Copyright free image source:pixabay
তখন আমাদের নদীটা মোটামুটি ভালোই বড় ছিলো। নদীটা পদ্মার শাখানদী, নাম আঁড়িয়াল খাঁ। নদীতে অনেক স্রোত এবং নদী ভরা পানি ছিল। তখন ছিলো বর্ষাকাল। বড় বড় নৌকা, লঞ্চ এবং মালবাহী কার্গো চলাচল করতো। স্রোত এবং এসব নৌযান চলাচলের কারনে খেঁয়া নৌকা চালানোটা রেজ্জেক ভাইয়ের জন্য অনেক কষ্টে হয়ে যেত। তারপর ও জীবিকার তাগিদে তাকে এই বয়সে এসে নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। রেজ্জেক ভাই খেঁয়ার মাঝি হলে ও সে ছিল অনেক সহজ সরল এবং সবার কাছে প্রিয়। এই জগতে রেজ্জেক ভাইয়ের আপন বলতে আর কেউ ছিল না। দুইটা ছেলে এবং একটা মেয়ে ছিল সংসারে কিন্তু তাদের বয়স ছিলো একেবারেই কম। স্ত্রী আর সন্তানদের কথা চিন্তা করলে এছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না তার।
এভাবেই নদী এবং নৌকার সাথে সংগ্রাম করতে করতেই রেজ্জেক ভাইয়ের দিন চলে যাচ্ছিল। আসলে আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে, যারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। রেজ্জেক ভাই ছিল এমনই একজন মানুষ।
আজ রবিবার, প্রতিদিনের মতো আজ ও আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সব কিছুই ঠিক ছিলো, কিন্তু যখন আমার চাচতো ভাইয়ের মুখ থেকে শুনলাম রাজ্জাক ভাইয়ের খেঁয়া নৌকাটা এম ভি টিপু( এম ভি টিপু ছিল ঢাকা-মাদারীপুর লাইনের লঞ্চে) লঞ্চের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে গেছে, তখন আমার সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। খবরটা শোনার সাথে আমি নদীর ধারে চলে আসলাম। আমার বাড়ি থেকে দশ মিনিটের মতো সময় লাগে নদীর ধারে আসতে কিন্তু সেদিন মনে হয় আমি চোখের পলকেই নদীর পাড়ে চলে এসেছিলাম। এসে দেখি লোকজন এদিক সেদিন ছুটো ছুটি করতেছে। প্রথমে আমি জানার চেষ্টা করলাম যে, নৌকায় কে কে ছিলো, সবার কি অবস্থা? জানতে পারলাম যে নৌকায় প্রায় ৬-৭ লোক ছিল, সবাই পাড়ে উঠতে পারলে ও রাজ্জেক ভাই এবং আমার এক চাচাকে (রোকন) পাওয়া যাচ্ছে না। মূলতঃ পুরো খেঁয়া নৌকাটাই লঞ্চের নিচ ডুবে গিয়েছিল। সবাই সাঁতরে পাড়ে আসতে পারলে ও রেজ্জেক ভাই কিন্তু লঞ্চের নিচে পড়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরে রোকন চাচাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেলে ও রেজ্জেক ভাইকে পাওয়া যাচ্ছেই না। রোকন চাচার বাম হাতের অর্ধেক লঞ্চের পাখায় কেটে গেছে।
Copyright free image source:pixabay
এদিকে আমরা জাল ফেলে, নৌকা নিয়ে ডুবুরি দিয়ে যে যার মতো করে রেজ্জেক ভাইকে খুজতে লাগলাম। খুজতে খুজতে বিকাল চারটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরেই পাওয়া গেলো রেজ্জেক ভাইয়ের নিথর দেহ। দেখেই বুঝা যাচ্ছিল যে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু দানব লঞ্চ, পানির স্রোত এবং বয়সের কাছে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি। চলে যেতে হয়েছে এই দুনিয়ায় মায়া ছেড়ে।
আমাদেরকে সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদেরকে আমরা চিনি না, যাদের অঢেল ধনসম্পদ নেই, মানুষকে দানখয়রাত করতে পারে না তবুও তারা যুগ যুগ ধরে তাদের কর্ম দিয়ে বেঁচে থাকে আমাদের অন্তরে। আমাদের সমাজে এমন হাজারো রেজ্জেক ভাই আছে যারা আমাদেরকে নিরবে নিরবে অনেক কিছুই দিয়ে কিন্তু আমরা আমাদের শুভ দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে দেখি না, কিন্তু তারা যখন আমাদের ছেড়ে চলে যায় তখন আমরা বুঝতে পারি যে তারা আমাদের সমাজের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই আমাদের উচিৎ সমাজের এই সব মানুষগুলোকে সময় বুঝে মূল্যায়ন করা।
নৌকা ডুবির ঘটনাটি পড়ে খুব খারাপ লাগছিল। সবাই বেঁচে গেলেও নৌকার মাঝি আর বাঁচার সম্ভব হয়ে ওঠে নাই😥😥। ঠিক বলেছেন কিছু কিছু মানুষের অটল সম্পত্তি না থাকলেও তার ব্যবহার কাজকর্মে আমাদের সবার কাছে পরিচিত হয়ে যায় ।সবার প্রিয় ব্যক্তি হয়ে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit