Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source - Wikimedia
মোমোতারোদের গাঁ যে দ্বীপে সেই দ্বীপ ছাড়িয়ে অল্প কিছুদূর দূরেই বিশাল সমুদ্র । আর এই সমুদ্রের ঠিক মধ্যিখানে ছিল একটা ক্ষুদ্র দ্বীপ । এই দ্বীপকে আশেপাশের সকল দ্বীপের মানুষজন বিশাল ভয় পেতো । কারণ, এই দ্বীপে থাকতো দুর্ধর্ষ দস্যুদল । নাম তাদের "ওনি"। এই ওনিরা ছিল ভয়ানক নিষ্ঠুর দস্যু । দয়ামায়া বলতে কিচ্ছু ছিল না তাদের হৃদয়ে । সারাবছর ধরে লুঠ-তরাজ, অপহরণ আর খুন-খারাপিতে মত্ত থাকতো তারা । এই কারণে আশেপাশের সকল দ্বীপের মানুষজন ওনিদের "ওগ্রেস" বা দানব হিসেবে ডাকতো ।
ওনি দস্যু দল যে দ্বীপে আস্তানা গেঁড়েছিলো সেই দ্বীপকে সবাই "অনিগাশিমা" বলে ডাকতো । জাপানি ভাষায় এর অর্থ "ডেমন আইল্যান্ড" অর্থাৎ, দানবের দ্বীপ । দ্বীপটি যেমন দুর্গম ছিল ঠিক তেমনই দ্বীপের অভ্যন্তরে ওনি দস্যুদের দুর্গ ভীষণ অভেদ্য ছিল । তাই বারেবারে রাজার সৈন্যরা এই দ্বীপে ব্যর্থ সামরিক অভিযান চালিয়ে এখন ক্ষান্ত দিয়েছে । আর দস্যুদের অত্যাচারের মাত্রাও তাই এখন ভয়ানক হারে বেড়ে গিয়েছে ।
এখন হয়েছে কী এতকাল ধরে দস্যুরা মোমোতারোদের দ্বীপের দিকে নজর দেয়নি । একে তো ক্ষুদ্র দ্বীপ, তার ওপর দ্বীপের কেউই তেমন ধনী নয়, লুণ্ঠনকার্যে তাই তেমন কোনো লাভও হবে না । এই কারণে এতকাল ধরে ওনিরা এই দ্বীপকে এড়িয়েই চলেছে । কিন্তু, সম্প্রতি দস্যু সর্দারের প্রাসাদে সুন্দরী মেয়েদের দাসী হিসেবে বন্দী করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে, আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস - মোমোতারোদের দ্বীপেই সব চাইতে বেশি সংখ্যক সুন্দরী মেয়ে বাস করে । এই কারণেই হঠাৎ ওনি দস্যুদের নজর পড়লো মোমোতারোদের দ্বীপের ওপর ।
মোমোতারো যে কয়েক মাস শহরে ছিল অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য সেই কয়েকমাসের মধ্যে মোমোতারোদের ছোট্ট গাঁ সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গাঁয়ে দস্যুরা হানা দিলো । অনেকগুলি সুন্দরী মেয়েকে বন্দিনী করে তাদের সাথে করে নিয়ে গেলো তারা । সর্দারের প্রাসাদে ক্রীতদাসী হিসেবে তাদের চালান করে দেওয়া হলো ।
গাঁয়ে ফিরে মোড়লের মুখে এই ভয়ানক মর্মান্তিক দুঃসংবাদ পেলো মোমোতারো । এই অপহৃত মেয়েদের মধ্যে মোড়লের দুই মেয়েও ছিল । আর ছিল মোমোতারো ছোটবেলার খেলার সঙ্গীদের বোনেরা । গাঁয়ের ঘরে ঘরে ক্রন্দন রোল উঠেছে, শুনতে পেলো মোমোতারো । ভয়ানক দুঃখ পেলো সে ।
সেই রাতেই বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে মোমোতারো ঠিক করলো সে ওনিদের দ্বীপে হানা দিয়ে অপহৃত মেয়েদের উদ্ধার করবে । বাবা-মা তাকে আশীর্বাদ করলো তার এই অভিযানের কথা শুনে ।
পরের দিন ভোরেই গাঁয়ে নেমে মোমোতারো সবাইকে তার অভিযানের কথা বললো । গাঁয়ের শক্ত সমর্থ যুবকদেরকে একত্রিত করে তার সাথে ওনিদের বিরুদ্ধে অভিযানে যেতে বললো মোমোতারো । শুনে সবাই শিউরে উঠলো । কী সর্বনাশ ! ওনি ? তারা তো সাক্ষাৎ মৃত্যদূত । রাক্ষস তারা । রাক্ষসদের সাথে মানুষ কীভাবে যুদ্ধে এঁটে উঠবে । এ যে অসম্ভব কথা বলছে মোমোতারো !
মোমোতারো গাঁয়ের এই সব ভীতু যুবকদের প্রতিক্রিয়া দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো । একজনও এগিয়ে এলো না । দানবদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কে আর জীবন খোয়াতে চাইবে ? ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি ফিরে এলো মোমোতারো ।
রাত্রে খাওয়ার পর ঘরের বাইরে বসে রাতের তারাজ্বলা আকাশের দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো মোমোতারো । তারপরে সে একাই দস্যু ওনিদের দ্বীপে যাবে বলে মনঃস্থির করে ফেললো । আশেপাশের গাঁয়ের মানুষদের মধ্যে যেমন আতঙ্ক দেখেছে সে তাতে কাউকে সঙ্গী করে নিয়ে গেলে উল্টে হাঙ্গামায় পড়ে যাবে সে । কারণ তারা যদি দস্যুদের দ্বীপে গিয়ে চরম আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে দেয়, তখন সে তাদের সামলাবে নাকি দস্যুদের সাথে লড়াই করবে !
ভেবে ভেবে তাই সে একা যাওয়াই স্থির করলো ।
[ক্রমশঃ]
মোমোতারো একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওনিদের দ্বীপে গ্রামের কাউকে নিয়ে গেলে আরও ঝামেলা বাড়বে। আশা করি মোমোতারো তার গ্রামের মোড়লের দুই মেয়ে সহ, বাকি সকল মেয়েদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মোমোতারো র সাহসিকতাকে স্যালুট জানাই, অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit