বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম, আসসালামু আলাইকুম। |
---|
হ্যালো বন্ধুরা...
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। বন্ধুরা আজ আবার নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম।
Copyright free image source:pixels
বন্ধুরা চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ
রুপাই প্রত্যন্ত গ্রামের একজন এতিম ছেলে। মাত্র ২ বছর বয়সে মা মারা গেছেন, মা মারা যাওয়ার দুই বছরের মাথায় বাবা আবার বিয়ে করে। রুপাই এই দুনিয়াতে একা, তার বয়স ৮ বছর। তার আর কোন ভাই বোন নাই। বাবা ২য় বিয়ে করলে সৎ মা আর রুপাইকে সহ্য করতে পারে না। এমনই ভাবে জীবনের সাথে কয়েক বছর যুদ্ধ করতে করতে না পেরে বাধ্য হয়ে রুপাইকে বাবার সংসার ছেড়ে চলে যেতে হয়। কিন্তু ছোট রুপাই আর কতদূর যাবে। এই দুনিয়াতে রুপাইদের আর যাওয়ার জায়গা কোথায়?
দুনিয়াতে তার আর তেমন কেউ নাই। আর যারা আছেন তারা তো আর রুপাইদের নিয়ে ভাবে না। যাই হোক শেষ পর্যন্ত রুপাইয়ের স্থান হয় বৃদ্ধ নানীর কাছে। কিছুদিন নানির কাছে থাকার পরে সেখানে ও রুপাইকে নিয়ে নানান কথা উঠে কেননা নানির তো আর নিজের ইনকাম নাই। ছেলেদের উপর নির্ভর করেই তাকে চলতে হয়। কিন্তু এই সমাজে কতজন মামা আছে যারা তার ভাগিনাদের দায়িত্ব নিবে। রুপাইয়ের মামা ও তার দায়িত্ব নেয় না।
অসহায় নানি উপায় না পেয়ে রুপাইকে কোন একটি কাজে দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলশ্রুতিতে পাশের বাড়ির রহিম মিয়ার সাথে আলাপ করে তারই পরিচিত এক লোকের দোকানে দৈনিক বেতনে রুপাইকে কাজে লাগিয়ে দেয়। রুপাই ও বাধ্য কিছু করার নাই, এই কাজে তার ইচ্ছা না থাকলেও তাকে বাধ্য হয়ে কাজে যোগদান করতে হয়। ছোট রুপাই যে বয়সে তার বন্ধুবান্ধবদের সাথে খেলা করার কথা, খোলা আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর কথা, বন্ধুদের সাথে কানামাছি কিংবা গোল্লাছুট খেলার কথা, সেই বয়সে রুপাই আজ জীবনের তাগিদে গ্রামের কোলাহল ছেড়ে শহরের কোন এক ঘিঞ্জি এলাকায় নিজেকে আবিষ্কার করে। রুপাই বঙ্গ বাজারের একটি ছোট চায়ের দোকানে কাজ নেয়।
Copyright free image source:pixels
চায়ের দোকানে ভালোই চলছে রুপাইয়ের জীবন। যতটুকু আয় হয় তাতে করে রুপাইয়ের ভালোভাবেই চলে যেত। সামনে ঈদ রুপাইয়ের চোখে মুখে হাজারো স্বপ্ন এবার ঈদে হয়তো তার নতুন জামা কাপড় কেনার মতো একটা উপায় হবে। সেই মা মারা যাওয়ার পর তার জীবনে আর ঈদের নতুন কাপড় জোটেনি। এই বছর সে নিজের টাকায় ঈদের নতুন কাপড় কিনবে। চোখে মুখে এক পাহাড় স্বপ্ন নিয়ে রুপাই তার ডিউটি করে যাচ্ছে। কিন্তু একদিন সকালে রুপাই শুনতে পায় তার কর্মস্থল বঙ্গ বাজারে আগুন লেগেছে, রুপাই অনেক কিছু না বুঝলেও এইটুকু বুঝতে পারে যে আগুন লাগলে সবকিছু পুড়ে যায়।
রুপাই আর কোন কিছু না ভেবে ঘুম থেকে উঠে সোজা তার কর্মস্থল বঙ্গ বাজারে চলে যায়। গিয়ে দেখে তার সব স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই। রুপাই অন্য কিছু না বুঝলে ও এইটুকু বুঝতে পারে যে এবার ও তার ঈদের নতুন জামা কাপড় পরা হবে না। তার মালিকের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চিন্তা করার সময় তার হয়নি বা তার মালিকের কি কি হবে সেটা চিন্তা করার সময় বা বয়স তার এখনো হয়নি।
তবে মালিক তাকে বলেছিল ঈদের দিন বাড়ি যাওয়ার আগে তাকে বেতন দিবে। রুপাই হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে। রুপাইয়েরা মান সম্মান কি সেটা বুঝে না, এরা শুধু বুঝে দু মূঠো ভাত এবং দু টুকরো কাপড় পড়ে কিভাবে বেচে থাকা যায়। রুপাই আর কিছু বলতে পারে না, শুধু কাঁদতে থাকে।
আমাদের সমাজে এমন অনেক রুপাই আছে, যাদের স্বপ্ন অনেক বড় নয়, শুধু দুধ মুঠো ভাত খেয়ে এবং দু টুকরো কাপড় পরে কোনমতে বেঁচে থাকতে চায়, কিন্তু তাদের এই সামান্য স্বপ্নগুলো ও যখন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তখন আর তাদের কিছুই করার থাকে না, তাই আসুন আমাদের সমাজে বা আশেপাশে রুপায়ের মতো এমন যারা আছে তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের পুড়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো পূরণ করি।