Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source - Wikimedia
রোজকার মতো বুড়ো বাজার থেকে ফিরতেই দেখে বুড়ি ঘরের দোরটিতে তার অপেক্ষাতেই হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে । বুড়ির হাসিমুখ দেখে বুড়ো বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই কোনো ভালো সংবাদ আছে । তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে খুশির ঘটনা বড় একটা ঘটে না তো কোনোদিন । বুড়োর বুকেও তাই উত্তেজনার মৃদু কম্পন উঠলো । দ্রুত পায়ে সে বুড়ির কাছে চলে এলো । আর বুড়ি হাসিমুখে তার হাত ধরে টেনে একদম খাওয়ার টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো ।
যেই পীচ ফলটা দেখা ওমনি বুড়ো খুশির চোটে একটা চিৎকার দিলো । তারপরে পীচ ফলটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো । কী সুন্দর ফলটা ! একদম টসটসে পাকা, কী বড় আর কী সুন্দর তার মিষ্টি ঘ্রাণ ! বুড়োর আর আনন্দ ধরে না । খুশির চোটে খাওয়ার ঘরেই বুড়ো-বুড়ি একটুখানি নেচে নিলো । তারপরে বুড়ি একটা ফল কাটার ছুরি আর বড় একটা প্লেট এগিয়ে দিলো বুড়োর দিকে ।
বুড়ো ফলটি একটা নীচু কাঠের পাটাতনের উপর রেখে সেটাকে ছুরি দিয়ে টুকরো করে কাটতে গেলো । কিন্তু, যতবারই সে ফলের গায়ে ছুরি বসাতে যায় ততবারই ফলটা এক পাক গড়িয়ে যায়, ফলের গায়ে ছুরির একটা আঁচড়ও পড়ে না । এমন অদ্ভুত ব্যাপার দেখে বুড়ো-বুড়ি দু'জনেই একদম হতবাক । এ কী কান্ড ! এমন অদ্ভুত ফল তারা জীবনে দেখা তো দূরে থাকুক শোনেওনি কোনোদিন ।
বুড়ি তখন আর একটা লম্বা আর ভারী ছুরি এনে দিলো বুড়োকে আর বললো, "এবার কোপ বসাও তো দেখি কেমন ফল কাটে না ।"
বুড়ো যেই কোপ মারতে যাবে হঠাৎ, পীচ ফলটি আপনাআপনি ফেটে একদম দু'টুকরো হয়ে গেলো । আর কী আশ্চর্য ! যেমনি সেই পীচটি ফেটে দু'টুকরো হলো সঙ্গে সঙ্গে একটা মোটাসোটা গোলগাল ফর্সা টুকটুকে শিশু বেরিয়ে এলো পীচ থেকে।
বিস্ময়ে একদম থ হয়ে গেলো বুড়ো-বুড়ি । এ কী অলৌকিক ঘটনা ! ক্ষণপরে তারা বুঝতে পারলো এ হলো তাদের প্রতি দেবতার অসীম কৃপা । তাঁরই দয়াতে এতকাল পরে তারা একটি সন্তান লাভ করলো । এ শিশু তাদেরই । বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে গভীর মমতায় শিশুটিকে কোলে তুলে নিলো ।
এত বড় খুশির দিন আজ অব্দি বুড়ো-বুড়ির কাছে আসেনি কখনো । আজ থেকে তারা এক পুত্র সন্তানের পিতা-মাতা । আনন্দের চোটে বুড়ি-বুড়ির দু'চোখে অশ্রু টলমল করতে লাগলো । তারা বারংবার দেবতার উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করলো । আজ যেন বুড়ো-বুড়ির নবজন্ম হলো ।
পরম মমতায় বুড়ো-বুড়ি শিশুটিকে মানুষ করতে লাগলো । আগে যে বুড়ো-বুড়ি প্রায় সমস্তটা দিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াতো তারাই এখন নেহাৎ খুব দরকার না পড়লে আর বাইরে বের হয় না। তাদের সারাটা দিনই কেটে যায় শিশুটিকে নিয়ে ।
দিন যায় শিশুটি বড় হতে থাকে । ছেলেটির যেমন বলিষ্ঠ গঠন তেমনই তার বুদ্ধি । গর্বে বুড়ো-বুড়ির বুক ফুলে ওঠে । ছেলের কি নাম রাখবে তারা ভেবে পায় না । শেষমেশ দু'জনে যুক্তি করে নাম রাখলো "মোমোতারো" । জাপানে পীচ ফলকে বলে "মোমো", আর জাপানিদের মধ্যে পরিবারের বড় ছেলেকে ডাকা হয় "তারো" বলে । ছেলেটিকে তো পীচ ফলের ভিতর থেকেই পাওয়া, আর সে হলো বুড়ো-বুড়ির একমাত্র পুত্র সন্তান, অর্থাৎ তাদের পরিবারের বড় ছেলে সেই ।
সেই থেকে বুড়ো-বুড়োর বড় আদরের সন্তানের নামকরণ হলো "মোমোতারো" ।
[ক্রমশঃ]
আসলেই সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবকিছুই করতে পারেন। যাইহোক বুড়া বুড়ির দিকে সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আশা করি এভাবেই তাদের পুত্র সন্তান মোমোতারো বড় হয়ে উঠবে। পরবর্তী পর্ব পড়ার আগ্রহ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখে আপনি আমাদের শেয়ার করেছেন। আসলে এরকম গল্প গুলো পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। আজকে আপনার লেখা গল্পটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন একটি গল্পের রাজ্যে আমি পরিবেশ করেছি। যাহোক উক্ত গল্পের পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সন্তান নামকরণের ব্যাপারটি জেনে বেশ ভালো লাগলো ভাই, অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit