদ সবাইকে।


আমি আজিজুল মিয়াঁ, আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। আমি জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে ম্যানেজার পদে কর্মরত আছি। লিখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি ছোট বেলা থেকেই কম-বেশি লেখা-লেখি করতাম। লেখা-লেখির পাশা-পাশি আমি ঘুরতে এবং খেলা-ধুলা করতে অনেক পছন্দ করি। সময় পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। অতিরিক্ত কথা বলা এবং মিথ্যা কথা বলা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি।


C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNz8uuU7jNdUdZcqn6h7peG3CH7HW4Dj4EnjdfKn9T6S1nX92sULZRaFUhpFmzY87Rh7WVkoNuC.png

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

5zGozCj1raAPxR2gxtAcC4PqrgwoJ7g4fhsaZBQiGiZqD8hpYQsVChctAgy2kS9mV6SZsMEvTo3JtHG1SaGTiVSZZvj1Cg7LApcJj7E7w6...xqohobR55AqvLPXjzPqinZxCCFYysfbwamCx1yYp3py1hevyBzxkMvXqSeLmVUJLnzYpDruY5pBwnAN3sJb5ntBM7ndcPvAMjSex58XEWXtasSNpzGQAySX6HL.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি বলতে কি ভাই পিতা-মাতা সব সময় সন্তানের মঙ্গল চায় কিন্তু ওই বয়সে বাচ্চারা সেটা বোঝে না ।অনেক সময় রাগের মাথায় আমরা অনেকেই অনেক কিছু করে ফেলি কিন্তু পরে তার জন্য কষ্ট পেতে হয় ।এমন ঘটনা শুধু আপনার ক্ষেত্রে নয় আমার মনে হয় সবার জীবনেই কম বেশি হয়েছে ।আমাদের উচিত শারীরিক শাস্তি না দিয়ে যতটা সম্ভব বুঝিয়ে বলা

আসলে বাচ্চা মানুষ দুষ্টুমি করাটাই স্বাভাবিক ৷ তবে আসলে রাগের মাথায় কোনো কিছু করা মোটেও ঠিক নয় ৷ যেমন আপনার ক্ষেত্রেই , রাগের জন্য ছেলেকে মেরে নিজেই কেঁদেছেন ৷ এটা না করে একটু বুঝিয়ে বলাটাই বেশি ভালো ৷ বাচ্চা হলেও তাদের বুঝিয়ে বললে ঠিকই বুঝে ৷ যাই হোক , ধন্যবাদ আপনাকে পোষ্টটি শেয়ার করার জন্য ৷