পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০৬

in hive-129948 •  8 months ago 

book-794978_1280.jpg
Copyright Free Image Source: Pixabay


গত বারের ন্যায় এবারো ঋষি কমণ্ডলু থেকে পবিত্র জল ছিটিয়ে দিলেন বন্য কুকুর রূপী মূষিকের মস্তকে । তারপরে নিম্ন স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করলেন । ধীরে ধীরে কুকুরের দেহে পরিবর্তন শুরু হলো । তার দেহ আগের চাইতেও আরো দীর্ঘ আকার ধারণ করলো । পা গুলি আগের চাইতে দীর্ঘ আর শক্তিশালী হয়ে উঠলো । কুন্ডলীকৃত লাঙ্গুল চাবুকের মতো দীর্ঘ আর কঠিন ইস্পাতের মতো পেশীযুক্ত হলো । মুখের আকার ক্রমশ গোলাকৃতি হয়ে মাটির হাঁড়ির ন্যায় প্রকান্ড আকার ধারণ করলো । হরিদ্রাভ সারা গায়ে কালো চিত্রিত বুটিকে ছেয়ে গেলো । মুখের দু'পাশ থেকে উঁকি দিলো ভয়ঙ্কর সূঁচালো চারটি দীর্ঘ শ্বদন্ত ।

ধীরে ধীরে বুনো শিকারী কুকুর থেকে মূষিক প্রকান্ড এক চিতাবাঘে পরিণত হলো । তখন তার আর আনন্দ দেখে কে ? মাটিতে চার পা টানটান করে মাথাটা একটু নিচু করে প্রকান্ড লেজটা আছড়াতে আছড়াতে সে মৃদু একটা গর্জন ছাড়লো । তার সেই মৃদু গর্জনেই মুনি বাদে আশ্রমের সবাই ভয়ে কাঠ হয়ে গেলো ।

চিতাবাঘ বনে যেতেই মূষিকের আর এক দন্ড মুনির আশ্রমে থাকতে মন চাইলো না । সে একবার মাত্র মুনির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানালো, আর তারপরেই প্রকান্ড কয়েকটি লাফ মেরে আশ্রম ছেড়ে বনের গভীরে প্রবেশ করলো ।

এখন সে নিজেকে রাজাই ভাবতে পারে । জঙ্গলের রাজা সে । কারও ক্ষমতা নেই তার মোকাবেলা করে । জঙ্গলে প্রবেশ করে তার প্রথম কাজই হলো সেই চিতাবাঘটিকে খুঁজে বের করা যাকে দেখে সে ভয়ে পালিয়েছিলো । খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে ঝর্ণার ধারেই তার খোঁজ মিললো । আর বলা নেই কওয়া নেই এক প্রকান্ড লাফ মেরে তার ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়লো চিতাবাঘরূপী মূষিক । তার প্রকান্ড আর দীর্ঘ শক্তিশালী দেহের সাথে কোনোক্রমেই যুঝে উঠতে পারলো না বনের চিতাবাঘটি । সে আহত অবস্থায় খোঁড়াতে খোঁড়াতে সে স্থান দ্রুত ত্যাগ করলো ।

জঙ্গলের বাঘকে এ ভাবে পালাতে দেখে অত্যন্ত হৃষ্ট হলো মূষিক । এবার থেকে চিরকালের মতো নিঃশঙ্ক হলো সে । আজীবন এ বনে সে রাজা হয়েই থাকবে । কিন্তু, অদৃষ্ট আড়াল থেকে মুচকি হাসলো । বিশ্বসংসারে কার জীবন কিভাবে কাটবে তা আসলে কখনই বলা যায় না । আজ যে রাজা, কাল তার গরীব হওয়া কোনো অসম্ভব কিছু না ।

মাস ছ'য়েক পরে একদিন এই কথাটি হাড়ে হাড়ে টের পেলো মূষিক । তার সীমাহীন অত্যাচারে জঙ্গলের পশুপাখি অতিষ্ঠ ছিল । এবার বুঝি তার থেকে পরিত্রাণ মিললো ।

যে চিতাবাঘটি পরাজিত হয়ে আহত অবস্থায় বন ত্যাগ করেছিল সে দণ্ডকারণ্য ছেড়ে নৈমিষারণ্যে গিয়ে সেই জঙ্গলের রাজার কাছে কেঁদে ফেললো । নৈমিষারণ্য জঙ্গলের রাজা সব কিছুর শ্রবণ করে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হলো । তার প্রকান্ড শরীর রগে ফুলে উঠলো, প্রকান্ড শক্তিশালী লেজটা মহা আক্রোশে মাটিতে বারংবার আছড়াতে লাগলো । দণ্ডকারণ্যের অত্যাচারী মূষিককে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য নৈমিষারণ্যের রাজা একদিন দন্ডকারণ্যে প্রবেশ করলো ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বিশ্বসংসারে কার জীবন কিভাবে কাটবে তা আসলে কখনই বলা যায় না ।

এই কথাটি একদম যথার্থ বলেছেন। বিশ্ব সংসারে কারোর কোন স্থান নির্ধারিত করা নেই চিরস্থায়ীভাবে। কেবলমাত্র স্রষ্টা ব্যতীত। আর ধনী এবং রাজা বলতে কিছুই স্থায়ী নয় যেকোনো সময় যেকোনো কারোর স্থান পরিবর্তন হতে পারে। ঠিক যেমনটা মুসিক এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। আর অত্যাচার করলে কখনো তার ফল ভালোরূপে ফিরে আসে না। চিতাবাঘরুপি মূষিক এর অত্যাচার হয়তো তুলনামূলক ভাবে বেড়ে গিয়েছিল যার দরুন হয়তো পরবর্তী পর্বে আমরা দেখতে পারবো তার শেষ পরিণতি কি হয়। হয়তোবা পুনরায় তাকে মুনির আশ্রমে যেতে হবে পুনরায় জঙ্গলের রাজার কাছে হেরে গিয়ে। ধন্যবাদ আপনাকে দারুণ কিছু কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

সেজন্যই বলা হয়ে থাকে অহংকার পতনের মূল। কখনোই কোনো কিছু নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। মূষিককে এবার কেউ বাঁচাতে পারবে না। গল্পটি একেবারে শিক্ষামূলক। এই গল্পটি আমরা যদি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি,তাহলে অবশ্যই জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবো। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

এবার যে মূষিক এর কপালে দারুণ খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে, তার আর বুঝতে বাকি নেই। কর্মফল মনে হয় এমনই হয়, অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।