পুরাণের গল্প : "রাজা মনু ও মৎস্যাবতার" - পর্ব ০১

in hive-129948 •  7 months ago 

maxresdefault.jpg
Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source


[বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত কাহিনীটি পৃথিবীর সব প্রধান ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে । তবে, ধর্মগ্রন্থ ভেদে কাহিনীর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও এর মূল ঘটনা বিন্যাস এবং কাহিনীর আড়ালে মূল ধর্মীয় বার্তা কিন্তু একই ।]


সত্যযুগে এই পৃথিবীতে মনু নামক এক রাজা পৃথিবী শাসন করতেন । তিনি ছিলেন মানুষের পূর্বপুরুষ, আদি মানব, সপ্তম মনু । রাজা মনু ও রানী শতরূপার সন্তান সন্ততিরাই মানব নামে পরিচিত । মনু প্রতিদিন অতি প্রত্যুষে উঠে নদীতে সূর্য বন্দনা ও স্নান সমাপন করতে যেতেন ।

এইরূপে একদিন মহারাজ মনু নদী বক্ষে অবগাহন কালে একটি অতি ক্ষুদ্র মৎস্য তাঁর করপুটে উঠে এলো । রাজা হাতের তালুতে রেখে মৎস্যটিকে একটুক্ষণ নিরীক্ষণ করলেন । মৎস্যটির গায়ের রং উজ্জ্বল স্বর্ণ বর্ণের, শরীরের তুলনায় মস্তক আর পুচ্ছ বৃহৎ, কিন্তু মৎস্যটি আকারে অতিশয় ক্ষুদ্র ।

তখন রাজা নদীর জলে আবার মাছটিকে ছেড়ে দিতে উদ্যত হলেন । আর তখনই সূর্যের মতো সোনালী রঙের ঝলমলে সেই ক্ষুদ্র মৎস্য ঠিক মানুষের মতো গলায় বলে উঠলো, "হে রাজন, আপনি আমাকে আশ্রয় দিন । আমি অতিশয় ক্ষুদ্র এক মৎস্য । এই নদীর জলে অতি বৃহৎ বৃহৎ মৎস্যের বাস । তারা আমাকে গিলে খেয়ে ফেলবে । আমি আপনার শরণাগত । আর শাস্ত্রে আছে যে শরণাগতকে জীবন দিয়ে হলেও আশ্রয়দান এবং তার জীবনরক্ষা করা উচিত কর্ম ।"

ক্ষুদ্র মৎস্যের এইরূপ শাস্ত্রীয় জ্ঞান এবং মানুষের মতো কণ্ঠে কথা বলতে দেখে রাজা ভারী চমৎকৃত হলেন । তিনি নিজের কমণ্ডলুতে করে মাছটিকে রাজবাড়িতে নিয়ে এলেন । রাজবাড়িতে এনে অপর একটি স্বর্ণ নির্মিত কমণ্ডলুতে মাছটির ঠাঁই হলো । এরপরে রাজা রাজসভায় চলে গেলেন ।

পরের দিন প্রত্যুষে রাজা নদীতে স্নান করতে গিয়ে হঠাৎ, পূর্বদিনের ক্ষুদ্র মৎস্যের কথা তাঁর স্মরণ হলো। তিনি তো সেই ক্ষুদ্র মাছটির কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন । স্নান সেরে রাজবাড়িতে ফিরেই তাই সর্বাগ্রে রাজা মনু চললেন কমণ্ডলুতে রাখা সেই সোনালী রঙের ক্ষুদ্র মাছটিকে দেখতে ।

কমণ্ডলুতে উঁকি দিয়ে তিনি যা দেখলেন তাতে তাঁর চক্ষু পুরো চড়কগাছ । গতকালের সেই অতিশয় ক্ষুদ্র মাছটির আকার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে এখন এত বড় হয়েছে যে কমণ্ডলুতে তার আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না । গতকাল অব্দিও যে মৎস্যকে হাতের তালুতে রেখে খুব ভালো করে নিরীক্ষণ না করলে তাকে দেখাই যেত না আজ সে হাতের তালুর চাইতেও অধিক বড় আকার ধারণ করেছে ।

মৎস্যের এইরূপ অলৌকিক ক্রিয়া দেখে সহসা মহারাজ মনু স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

"রাজা মনু ও মৎস্যাবতার"চমৎকার গল্পের প্রথম পর্বটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে এ ধরনের গল্পগুলো পড়া শুরু করলে একটানা গল্প পড়ে যেতে ইচ্ছে করে। যাহোক আপনার এই গল্পের দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

বাহ্! দারুণ তো। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ক্ষুদ্র মাছটির আকার এতটা বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল। গল্পটি পড়ে আসলেই খুব ভালো লাগলো। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

আবারও নতুন গল্প, বিশ্বাস করি এ গল্পের মাঝেও কোন বার্তা থাকবে, প্রথম পর্বটি একদম চোখের পলকেই পড়ে ফেললাম, অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।