আসসালামু আলাইকুম |
---|
প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমি যে পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি সেটি হচ্ছে একটি প্রতিযোগিতামূলক পোস্ট, যার শিরোনাম নির্ধারণ করা হয়েছে - শেয়ার করো তোমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার বাস্তব অনুভূতি। নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে লেখা সব সময় একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার বটে। তার উপর এটি একটি প্রতিযোগিতা মুলক পোস্ট, সেক্ষেত্রে এখানে লেখা একটি কঠিন ব্যাপার, তারপর লিখতে হচ্ছে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক- |
পোস্ট ক্যাটাগরিঃ প্রতিযোগিতামূলক পোস্ট। |
---|
পোস্টের শিরোনামঃ স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি। |
তারিখঃ ১৩ আশ্বিন ১৪২৮ খ্রিস্টাব্দ(বাংলা) |
আবার স্কুল ছুটির পরে সবাই মিলে একসাথে গল্প করতে করতে বাড়িতে ফেরা, কখনো আবার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়িতে ফেরা, কখনো আবার খেয়া নৌকায় করে নদী পার হওয়া ইত্যাদি ছিলো সে সময়ের সুখস্মৃতি বা মজার অভিজ্ঞতা। এই রকম হাজারো সুখস্মৃতি রয়েছে যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না।
এই তো গেলো সুখের স্মৃতি এবার তাহলে দুঃস্মৃতি নিয়ে কিছু বলা যাক-প্রাইমারী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক বা হাইস্কুল জীবন পর্যন্ত ছোট ছোট কতো যে দুঃস্মৃতি আমার জীবনে এসেছিল সেগুলো হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। তারপর ও ছোট ছোট কিছু দুঃস্মৃতি আপনাদের সামনে তুলে না ধরলেই নয়। এই যেমন স্কুলে দেরি করে গেলে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ক্লাসের সময় দুষ্টুমি করলে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা, বাড়ির কাজ জমা না দিলে জরিমানা দেওয়া, ক্লাসের পড়া না পারলে বেতের আঘাত খাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ভানু লাল স্যারের কথা, স্যার ছিলেন আমাদের হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক, পাশাপাশি অন্য ক্লাস ও নিতেন। মজার ঘটনা হলো, আমার সেঝো চাচা মোঃ নজরুল ইসলাম মাতুব্বর ছিলেন আমার হাইস্কুলের বাংলা শিক্ষক।
আমার বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই, আমার বয়স নাকি তখন ছিলো মাত্র ছয় মাস। ভানু লাল স্যার যখনই আমার ক্লাসে ক্লাস নিতে আসতেন, তখনই আমার পেটের চামড়া ধরে চাপ দিয়ে বলতেন বল নজরুল মাতুব্বর আমার বাবা, স্যার আমার সাথে মজা করেই এমনটি করতে্ আমি বুঝতাম, আমি অনেক ব্যাথা পেতাম, স্যার বুঝতেন কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না বলতাম যে, নজরুল মাতুব্বর আমার বাবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্যার আমার পেটের চামড়া চাপ দিয়েই ধরে রাখতেন। বিষয়টা আমি অনেক উপভোগ করতাম। যাই হোক এইগুলো ছিলো মজাদার দুঃস্মৃতি। দুঃস্মৃতি বা মজার স্মৃতি ও বলা যায়।
তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং দুঃস্মৃতি বা মজার স্মৃতি কিন্তু আমার কাছে এক বিষয় না। তিক্ত অভিজ্ঞতা বলতে আমি বুঝি যে অভিজ্ঞতা মানুষকে সারাজীবন দুঃ স্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায়, যে অভিজ্ঞতা কোনদিন ও ভুলে যাওয়ার নয়। আজ আমি আমার স্কুল জীবনের এমন একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো, যে অভিজ্ঞতা আজ ও আমি ভুলতে পারিনি, সেদিনের মতোই আজ ও আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।
চলুন তাহলে শোনা যাক আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা- আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা আমি তখন প্রাইমেরী স্কুলে ক্লাস ফাইভে অথবা ক্লাস ফোরে পড়ি, আমার রোল ছিল তিন। রোল তিন মানে তো মোটামুটি ভাল ছাত্র ই হওয়ার কথাই। হ্যা আমি স্বীকার করছি রোল তিন মানে ভালো ছাত্র। কিন্তু এটা ও তো সত্যি যে ভালোর ও কিছু খারাপ বা না পারার অনেক কিছু থাকে। তেমনি একটি না পারা ছিল আমার সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মুল কারণ। আমার চাচা, মানে আমার চার নাম্বার চাচা, যাকে আমরা নোয়া চাচা বলে ডাকি, নাম ছিলো আব্দুস ছালাম মাস্টার। আব্দুস ছালাম মাস্টার মানে ছিল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আতংক। না কোন খারাপ দিকের আতংক না, সেটা হচ্ছে তার ক্লাস করতে হলে অবশ্যই পড়া শিখে তারপর ক্লাসে আসতে হবে, না হলে উপায় নাই, আবার পড়া হয় নাই বলে স্কুলে বা ক্লাসে আসবে না, এই রকম ও করা যাবে না।
যাই হোক, আব্দুস ছালাম স্যার একদিন আমার অংক ক্লাস নিতে আসলেন,
এই অবস্থা দেখে আমার অবস্থা ও খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আমি ভিষন নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে যেটুকু বলতে পারতাম তাও আর পারবো না। যাই হোক চার-পাঁচজনের পরে আমার কাছে আসলো এবং আমাকে পড়া জিজ্ঞেস করতে আমি ও ঠিক মতো উত্তর দিতে পারলাম না, ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হলো আমার উপর জিদটা আরও বেশি মেটালেন, এক নিশ্বাসে যতটা আঘাত করা যায় আমার মনে আমাকে ততোটাই আঘাত করেছে। স্যারের আশা ছিলো আমি হয়তো আজকে পড়া শিখে আসছি এবং আমি আজকে পড়া পারবো, কিন্তু আমি ও যখন পারিনি তখন স্যার জিদ করে আর কাউকেই পড়া জিজ্ঞেস করেনি কিন্তু এখানেই শেষ না, শর্ত দিলেন আজ কেউ পড়া শেষ না করে বাড়িতে যেতে পারবে না। কি আর করার স্যারের শর্ত মতো আমরা সবাই পড়তে শুরু করলাম। আমার সমস্যাটা অনেক বেশি ছিল কারণ সে ছিল একদিকে আমার স্যার, অন্যদিকে আমার কাকা।
কাকার ঘর ও ছিলো আমাদের ঘরের পাশেই। সুতরাং আমি আরও চিন্তা করতেছি আজকের পড়া না পারার ব্যাপারটা যদি বাড়িতে বলে দেয়, তাহলে মা এবং মেঝ ভাই দুই জনের হাতেই আবার মার খেতে হবে। এই ভেবে মনস্থির করলাম যে যাই কিছুই হোক না আজকে পড়া শেষ না কিছুতেই বাড়ি যাওয়া যাবে না। তাই আমি ডান-বাম চিন্তা না করে শুধু পড়তে লাগলাম। আজকে বিকেল পাঁচটা বেজে যাচ্ছে, ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে। চোখে শরষে ফুল দেখছি ।মনে হচ্ছিল আজকে যদি একবার স্কুল থেকে যেতে পারি তাহলে জীবনে আর কোনদিন ও স্কুলে আসবো না, এর চেয়ে বরং বড় ভাইয়ের সাথে হালচাষ করবো সেটা ও এর চেয়ে অনেক ভালো হবে।
কিন্তু কিছু করার নাই পড়া শেষ করেই যেতে হবে। নরমলি আমাদের বিকেল পাঁচটায় ছুটি কিন্তু আজ সোয়া পাঁচটা বেঁজে গেলে ও ছুটি দিচ্ছে না। এরই মধ্যে স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন এবং একে একে সবার পড়া ধরলেন, এবার কিন্তু সবাই মোটামুটি সঠিক উত্তর দিতে পারলো। আমি ও এবার খুব ভালো মতই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সবার পড়া আদায় করেই স্যার আমাদের ছুটি দিলেন। এই ছিলো আমার স্কুল জীবনের সবচেয়ে তিক্ত ঘটনা।
ঘটনাটা বেশ তিক্তকর হলেও আমার জন্য কয়েকটি বিষয় এখানে শিক্ষনীয় ছিল সেটা হলোঃ
- চেষ্টা করলে আসলে অনেক কিছুই সম্ভব।
- যে কোন ক্ষেত্রে শুধু ছাড় দিলেই হয় না, কখনও কখনও শাসন ও করতে হয়।
- সব শিক্ষকরাই ফাঁকিবাজ হয় না।
- শিক্ষকরা চাইলেই পড়া আদায় করে নিতে পারে।
- ছাত্র-ছাত্রীদের ও শেখার আগ্রহ থাকতে হবে।
- একজন ভালো শিক্ষক সব সময়ই ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গল কামনাই করে থাকেন।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা এই ছিলো আমার স্কুল জীবনের কোন তিক্ত অভিজ্ঞতার বাস্তব অনুভূতি। আসলে তখন মনে হয়েছিল এটা অনেক তিক্ত ছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সেই তিক্ত কিছু অনুভূতিই আজ আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। আমাদের জীবনে এমন অনেক বাস্তব অনুভূতি আস্তেই পারে সেটাকে সব সময় নেগেটিভলি নিলে হবে না।একটা ঘটনার ভালো-মন্দ উভয় দিকই চিন্তা করতে হবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমার পরিচয় |
---|
ধন্যবাদ সবাইকে |
---|