Copyright Free Image Source: Pixabay
সিংহরূপী মূষিক অনেক তলিয়ে ভেবে বুঝতে পারলো সে সকল কিছুর মুলে রয়েছেন ওই ঋষি । তিনি মূষিককে সিংহে রূপান্তরিত করেছেন তা বেশ করেছেন, কিন্তু সেই কথা এখন তাঁর মিত্রগণের কাছে উল্লেখ করছেন কেন ? এর ফলস্বরূপ আজ ঋষির মিত্রগণ সত্যটা অবগত হবেন, আর কাল দুনিয়াসুদ্ধ সকল মানুষ জেনে যাবেন । তা এতেও মূষিকের তেমন কিছু আসে যায় না । কারণ মানুষের সাথে তার কিছুমাত্র কারবার নেই । কিন্তু, এইভাবে সকলে সত্য অবগত হতে থাকলে তো একদিন এই বনের সমুদয় জীব-জন্তুও সব কিছু অবগত হয়ে যাবে ।
আর তখন ? হায় ! হায় ! কী হবে তখন ? জঙ্গলের সকল পশু-পাখি যদি জেনে যায় যে তাদের রাজামশাই আসলে এক ক্ষুদ্র মূষিক ভিন্ন আর কেউ নয় তবে তো লজ্জায় মাথা কাটা যাবে তার । কী ভাবে আর মুখ দেখাবে তখন সে ? কেউ-ই তো তাকে আর বনের রাজা বলে মান্য করবে না । সকলে উপহাস আর বিদ্রূপ করবে । হা হতোস্মি ! আর কি তখন বেঁচে থাকা যাবে ? অপমানের চাইতে মৃত্যু অধিকতর শ্রেয় ।
এই রূপ সকলদিকে চিন্তা ভাবনা করে মূষিক দেখলো যে যত নষ্টের গোড়া ওই ঋষি । ওকে সরিয়ে দিতে পারলেই তার পথ নিষ্কন্টক হয় । একবার যদি সে ঋষিকে এই ধরাধাম থেকে সরিয়ে দিতে পারে তবে সে কিরূপে আর মূষিক থেকে সিংহে পরিণত হওয়ার কাহিনী সকলকে বলতে পারবে ? মৃত মানুষ কথা কয় না ।
অতএব, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলো পশুরাজ । তারপরে বিপুল বিক্রমে ছুট লাগলো ঋষির আশ্রমের দিকে । প্রতিহিংসার আগুনে আজ তার চোখ ধিকিধিকি জ্বলছে । ঋষির মস্তক সে আজ চূর্ন করবেই করবে ।
আশ্রমের মূল ফটক দিয়ে এক রকম দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো পশুরাজ । আশ্রমে ঢুকেই সে দেখতে পেলো দুই ঋষি আশ্রমের আঙিনায় একটি গাছের ছায়ায় বসে গল্প করছেন । দেখা মাত্রই দৌড়ে সে সেদিকে গেলো । ঋষি তাঁর মিত্রের সাথে কথা বলা থামিয়ে বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলেন সিংহরূপী সেই মূষিকটি এদিকে ছুটে আসছে ।
সিংহটি একদম ঋষির কাছাকাছি এসে উচ্চস্বরে এবং যথেষ্ঠ কর্কশ সুরে বলে উঠলো, "এই যে ঋষিবর, তুমি তোমার মিত্রকে বলেছো যে আমি নাকি আগে মূষিক ছিলাম, আর তুমি নাকি আমাকে সিংহে পরিণত করেছ ? এই মিথ্যা কথা কেন ওকে বলেছো ? আমি এই বনের রাজা, তোমার কাছে এর উত্তর জানতে চাই ।"
ঋষি বিস্ময়বিজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন, "হে অকৃতজ্ঞ মূষিক, তুই সত্যই এক ক্ষুদ্র মূষিক ভিন্ন আর কিছুই নোস । আমিই তোর কাতরবাক্যে তোর জীবন রক্ষার্থে প্রথমে তোকে মার্জারে, তারপর মার্জার থেকে বন্য কুকুরে, বন্য কুকুর থেকে চিতাবাঘে, আর সবশেষে চিতাবাঘ থেকে সিংহে রূপান্তরিত করেছি । আজ তুই সব অস্বীকার করলি ? তোর চিরকালই মন্দ স্বভাব, তুই জঙ্গলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিস । এক্ষুনি তুই এই জঙ্গল থেকে দূর হয়ে যা ।"
মুনির এই কথা শুনে পশুরাজ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো । সে তক্ষুণি মুনির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্যোগ করতে করতে বললো -
"রে অর্বাচীন, তুই বনের রাজাকে অপমান করেছিস । এই গুরুতর, ক্ষমার অযোগ্য পাপের একটাই দন্ড বিধান করছি আমি - "প্রাণদন্ড" । তুই, তোর মিত্র ওই ঋষি আর তোর আশ্রমের সমস্ত শিষ্যগণকে আজ আমি হত্যা করবো ।"
এই বলে যেই সিংহ তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে সেই মুহূর্তে ঋষি তাঁর কমণ্ডলু থেকে পবিত্র বারি সিঞ্চন করলেন সিংহরূপী মূষিকের মস্তকে, আরো সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন -
"পুনর্মূষিক ভবঃ"
অর্থাৎ, "আবার তুই ইঁদুর হ" ।
মুহূর্ত মধ্যে উল্লমফনরত পশুরাজ অতিকায় সিংহ থেকে আবার মূষিকে পরিণত হয়ে গেলো । আশ্রমের সেই যে হুমদো বেড়ালটি ছিল সেটি এতক্ষণ দুরু দুরু কম্পিত বক্ষে গাছের ডালে বসে এই ঘটনাক্রম চাক্ষুষ করছিলো । পশুরাজের মূষিকে পরিণত হওয়া দেখে সে সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকেই ঝাঁপ দিলো । একদম মুষিকের ঘাড়ের ওপরে । তার পর মুহূর্ত মধ্যে কচমচ করে চিবিয়ে গিলে ফেললো মূষিককে । শত্রুর শেষ রাখতে নেই ।
পশুরাজ, থুড়ি মূষিকের উচিত শিক্ষা হলো ।
[সমাপ্ত]
এরকম অকৃতজ্ঞ এবং অহংকারী মূষিকের শেষ পরিণতি এটাই হওয়ার ছিলো। সেজন্যই বলা হয় অহংকার পতনের মূল। শেষ পর্যন্ত মূষিকের জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো। যাইহোক এই গল্পের সবগুলো পর্ব বেশ উপভোগ করেছি। আশা করি নতুন কোনো গল্প নিয়ে শীঘ্রই হাজির হবেন আমাদের মাঝে। সেই অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যেদিন থেকে গল্পটি শুরু হয়েছিল, সেদিন থেকে প্রতিটা পর্বই পড়েছিলাম। অকৃতজ্ঞদের আসলে এমনটাই হওয়া উচিত ভাই। গল্পের মাধ্যমে দারুণ একটা বার্তা দিয়েছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit