জাপানি উপকথা : "বীর মোমোতারো" - পর্ব ০১

in hive-129948 •  8 months ago 

938px-Japanese_Fairy_Book_-_Ozaki_-_247.png

Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source - Wikimedia


সে অনেক কাল আগের কথা । ছবির মতো সুন্দর দেশ নিপ্পন । সূর্যোদয়ের দেশ । ভোরের সূর্যের প্রথম রশ্মি নিপ্পনকে ছুঁয়েই পরে ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । চারিদিক সমুদ্র দিয়ে ঘেরা সবুজ বনানীর অপূর্ব দেশ নিপ্পন । নিপ্পন আসলে অনেকগুলি দ্বীপের সমষ্টি । এমনই এক পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা অসম্ভব সুন্দর এক দ্বীপে থাকতো দুই বুড়ো বুড়ি ।

একদম জঙ্গলের ভেতরে ছোট্ট এক পাহাড়ের ঢালে এক ছোট্ট একটা কুটীরে থাকতো দু'জনে । সকাল হলেই বুড়ো জঙ্গলে গিয়ে কাঠকুটো সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে চাল, ডাল, গম, সবজি, তেল, নুন সবই কিনে আনতো । আর বুড়ি চলে যেত ঝর্ণার ধারের ছোট্ট পাহাড়ি নদীতে । বাসন-কোসন ধোওয়া, জামা-কাপড় কাচার কাজটি করেই কাঠের বালতিটি ভোরে ঝর্ণার জল নিয়ে সে বাড়ি ফিরতো ।

একদম নির্বিবাদী ঝঞ্ঝাটবিহীন দিন কাটতো তাদের । রোজ দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পাট চোকার পরে একটু বেলা গড়াতেই বুড়ো-বুড়ি ঘুরতে বের হতো । সন্ধের একটুখানি আগে তারা বেড়ানো শেষ করে ঘরে ফিরতো । পাহাড়ের ঠিক নিচের উপত্যকাতে ছিল একটা ছোট্ট গ্রাম । সেই গ্রামে দেবতার মন্দির । রোজ সন্ধ্যায় সেই মন্দিরে গিয়ে দেবতার সামনে মাথা খুঁড়তো দুই বুড়ো-বুড়ি । এতকাল হয়ে গেলো দেবতা তাদের ঘরে কোনো সন্তান দেননি । তাদের উপর দেবতার দয়া হয়নি । ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটা তাই বড্ড খালি খালি লাগে বুড়ো-বুড়ির ।

মনের গভীরে দুঃখের সমুদ্র তাদের । কিছুই ভালো লাগে না, তাই প্রায় সমস্ত দিনটা বুড়ো বুড়ি এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেই কাটিয়ে দেয় । এখন বয়স হয়ে গিয়েছে তাদের, সন্তানের কোনো আশাই নেই বলতে গেলে । তাও রোজ সন্ধ্যে নামলেই বুড়ো-বুড়ি গাঁয়ের মন্দিরে প্রার্থণা করতে যায় - একটি সন্তানের জন্য তাদের এমন আকুল প্রার্থনা দেখে গ্রামের মানুষদের মনেও বেশ কষ্ট হয় । কিন্তু, এই বৃদ্ধ বয়সে দেবতা দয়া করলেও আর সন্তানলাভের কোনো আশা নেই ভেবে তাদের মন দুঃখে আর্দ্র হয়ে ওঠে । সান্তনা দেয় তারা বুড়ো-বুড়িদের । কিন্তু, বুড়ো-বুড়ির সেই এক কথা - "দেবতার দয়ায় কিছুই অসম্ভব নয়, আমরা জীবনের শেষ দিনটি অব্দি সন্তানলাভের জন্য দেবতার কাছে এই ভাবেই প্রার্থনা করে যাবো ।"

এই ভাবে কেটে যাচ্ছিলো তাদের দিন । একদিন হঠাৎ ঘটলো ছন্দপতন । বুড়ো-বুড়ির নিস্তরঙ্গ জীবনে এলো একটা ঢেউ । একদিন খুব ভোরে উঠে নিত্যদিনকার মতো বুড়ি গেলো নদীতে বাসন মাজতে । বাসন মাজতে মাজতে হঠাৎ, বুড়ি দেখলো নদীতে একটা বেশ বড় পীচ ফল ভেসে যাচ্ছে । ফলটি দেখে বুড়ির খুবই ভালো লেগে গেলো । কী সুন্দর পীচ ফল ! যেমন তার গড়ন, তেমন তার রং ।

ফলটি কিন্তু ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, এই দেখে বুড়ি আর নিজেকে সামলাতে পারলো না । সে হাতছানি দিয়ে আর সুর করে দুলে দুলে বলে উঠলো,

"পীচ ফল, পীচ ফল, যেও না তুমি এসো,
আমার কাছে পিঠে আছে, পেট ভরে খেয়ো ।"

যেমনি বলা অমনি কী আশ্চর্য ! পীচ ফলটা ভাসতে ভাসতে একদম বুড়ির কাছে চলে এলো । এত বড় পীচ ফল পেয়ে বুড়ির আর আনন্দ ধরে না । সে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফিরে এলো পীচটি নিয়ে । এ দিন কিন্তু, বুড়ি আর কিছুই রান্না করলো না । এত বড় পীচ ফল দু'জনে খেলে পেট একদম ভরে যাবে । পীচ ফলটি নিয়ে বুড়ি খাওয়ার টেবিলে খুব যত্ন করে রেখে দিলো । বুড়ো ফিরলে তাকে এটা দেখিয়ে চমকে দেবে । তারপরে দু'জনে মিলে খাবে ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এমন জায়গায় এসে গল্পটি থেমে গেল যেন, পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য এখনই কিছুটা আগ্রহ বেড়ে গেল। অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরের পর্বের জন্য।

যাদের সন্তান হয় না একমাত্র তারাই বুঝে এই কষ্টটা কেমন। তবে কি এই পীচ ফলটি খেয়ে তাদের সন্তান হবে নাকি। গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।