ঢাকা টু নীলফামারী ট্রেন জার্নি ||

in hive-129948 •  10 months ago 

আসসালামু আলাইকুম/আদাব

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ভালোই আছি। আজ আমি আরেকটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আজ আমি আপনাদের মাঝে ঢাকা টু নীলফামারী ট্রেন জার্নি সাথে বাসায় আসার চমৎকার অনুভূতি শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। তো চলুন বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক।

IMG_20240403_170639.jpg

আমার ভার্সিটিতে শেষ ক্লাস ছিল ৩ তারিখ। তিন তারিখ দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত আমার ক্লাস ছিল। আমি ট্রেনের টিকিটও কেটে ছিলাম তিন তারিখ। আমি ২ তারিখ রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। ৩ তারিখ সকালে উঠে গোসল করে ভার্সিটি চলে যাই, ২ তারিখ ঢাকায় প্রচন্ড গরম পড়েছিল। ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ হওয়ার পরে আমি বাসায় এসে আবারো গোসল করি ও ব্যাগ নিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
ঈদ উপলক্ষে ৩ তারিখ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত নীল সাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়বে। ট্রেন দুটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন যাবে না ও বিমানবন্দর স্টেশন থামবে না। সেদিন বাসে প্রচুর ভিড় ছিল ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠার মত অবস্থা ছিল না, তাই একটি সিএনজি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন যাই। ট্রেনের সময় ছিল বিকেল ৫ টা ১৬ মিনিট। আমি পাঁচটা বাজার ১০ মিনিট আগেই স্টেশনে পৌঁছে যাই। ট্রেনটি পাঁচটার আগেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। আমি ও আমার দুই বন্ধু একই সাথে টিকিট কেটেছিলাম তারাও এর মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসে। আমরা যেয়ে নিজেদের আসল গ্রহণ করি। শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে সেমিস্টার এর মাঝে ঈদের ছুটিতে বাসায় যাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম। ট্রেনটি যখন আসে তখন অনেক ভালো লাগা কাজ করে এটা ভেবে যে বাসায় যাচ্ছি।

IMG_20240403_165701.jpg

ট্রেনটি জাস্ট সময়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। কালকেও বাইরে ওয়েদার অনেক গরম ছিল কিন্তু আমাদের টা স্নিগ্ধা বগি হাওয়ায় এসি ছিলো তাই একটু আরাম করেই যাওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরেই ট্রেনটিতে একটি মহিষ কাঁটা পড়ে এবং ট্রেনটি থামানো হয়। আশেপাশে একদম অনেক ভিড় হয়ে যায়। যেখানে প্রায় ট্রেনটি এক ঘন্টারও বেশি সময় দাঁড়ানো ছিল। এরপর যখন মহিষটিকে যখন ট্রেনের লাইন থেকে বের করা হয় তখন আবারো ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে।

IMG_20240403_175518.jpg

IMG_20240403_180439.jpg

ট্রেনটি টাঙ্গাইল পর্যন্ত ভালোভাবেই যায় কিন্তু টাঙ্গাইলে যেয়ে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ক্রসিং এ ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল। দুইটি ট্রেন টাঙ্গাইল অতিক্রম করে এরপর আমাদের ট্রেনটি আবার যাত্রা শুরু করে। আমরা ট্রেনের মধ্যেই ইফতারি সেরে ফেলি। এরপর যমুনা সেতু পর্যন্ত কোন সমস্যা ছিল না কিন্তু যমুনা সেতুর পার হওয়ার আগে আবারও ক্রসিংয়ে পড়ে। এখানেও প্রায় এক ঘন্টারও বেশি সময় ক্রসিংয়ে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ক্রসিং শেষ হলে ট্রেনটি যমুনা সেতু অতিক্রম করে।

IMG_20240403_223102.jpg

ট্রেনটি যদি জাস্ট টাইমে নীলফামারী পৌঁছাতো তাহলে আমরা সেহেরির আগেই বাসায় থাকতে পারতাম অর্থাৎ বাসায় এসে সেহেরি করতে পারতাম কিন্তু শুরুতেই মহিষ কাটা পড়ে সেখানে অনেকক্ষণ সময় ব্যয় হয় আবার ট্রেন ক্রসিং এ অনেকটা সময় লেগে যায়। যেখানে ঢাকা থেকে নাটোর যেতে ট্রেনে ৪ ঘন্টা লাগে সেখানে বিকেল পাঁচটার ট্রেন রাত ১২ টা ৩৬ মিনিটে নাটোরে পৌঁছায়। আর যেখানে সেহরির আগে আমাদের বাসায় পৌঁছার কথা সেখানে সেহরির সময় পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে পৌঁছায়। পার্বতীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিন চেঞ্জ হয় তাই এখানে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের একটি বিরতি নেওয়া হয়। ততক্ষণে সেহরির সময় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রেনে তখন কোন সেহেরী বা ট্রেনের বাইরে কিছু পাইনা। তাই পাউরুটি আর কলা দিয়ে সেহরি করে নেই। এরপর পার্বতীপুর জংশন থেকে ট্রেনটা আবার যাত্রা শুরু করে। পার্বতীপুর এর পরের স্টেশনে ছিল সৈয়দপুর এবং তারপরের স্টেশনটি ছিল নীলফামারী। আমরা যেই তিনজন একসাথে যাচ্ছিলাম তাদের মধ্যে একজন সৈয়দপুরে নামবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সৈয়দপুর স্টেশন পৌঁছে যাই এবং সে নেমে যায়। সৈয়দপুর স্টেশন থেকে নীলফামারী স্টেশন যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে।
অবশেষে ভোর পাঁচটায় প্রায় ১২ ঘন্টা জার্নি শেষে ট্রেনটি নীলফামারী স্টেশনে পৌঁছায়। মনে তখন ভীষণ ভালোলাগা কাজ করছিল। নিজের শহরের আলো বাতাসেই যেন এক আলাদা শান্তি। নীলফামারী এসে অনেক বেশি ভালো লাগছিল। আমরা নীলফামারী স্টেশনে আমি। এবং সেখান থেকে একটি রিক্সা নিয়ে আমি বাসার দিকে আসি। নীলফামারী স্টেশন থেকে আমাদের বাসা খুব বেশি একটা দূরে না রিকশায় প্রায় ১০ মিনিটের মত লাগে। অবশেষে ১২ ঘন্টা জার্নি শেষে বাড়িতে ফিরে খুবই ভালো লাগছিলো। আমরা যারা বাসা থেকে দূরে থাকি তারাই বুঝতে পারব ঈদের সময় বাড়িতে ফেরার কি অনুভূতি।

IMG_20240404_034702.jpg

IMG_20240404_034612.jpg

আজকের মতো এখানেই। এতক্ষণ ধরে মনোযোগ দিয়ে আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দেখা হবে অন্য একটি ব্লগে ততক্ষণে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

IMG-20230608-WA0000.jpg

আমি আল হিদায়াতুল শিপু। বর্তমানে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর একজন ছাত্র । আমি ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। আমি ভ্রমণ করতে অনেক পছন্দ করি। আমি মাঝে মাঝে কবিতা ও লিখি। আমার লেখা কবিতা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা পত্র পত্রিকা এবং মেগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। কাব্যকলি বইতেও আমার লেখা কবিতা রয়েছে।




New_Benner_ABB.png


🌼ধন্যবাদ🌼

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আপনি বেশ চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট শেয়ার করছেন। আসলে ট্রেনের মধ্যে ভ্রমণ বা কোথাও গেলে খুবই ভালো লাগা কাজ করে।তবে মহিষটি কাটা যাওয়ার পরেই মনে হয় সেখানে বেশি দেরি করে ফেলছে।যাইহোক এটা ঠিক যে বাইরে কোথাও থাকলে আর ছুটি পেরে বাসায় যাওয়ার জন্য মনটা অনেক ছটফট করে।আপনি বেশ লম্বা একটা ট্রেনে জার্নি করছেন।ধন্যবাদ ভাই এতো সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টটি পড়ে এতো সুন্দর একটি মন্তব্য শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

ভাই আপনার পোস্ট দেখে জানতে পারলাম ঈদ সামনে তাই এখন খুবই ভিড়। তবে ট্রেনে জার্নি করা সহজ কারণ বেশী জ্যামে থাকতে হয় না। তবে ট্রেন জার্নি করতে করতে দেখতে পেলাম এবং আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম আপনি ইফতারি করেছিলেন ট্রেনের ভিতরে বসে। বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

আমার পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার অনেক ভালো লাগলো। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে এতো সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

আসলে নিজের শহরের, নিজের এলাকার আলো বাতাস চোখে দেখার সাথে সাথে দেহের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে মনের মধ্যে এক ভালোলাগা সৃষ্টি হয়ে যায়। দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণ করার পরে নিজের এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে মনে আনন্দ অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। ১২ ঘন্টা জার্নি শেষ করে সুস্থ ভাবে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন এটা জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগলো ভাই। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Posted using SteemPro Mobile

আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাই আসলে নিজের শহরের, নিজের এলাকার আলো বাতাস চোখে দেখার সাথে সাথে দেহের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে মনের মধ্যে এক ভালোলাগা সৃষ্টি হয়ে যায়। অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

প্রায় ১২ ঘন্টা জার্নি করে অবশেষে নীলফামারী পৌঁছে গেলেন। ভার্সিটি বন্ধ দেওয়ার পরপরই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। ট্রেনে তো দেখছি ভালোই ভিড় ছিল সেদিন। ঈদে নিজ বাড়িতে ফেরার অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।

আসলেই ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দটাই অন্যরকম।

Posted using SteemPro Mobile

এই সমস্ত জার্নি বিষয়ক পোস্ট আমার খুবই ভালো লাগে। কারণ এখানে অনেক কিছু জানতে পারা যায় একজনার অভিজ্ঞতা অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি আপনি বিস্তারিত উপস্থাপন করেছেন ঢাকা থেকে নীলফামারীতে জার্নি করার মুহূর্তর বিষয় নিয়ে। আর এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বেশ অনেক কিছু জানতে পারলাম।

আমার পোস্টের মাধ্যমে বেশ কিছু জানতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

নিজের শহরে পা রাখলে যেন আলাদা রকমের একটা ভালো লাগা কাজ করে। এটা আমিও খেয়াল করে দেখেছি। যাএাপথে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দেখছি আপনাকে। প্রথমে মহিষ কাটা পড়েছে এবং দ্বিতীয়ত ক্রসিং। এই ক্রসিং টা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর লাগে। দীর্ঘ ১২ ঘন্টার জার্নি শেষে ঈদ কাটাতে নিজের শহরে।

Posted using SteemPro Mobile

আপনি ঠিক বলেছেন ভাই নিজের শহরে পা রাখলে যেন আলাদা রকমের একটা ভালো লাগা কাজ করে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আমার পোস্টটি পড়ে আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

ট্রেন জার্নি করতে বেশ ভালোই লাগে আমার কাছে।আমিও বেশ কয়েকদিন আগে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর এসেছি ট্রেনের মাধ্যমে।ট্রেন জার্নি একটি সুবিধাজনক জার্নি। আপনারা তিন বন্ধু এক সাথে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বাসায় এসেছেন। আসলে বন্ধু বান্ধবদের সাথে ট্রেন জার্নি করতে একটু বেশি ভালো। আপনারা তিনজন খুবই সুন্দর ভাবে ট্রেন জার্নি করে বাসায় পৌঁছেছেন। এটা দেখে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগলো।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে এতো সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile