মোবাইল ফোন আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটা যোগাযোগের মাধ্যম । বর্তমান বিশ্বকে মোবাইল ছাড়া কল্পনায় করাই দায়। আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের দৈনন্দিন কথা বলা বা যোগাযোগ করার জন্য আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। আমাদের প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি সেটা ঠিক আছে, কিন্তু কখনো কখনো আমরা অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বলি বা ভিডিও দেখি বা গেমস খেলি যা আমাদের ব্রেনের জন্য অনেক ক্ষতিকর। মোবাইল আমাদের জন্য যতটা ক্ষতিকর তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে আমাদের শিশুদের জন্য।
আমরা প্রায় সময় বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে থাকি।
Copyright free image source :Piaxabay
যে কারণে আমাদের শিশুদের হাতে আমরা মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছিঃ
১. শিশুরা খেতে না চাইলে আমরা তাদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে তাদেরকে খাইয়ে থাকি।
২. শিশুরা পড়তে না চাইলে আমরা তাদের সামনে মোবাইল দিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে থাকি।
৩. শিশু কান্না করলে আমরা তাদের কান্না থামানোর জন্যে তাদের সামনে মোবাইল দিয়ে থাকি, যেন তারা মোবাইলে আকৃষ্ট হয়ে কান্না না করে।
৪. এমন হয় যে আমরা কাজ করছি কিন্তু শিশুকে দেখার কেউ নাই এমতাবস্থায় আমরা অনেকে শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে আমরা আমাদের কাজ সেরে নিচ্ছি।
৫. শিশুরা স্কুল বা মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছেনা এমতাবস্থায় আমরা তাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে তাদেরকে মাদ্রাসা বা স্কুলে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে তুলছি।
৬. অনেক সময় আমরা অভিভাবকরা বিভিন্ন অজুহাতে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছি, যেমন আমরা টিভি দেখতেছি এমন সময় শিশুরা কান্না করতেছে, এমতাবস্থায় তাদের কান্না থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে আমরা নির্বিঘ্নে টিভি দেখছি।
৭. এছাড়াও শিশুরা বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গেম খেলছে, কার্টুন দেখছে, মুভি দেখছে, বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিও দেখছে টিক টক দেখছে। এতে করে শিশুরা মারাত্মকভাবে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।
Image source: TECNO Pouvoir 4
মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণে আমাদের শিশুরা যে সকল সমস্যায় পতিত হচ্ছেঃ
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে আমাদের শিশুরা বিভিন্ন ধরনের জটিল জটিল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, এসব সমস্যার কারণে আমাদের শিশুরা কঠিন কঠিন রোগ এবং মানসিক সমস্যায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
১. মোবাইল ফোনে আসক্তি হওয়ায় কারনে আমাদের শিশুরা বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছে। যেমন তারা দিনরাত যে কার্টুন বা ভিডিও দেখছে ঘুমের ঘরে ও তারা সেই ভিডিও বা কার্টুনের মতো অঙ্গ ভঙ্গি করে থাকে।
২. শিশুরা যেহেতু এখনো কোমল এবং বাড়ন্ত সেহেতু তাদের নরম মস্তিস্কে ব্যাপকভাবে মোবাইলের প্রভাব পড়ে।
৩. মোবাইলে আসক্তির কারণে শিশুরা লেখা পড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। লেখাপড়ার থেকে তারা মোবাইলেই বেশি সময় ব্যয় করে থাকে।
৪. মোবাইল ফোনে বিভিন্ন গেম বা এ্যাকশন মুভি বা কার্টুন দেখার কারনে তারা স্কুলে বা সমাজে কিংবা বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম জড়িয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বন্ধুদের সাথে মারামারি, বাজে আড্ডা এবং বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়া।
৫. মোবাইলে আসক্তির কারণে আমাদের শিশুদের ঘুমের অনেক সমস্যা হয়, যে সময়টা তারা ঘুমাবে ঐ সময়ে তারা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, যার কারণে তারা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা মোবাইল দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
৬. মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকার কারণে অনেক সময় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও বা ছবি চলে আসে, যেগুলো থেকে শিশুরা খারাপ দিকে প্রভাবিত হতে পারে।
৭. অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি হওয়ার কারণে শিশুদের চোখের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখে ঝাপসা দেখ, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
৮. মোবাইল আসক্তি হওয়ার কারণে শিশুদের বিভিন্ন রোগ, যেমন ব্রেনের টিউমার, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে।
Copyright free image source :Piaxabay
মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে শুধু যে শিশুদের সমস্যা হবে এমন চিন্তা করা ঠিক নয়, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে আমরা যারা বড়, তাদের ও অনেক অনেক সমস্যা হতে পারে, যেমন আমি যখন অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করি তখন আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং মাথা ব্যথা করে। মোবাইল ব্যবহারে শিশুদের পাশাপাশি আমাদেরও সতর্ক হতে হবে।
কারণে অকারণে আমরা শিশুদের হাতে কখনো মোবাইল তুলে দেব না। শিশুদের প্রতি আমরা সবাই যত্নশীল হবো, তাই শিশুদের কে আমরা মোবাইল ফোন থেকে বিরত রাখবো এবং মোবাইলের খারাপ খারাপ দিকগুলো তাদের সামনে তুলে ধরব।
প্রতিটা মা-বাবাকেই শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাদের শিশুদের হাতে কখনোই আমরা মোবাইল ফোন তুলে দিব না।
প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ স্কুল-মাদ্রাসা সব জায়গায় শিশুদের মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে।
ঠিক বলেছেন আপনি প্রতিটা বাবা মাকে শিশুদের মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। এখন শিশুরা মোবাইল ফোন গেমস এর দিকে বেশি ব্যবহার করছে। তাই মোবাইল ফোনের ভালো দিক ব্যবহার করার জন্য বাবা মাকে গাইড লাইন দিতে হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit