পুরাণের গল্প : "রাজা মনু ও মৎস্যাবতার" - পর্ব ০৫

in hive-129948 •  8 months ago 

maxresdefault.jpg
Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source


[বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত কাহিনীটি পৃথিবীর সব প্রধান ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে । তবে, ধর্মগ্রন্থ ভেদে কাহিনীর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও এর মূল ঘটনা বিন্যাস এবং কাহিনীর আড়ালে মূল ধর্মীয় বার্তা কিন্তু একই ।]


এই বলে বিষ্ণু আগত মহাপ্লাবন থেকে মনুসহ সৃষ্টির সকল জীবকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বিশদে ব্যক্ত করলেন । তিনি বললেন -

"হে ব্রহ্মাপুত্র, তুমি আজই রাজপ্রাসাদে ফিরে গিয়ে সারা রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ছুতোরদের খবর দাও । প্রকান্ড একটা নৌকো তৈরী করার প্রয়োজন এই সাত দিনের মধ্যে । এই নৌকার প্রতিটা কাষ্ঠখন্ড তুমি অবশ্যই স্পর্শ করে তারপরে ছুতোর মিস্ত্রি দিয়ে নৌকা তৈরী করা শুরু করবে । এর অন্যথা কখনোই করো না । তোমার স্পর্শ ভিন্ন এই নৌকো কখনোই সেই প্রলয়ংকর বন্যা থেকে রক্ষা পাবে না । তুমি নিজে ছুতোর মিস্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ে এই বিশালকায় নৌকো নির্মাণ করবে । সপ্তম দিবসে তুমি এই নৌকোয় তোমার পরিবার পরিজন, সপ্ত ঋষি, এই পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর একটা করে জোড়া আর সকল উদ্ভিদের বীজ নিয়ে আরোহন করবে । প্রলয় শুরু হওয়ার আগেই যেন তুমি নৌকায় আরোহন করতে পারো সে ব্যাপারে নিশ্চিত করবে । আর প্রলয় কালে যদি কখনো বিপদে পড়ো তবে আমাকে স্মরণ কোরো। আমিই তোমাদের সকলকে রক্ষা করবো ।"

এইরূপে শ্রীবিষ্ণুর কাছ থেকে আসন্ন মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় জ্ঞাত হয়ে রাজা আর কালবিলম্ব করলেন না । তিনি বিষ্ণুকে প্রণাম করে সেই মুহূর্তে রাজধানীতে ফিরে গেলেন । মহারাজ মনু রাজধানীতে ফিরেই নিজের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সেই দিনই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেরা সেরা ছুতোর মিস্ত্রি ডেকে নিয়ে এলেন । আর কালক্ষয় না করে সেই দিন থেকেই এক বিশাল নৌকো তৈরিতে কাজে লেগে পড়লেন । একদল লোক লাগিয়ে দিলেন বিশাল বিশাল কাষ্ঠখন্ড নিয়ে আসার জন্য, প্রতিটা কাষ্ঠখন্ডে শ্রীবিষ্ণুর নাম স্মরণ করে স্পর্শ করলেন মনু । এরপরে ছুতোর মিস্ত্রি আর মজুরদের সাথে মিলে একসাথে শুরু করে দিলেন সেই বিশালাকায় নৌকো নির্মাণ ।

এই ভাবে দিন রাত একটি মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম না নিয়ে সাত দিনের মধ্যে বিশালকায় এক নৌকো নির্মাণ করে ফেললেন মহারাজ মনু । সপ্তম দিবসে নৌকো তৈরী শেষ হওয়া মাত্রই প্রকৃতিতে শুরু হলো এক ভীষণ বৈরীতা । আকাশ ছেয়ে গেলো ভীষণদর্শন কৃষ্ণকালো মেঘে । বাতাসের বেগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে লাগলো । নদী আর সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে উঠলো, বিশাল বিশাল পর্বত প্রমাণ ঢেউয়ের সৃষ্টি হলো মহাসমুদ্রের বুকে । মহাপ্রলয়ের সূচনা ।

মনুর নৌকা নির্মাণের কাজ চলেছিল এক পাহাড়ের শীর্ষদেশে । নৌকো নির্মাণ শেষ হওয়া মাত্র রাজা নিজের পরিবার পরিজন, মন্ত্রীদের আর সভাসদদের নৌকোতে আরোহনের আদেশ দিলেন । এরপরে মনু সপ্ত ঋষিদের করজোড়ে নৌকায় ওঠার অনুরোধ করলেন । ঋষিরা সবাই নৌকায় ওঠার পর রাজা এক টানা ছয় দিন ধরে সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় উদ্ভিদের বীজ আর সকল প্রাণীদের স্ত্রী-পুরুষের একটা করে জোড়া নৌকোয় তুললেন ।

এই ছয় দিন ক্রমাগত আবহাওয়া ভয়ানক রুদ্ররূপ ধারণ করতে লাগলো । বৃষ্টি আর হাওয়ার বেগ ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেলো । সমুদ্রের জল অনেক উঁচু হয়ে তীরবর্তী অঞ্চল গ্রাস করে ফেললো । নদী উপচে জল স্থলভাগে ঢুকে পড়লো । পাহাড় প্রমান সব ঢেউ সমুদ্রের বুকে জন্ম নিলো। সমুদ্র ধীরে ধীরে পুরো ধরিত্রীকে গ্রাস করতে উদ্যত হলো ।

মনুর সেই মহাকায় নৌকো সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে অবস্থান করার জন্য তখনো সেখানে সমুদ্রের জলে প্লাবিত হতে পারেনি, তবে শীঘ্রই প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিলো । সকল জীবের জোড়া আর সকল উদ্ভিদের বীজ নৌকায় তোলার পর সপ্তমদিনে মনু স্বয়ং সেই মহা নৌকায় আরোহণ করলেন । ততক্ষণে সমগ্র পৃথিবী মহাপ্লাবনে তলিয়ে গিয়েছে । মনুর নৌকার চারিপাশেই এখন দিগন্তবিস্তৃত শুধু উত্তুঙ্গ ঢেউয়ে ভরা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সমুদ্র ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সেই বিশাল নৌকায় সবাই আরোহণ করতে পেরেছে, এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। রাজা মনু বিষ্ণুর কথামতো সবকিছু করেছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

হয়তো এই বিশাল ঝড় থেকে রক্ষা করবে, সেই মৎস রূপী বিষ্ণু। ভাই, এখন বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা কিছুটা হলেও। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।