Copyright Free Image Source: Pixabay
এইরূপে ব্যাঘ্রটিকে বন থেকে বিতাড়িত করে সিংহরূপী মূষিক মনে মনে বিশাল পুলক আর গর্ব অনুভব করলো । সে বুঝতে সক্ষম হলো অবশেষে সে জঙ্গলের সব চাইতে শক্তিশালী জানোয়ারে রপান্তরিত হতে পেরেছে । এখন থেকে বনের আর কোনো জীবকে সমঝে চলার প্রয়োজন হবে না । সে হলো পশুরাজ সিংহ । এই বনভূমির একচ্ছত্র অধিপতি সে ।
তার পরের বেশ কয়েক'টা মাস বড় সুখে কাটলো মূষিকের । ব্যাঘ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে তার বিক্রম দেখে তাকে সমগ্র বনভূমির রাজা বলে মেনে নিয়েছে জঙ্গলের ছোট-বড় সকল জানোয়ার । সে এখন রাজা । কিন্তু, মুনির কাছে রাজধর্ম, ন্যায়ধর্ম ও প্রজাপালন সম্পর্কে সে যেসব জ্ঞানার্জন করেছিল তার সবটাই সে এখন বিস্মৃত হয়েছে । কোনো কিছুরই ধার ধারে না সে । ক্রমে স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা ছাড়ালো । প্রত্যেকটা জঙ্গলেরই কিছু অলিখিত আইন-কানুন থাকে, তাকে মেনে চলে বনের সকল জীব । কিন্তু, মূষিক সেসব আইন কানুনের বড় একটা তোয়াক্কা করে না । ফলে, অতি দ্রুত জঙ্গলের সকল পশুপাখির জীবন বিষময় হয়ে উঠলো ।
রাজার অত্যাচার আকাশ ছুঁলো, তথাপি জঙ্গলের পশুপাখি কিছুই করতে পারলো না । তারা অসহায়, শক্তিশালী আর ক্ষমতাবানের সাথে এঁটে ওঠা তাদের কম্ম নয় । এই অত্যাচারের কথা ক্রমে ক্রমে মুনির কান পর্যন্ত পৌঁছলো । তিনি মূষিকের প্রতি ভয়ানক রুষ্ট হলেন ।
একদিনের কথা । এই ঋষির মিত্র আর এক ঋষি একদিন দণ্ডকারণ্যে উপনীত হলেন, তাঁর ইচ্ছা বহুদিন পর নিজের মিত্রের সাথে সাক্ষাৎ করা । বনপথে তিনি যখন মুনির আশ্রমে আসছেন তখন ঠিক সেই পথ দিয়ে পশুরাজ সিংহরূপী মূষিক যাচ্ছিলো কোথাও । পশুরাজকে দেখে সেই ঋষি কিছুমাত্র ভীত না হয় অবহেলাভরে তাঁকে পাশ কাটিয়ে গেলেন । এই রূপ আচরণে পশুরাজ অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে পুনরায় পিছন ফিরে ঋষিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, "হে ঋষিবর এ আপনার কেমন আচরণ ? আমি এই জঙ্গলের রাজা, আপনি আমাকে অবহেলাভরে উপেক্ষা করে গেলেন ? জানেন এই অপরাধ আর অশিষ্টতার জন্য আমি আপনাকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারি ?"
শুনে ঋষিবর ঈষৎ বক্র হাস্য করে বললেন, "হে পশুরাজ, আপনি তো পশুরাজের দেহে এক ক্ষুদ্র মূষিক । একটা ক্ষুদ্র মূষিক থেকে আমার মিত্রের করুনায় ও দয়ায় আপনি আজ পশুরাজ সিংহে পরিণত হয়েছেন । কিন্তু, আমি তো যোগবলে সকলই অবগত আছি । তাহলে কেন আমি একটি ক্ষুদ্র মূষিককে অভিবাদন করতে যাবো ? এটা তো আমার জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর কাজ ।"
এই কথা শ্রবণ করা মাত্র মুহূর্ত মধ্যে মূষিকের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো । অন্তর দুঃখে আর বেদনায় পূর্ণ হয়ে গেলো। "হায় হায় ! ঋষিটা বলে কি ? তাকে সিংহের মূর্তিতে দেখেও মূষিক বলে চিনতে পেরেছে । তবে তো সর্বনাশ । নিশ্চয়ই আমাদের আশ্রমের ঋষি সবাইকেই বলে বেড়াচ্ছে আমার কথা । হায় ! হায় ! কী সর্বনাশ !! তবে তো শীঘ্রই দুনিয়াশুদ্ধ মানুষ জেনে যাবে যে আমি পশুরাজ সিংহ হলেও আসলে একটি ক্ষুদ্র মূষিক ভিন্ন আর কিছুই নই, তখন তো সবাই আমাকে ওই রূপ অবহেলা করবে ।"
এই কথা ভাবতে ভাবতে সিংহ সেই পথের মধ্যেই ভয়ে দুর্ভাবনায় একদম বসে পড়লো । কী করবে এখন সে ?
[ক্রমশঃ]
সিংহে পরিণত হওয়া মূষিক তো ঋষির কোনো কথাই রাখলো না। সে তার আসল রূপ ঠিকই দেখালো জঙ্গলের পশু পাখিদেরকে। আসলে অল্প পানির মাছ, বেশি পানিতে গেলে যা হয় আর কি। শেষমেশ ঋষির সাথে ভাব দেখাতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলো মূষিক। মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই মূষিক আবার ইঁদুরে পরিণত হবে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এখন তো আমার মনে হচ্ছে, এই মূষিক রূপি সিংহ হয়তো , সেই ঋষির কোন ক্ষতি করতে চাইবে। অপেক্ষায় রইলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit