পুরাণের গল্প : "রাজা মনু ও মৎস্যাবতার" - পর্ব ০৪

in hive-129948 •  7 months ago 

maxresdefault.jpg
Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source


[বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত কাহিনীটি পৃথিবীর সব প্রধান ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে । তবে, ধর্মগ্রন্থ ভেদে কাহিনীর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও এর মূল ঘটনা বিন্যাস এবং কাহিনীর আড়ালে মূল ধর্মীয় বার্তা কিন্তু একই ।]


বহু রাজকর্মচারী বহু লোক লাগিয়ে বহু ব্যয় এবং বিস্তর মেহনত করে অবশেষে সেই বিশালায় মৎস্যকে সমুদ্রের জলে অবমুক্ত করতে সক্ষম হলো । রাজপ্রাসাদ থেকে সমুদ্র অল্প কিছুদূরে অবস্থিত হওয়াতেই এটা সম্ভবপর হয়েছিল । নতুবা, কী যে হতো তা বলা যায় না ।

মহারাজ মনু যখন সেই বিশালকায় মৎস্যকে সমুদ্রের জলে মুক্ত করলেন তখন করজোড়ে সেই মৎস্যের কাছে তার পরিচয় ভিক্ষা করলেন । মৎস্যের মুখগহ্বর থেকে বিষ্ণু শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম হস্তে আবির্ভূত হলেন । বিশালকায় জোত্যির্ময় সেই বিষ্ণুমূর্তি দেখে মনু ভগবান বিষ্ণুর স্তব করতে লাগলেন । মনুর স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তখন তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, "হে ব্রহ্মাপুত্র মনু, আমি বিষ্ণু, এই মৎস্য আমার অবতার । আমি জগতে মৎস্যাবতার রূপে পরিচিত হবো । ব্রহ্মার চতুর্বেদ "হয়" নামক ঘোড়ামুখী এক দুর্দান্ত অসুর চুরি করে মহাসমুদ্রের মাঝে লুকিয়েছে । আমি তাকে বধ করে সেই বেদ উদ্ধার করার জন্য মৎস অবতার ধারণ করেছি ।"

মনু তখন অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে বিষ্ণুকে নমস্কার করে শুধালেন, "হে ভগবান ! আপনার দর্শন পেয়ে আমি ধন্য । কিন্তু, প্রভু এক ক্ষুদ্র মৎস্যরূপে প্রকট হয়ে এই ক'দিন এই দীন ভক্তের সাথে প্রভুর এমন লীলা করার অর্থ এখনো আমার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না ।"

তখন বিষ্ণু মৃদু হেসে বললেন, "মনু, আমি তোমার ধর্মজ্ঞান, পরোপকার গুণ আর শরণাগতকে রক্ষার শাস্ত্রীয় ন্যায়নীতির বিচারের জন্য এরূপ করেছি । তুমি সেই বিচারে সসম্মানে উত্তীর্ন হয়েছো । হে ব্রহ্মাপুত্র, আমি তোমার উদারতায় অত্যন্ত প্রীত হয়েছি । তাই আমি তোমাকে রক্ষা করবো । হে মনু, শ্রবণ করো । আজ থেকে ঠিক সাত দিন পর সাত দিন সাত রাত ধরে একটানা অবিরল ধারায় বর্ষণ হবে ধরায় । এক প্রলংয়কর বন্যা আসবে পৃথিবীতে । সমুদ্র ফুলে ফেঁপে উঠবে । ধরিত্রীর কোথাও একটুকরো জমিও আর জলের উপরে থাকবে না । সেই মহাপ্লাবন সমস্তই গ্রাস করে নেবে । "

এই কথা শ্রবণ করে খুবই ভীত হয়ে পড়লেন মহারাজ । তিনি প্রচুর উৎকণ্ঠিত হয়ে ব্যগ্রস্বরে বিষ্ণুকে শুধালেন, "হে প্রভু, এই মহাপ্লাবন যদি সমস্ত সৃষ্টিকে গ্রাস করতে উদ্যত হয় তবে তার থেকে বাঁচার কি উপায় ? আপনি কি আমাকে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতের শিখরদেশে চলে যেতে আদেশ করেন ?"

বিষ্ণু তখন মৃদুহাস্য করে বললেন, "হে মনু, এই মহাপ্লাবন কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই । যদি থাকতো তবে এ কথা শুধাতে না । এই মহাপ্লাবনের প্রবল জলোচ্ছাসে হিমালয়সহ পৃথিবীর সকল গিরি-পর্বত জলের অতলে তলিয়ে যাবে ।"

"তবে ? এ থেকে কী বাঁচার কোনো উপায় নেই ? সমস্ত সৃষ্টি কী তবে ধ্বংস হয়ে যাবে ? হে প্রভু, আপনি আমাদের পালনকর্তা । আপনিই আমাদের রক্ষা করুন ।"

মনুর কাতর বাক্য শ্রবণ করে বিষ্ণু তাঁকে আশ্বাস প্রদান করে বললেন, "মনু, আমি তোমার ধর্মজ্ঞানে অত্যন্ত তুষ্ট হয়েছি । তাই আমি তোমাকে রক্ষা করবো । আমি শুধু তোমাকে যে উপদেশ দেব তুমি তা শ্রবণ করে সেই মতো কার্য্য করে যাও । নিশ্চয়ই তুমি সফল হবে । হে ব্রহ্মাপুত্র, তুমি ভীত হয়ো না । তুমি যেমন আমারুপী সেই ক্ষুদ্র মৎস্যকে রক্ষা করেছিলে আমিও ঠিক তোমাকে সহ সকল যাবতীয় সৃষ্টিকে রক্ষা করবো । তুমি উতলা হয়ো না । আমার উপদেশ শ্রবণ করো ।"

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

রাজা মনু মাছটিকে সমুদ্রের পানিতে অবমুক্ত করে আসলেই মহান একটি কাজ করেছে। উপকার করলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাইতো মহাপ্লাবন থেকে বিষ্ণু রক্ষা করবে রাজা মনুকে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

পুরাণের গল্পের চতুর্থ পর্বটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। প্রত্যেকটি পর্ব যেন গল্পটি অত্যন্ত জমজমাট হয়ে উঠছে। আশা করি আগামী পর্বে উক্ত গল্পের আরো আকর্ষণীয় কোন কিছু জানতে পারবো। অত্যন্ত চমৎকার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

ভাই, গল্পটি এবার কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি। কেননা এরকম একটা ধর্মীয় গল্প বিগত সময়েও কিছুটা শুনেছিলাম। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।