বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা একটি গল্পঃ দালাল(পঞ্চম খন্ড)

in hive-129948 •  2 years ago 
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি ও ভালো আছি ইনশাআল্লাহ। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি “দালাল” গল্পের পঞ্চম খন্ড। বন্ধুরা এই খন্ড থেকেই শুরু হয়েছে গল্পের ট্রাজেডি। সবাই পড়বেন আশা করি। চলুন তাহলে শুরু করা যাক -

image.png
Copyright free image:pixels

পর্ব চারের লিংক
  • পোস্টের ক্যাটাগরিঃ ধারাবাহিক গল্প

  • পোস্টের শিরোনামঃ বাস্তব কাহিনী নিয়ে লেখা গল্প দালাল।

  • তারিখঃ ৩০ শে আশ্বিন ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দ(বাংলা)।

------সেদিনের পর জাহিদের সাথে আমার আর কথা হয়নি বা জাহিদ ও আমাকে আর ফোন দেয় নি। কিন্তু জাহিদের ভাই আসাদুজ্জামান ভাইয়ের সাথে আমার কথা হতো, আসাদুজ্জামান ভাই ও ইতালি থাকে। এদিকে জাহিদের এবারের গেমে প্রায় চল্লিশ জন লোক নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা। এই চল্লিশজন লোকের প্রাথমিক টাকার পরিমাণ প্রায় ৬০ লক্ষ্য।


এই ৬০ লক্ষ্য টাকা জাহিদ বাংলাদেশ থেকে তার ভাই মনিরুজ্জামান এবং খালাতো ভাই রেজাউলের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে সংগ্রহ করে। এই কারণে টাকাগুলো মনিরুজ্জামান ভাই এবং রেজাউল ভাই এর কাছেই থাকে। রেজাউল ভাই এর কাছে থাকে সামান্য পরিমাণ কিন্তু বেশির ভাগ টাকাই নেয় জাহিদের আপন ভাই মনিরুজ্জামান।

আমি আগেই বলেছিলাম মনিরুজ্জামান ভাই জাহিদের কিছু টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু আমার মা একদিন বলে যে মনিরুজ্জামান জাহিদের এত পরিমাণ টাকা আত্নসাৎ করেছে যে, সেই টাকা দিয়ে মনিরুজ্জামান এখন বাড়িতে পাকা ঘর তুলতেছে। মায়ের কথা শুনে আমি অবাক হলাম। কিন্তু মনিরুজ্জামান ভাই জাহিদের যে টাকাগুলো দিয়ে বাড়ি করতেছে সেটা কিন্তু জাহিদের বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা।

যাই হোক এবার তাহলে আসি আসল ঘটনায়, মূল ঘটনা হচ্ছে, জাহিদ যে লোকগুলো ইতালি নেওয়ার জন্য গেম করানোর জন্য প্রস্তুত নিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন ছিল জাহিদের চাচাতো ভাইয়ের আত্নীয়।

একটা সমস্যা এখান থেকেই শুরু সেটা হলো, জাহিদ ওর চাচাতো ভাইয়ের যে আত্নীয়কে ইতালিতে নিচ্ছে, জাহিদের চাচাতো ভাই ও ওই লোককে ইতালি নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওই লোক জাহিদের চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে যেতে চায়নি কারণ জাহিদের চাচাতো ভাই এর আগে কখনো লোক ইতালিতে পাঠায়নি যার কারণে ওই তার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি।

এই লোকটা তার মাধ্যমে ইতালিতে যেতে চায়নি। এই নিয়ে জাহিদ এবং তার চাচাতো ভাইদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি হয়। এবং এই বিভেদে পরোক্ষভাবে জাহিদের চাচাতো ভাইয়ের পক্ষ নেয় জাহিদের আপন ভাই মনিরুজ্জামান। কারণ মনিরুজ্জামান ভাই চিন্তা করলো এদের সাথে মিলে-মিশে কোনভাবে যদি জাহিদকে চাপে ফেলা যায়, তাহলে তার হাতে জাহিদের যে টাকা আছে এবং আগে যে টাকাগুলো সে ব্যয় করেছে বা খরচ করে ফেলছে সেগুলো তার হয়তো দিতে হবে না।

এই ভেবে মনিরুজ্জামান ভাই ভিতরে ভিতরে জাহিদের বিরুদ্ধে চাচাতো ভাইদের সাথে মিলে কাজ করতে থাকে। কিভাবে জাহিদকে ফাঁদে ফালানো য়ায় সেই চেষ্টা করতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাহিদের গেম করা নৌকা লিবিয়ার ঘাট থেকে মাফিয়াদের কাছে ধরিয়ে দেওয়া হয়। আপনারা জানেন কিনা জানিনা, লিবিয়ার ঘাট থেকে খুব সাবধানে গেম করাতে হয়, যাতে কেউ না জানে। শুধু মাত্র যারা এই গেমের সাথে জড়িত তারাই বিষয়টা জানে।

আর এখানে মাফিয়ারা সব সময় ওৎ পেতে থাকে কখন গেম হয়। এবং নির্বিঘ্নে গেম করাতে হলে এদের মাশোয়ারা দিয়ে তারপর করাতে হয়। তারপর ও এরা অনেক সময় উল্টে যায়। কেউ যদি কোন মাফিয়ার হাতে ধরা খায় তাহলে এক একজন মানুষ থেকে ওরা কম করে হলে ও দুই থেকে তিন লক্ষ্য টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়াতে হয়।

এরপর আমি গ্রামের বাড়িতে মাকে একদিন ফোন দেই তখন মা আমাকে বলে যে মাফুজ্জামানকে(জাহিদ) ও নাকি মাফিয়াদের কাছে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কোথায় আছে কেউ জানে না। মায়ের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো, তারপর একদিন জাহিদের ভাই আসাদুজ্জামান ভাইকে মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে জাহিদের কথা জিজ্ঞেস করি, আসাদুজ্জামান ভাই আমাকে যেটা জানায় সেটা শুনে আমি সত্যিই খুব মর্মাহত হই, সে আমাকে বলে সত্যিই মাফিয়ারা জাহিদকে ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পিছনে আমাদের নিজেদের লোকেরাই জড়িত আছে বলে আমার মনে হয়।

আমি জিজ্ঞেস করলাম কারা থাকতে পারে ভাই? সে তখন আমাকে বলে এটা এখন না বলি। আমি তখন বলি ওকে ভাই। আমি আবার আসাদুজ্জামান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম জাহিদের সাথে আপনার শেষ কবে কথা হয়েছে ভাই ?

ভাই আমাকে উত্তর দিলো, জুন মাসের ১৮ তারিখ জাহিদের সাথে আমার কথা হয়েছে, এবং ওটাই ছিল আমাদের কারো সাথে জাহিদের শেষ কথা। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি কথা হয়েছে ভাই? আসাদুজ্জামান ভাই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আমাকে বললো, তার সাথে জাহিদের শেষ কথা হয়েছে জুন মাসের ১৮ তারিখে, সে সময় ফোন দিয়ে জাহিদ বলেছিল ভাই আমাকে বাঁচান, মাফিয়ারা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে... এই কথা বলতে বলতে আসাদুজ্জামান ভাই কেঁদে ফেলে।
এটাই ছিল কারো সাথে জাহিদের শেষ কথা...(চলবে..….)

image.png
Copyright free image:pixels

আসলে আমাদের জীবনে টাকা পয়সার দরকার আছে কিন্তু তাই আমরা কি আমাদের জীবনের মায়া ভুলে সেই টাকা পয়সার পিছনে দৌড়াব। কখনো ই না, মনে রাখতে হবে আগে জীবন পরে অন্য সব। আসুন আমরা সবাই এই গল্প থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি।

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9W7cPw55Lb3x9bLBhqdYLAQPo6qFibvEvW21VVVgNiFmFJ92zthJGd1VHnxkUfQThW4tmjcgWc3aPJpQ8wWkN.jpeg

HFcFmHBiAeR2oP8xXotf9GhVZ2UVLfizAkm26SLD9Ksq63dTYvrrycGbUPAEdikxGD2cqVMH8heE8DJW36AaZjZ4fD6Yt6w5ks6jyrVJqR...SPKhpaGF3R77N6UCcw6tHuYvyw7YjLACEvtraNkFm1AbXaoof2ZWppk6CphcwuiCL9iHDNMmYZX8Bq4y4gXniUDWXhBKVWevHte3V4qsJQhXhen8d6ttKVvadL.png

আমি আজিজুল মিয়াঁ, আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। আমি জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে ম্যানেজার পদে কর্মরত আছি। লিখতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি ছোট বেলা থেকেই কম-বেশি লেখা-লেখি করতাম। লেখা-লেখির পাশা-পাশি আমি ঘুরতে এবং খেলা-ধুলা করতে অনেক পছন্দ করি। সময় পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। অতিরিক্ত কথা বলা এবং মিথ্যা কথা বলা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি।

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9W7cPw55Lb3x9bLBhqdYLAQPo6qFibvEvW21VVVgNiFmFJ92zthJGd1VHnxkUfQThW4tmjcgWc3aPJpQ8wWkN.jpeg

D5zH9SyxCKd9GJ4T6rkBdeqZw1coQAaQyCUzUF4FozBvW7jpbMNKdA1Swxiey857mvDu4v9YQGGGa7u8o3aSuH2T9hohoCpGA4xjXECnmqJUuaGBR4n9tutUQsJX8FzZckBvZL (1).png

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNz8uuU7jNdUdZcqn6h7peG3CH7HW4Dj4EnjdfKn9T6S1nX92sULZRaFUhpFmzY87Rh7WVkoNuC.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpz9rrJ7XyVNTSa1iNMV1HLEdGN9BVzpqr9qD8n9c6Cnsw4ig5kmwCUdZ2cXfBkqCk6bnMVXsU.png

ধন্যবাদ সবাইকে

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!