আর ডিঙি নৌকোর মাঝি দূর থেকে মোমোতারোর এই কান্ড দেখে একদম বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেলো । বাপরে ! ছেলেটার তো গায়ে বিশাল শক্তি । ওই রকম ভয়ালদর্শন হিংস্র একটা পাখিকেও এত সহজে বশ করে ফেললো । আবার তার অপর দুই সঙ্গীও তো দেখছি ভয়ঙ্কর । কুকুরটাকে দেখলেই তো ভয়ে প্রাণ উড়ে যায়, অথচ দেখো একটা ছোট্ট কুকুরছানার মতো সে ওই ছেলেটার পিছনে ঘুরছে । আর বাঁদরটা তো বিশাল চেহারার, ওটার হাতের একটা চড়েই তো যে কোনো মানুষের মুন্ডু ঘুরে যাওয়ার কথা !
মাঝি এইসব ভাবতে ভাবতে দেখতে পেলো ছেলেটা তাকে হাতের ইশারা দিয়ে জেটিতে নৌকো ভেড়াতে বলছে, আর সেই সাথে চিৎকার করে কিছু বলছে তাকে। এতদূর থেকে হাওয়ার দাপটে মোমোতারোর কথা বুঝতে না পারলেও তার হাতের ইশারা বুঝতে পারলো মাঝি । সে আস্তে আস্তে নৌকোটা জেটিতে ভিড়িয়ে ফেললো ।
মোমোতারো তখন মাঝির কাছে এসে তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলো, ওনিদের দ্বীপে নিয়ে যেতে হবে তাকে । মোমোতারোর মনের এই ভয়ঙ্কর ইচ্ছে শুনেই তো মাঝির চোখ মুখ শুকিয়ে এক শা । কী বলে ছেলেটি ? এ কী সাংঘাতিক কথা ! বাপরে, মাথা ঠিক আছে তো ওর ?
মাঝির মুখের অবস্থা দেখেই মোমোতারো তার মনের ভাব বুঝতে পারলো । সে তখন কোমরের থেকে ছোট্ট একটা থলি বের করলো । এর পরে থলিটি উপুড় করে দিলো জেটির কাঠের পাটাতনের উপর । স্বর্ণমুদ্রা ! অনেকগুলো । এত সোনা মাঝি জীবনেও দেখেনি । বিস্ময়ে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো । একটা শুকনো ঢোঁক গিলে সে স্বর্ণমুদ্রার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
মোমোতারো তখন মাঝিকে বললো, "এই স্বর্ণমুদ্রার সব ক'টিই তুমি পাবে যদি আমাকে ও আমার তিন সঙ্গীকে তোমার নৌকোয় করে ওনি দস্যুদের দ্বীপে নিয়ে যাও ।"
কিন্তু, প্রাণের মায়া বড় মায়া । এতো সোনা দেখে লোভে পড়ে গেলেও তাই মাঝির হাত পা ঠান্ডা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে এলো । ওনিদের দ্বীপে গেলে কেউই তো আর ফিরে আসে না । এই ছেলেটার কি মরণের ভয় নেই ? নাকি এর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে ? সাধ করে কেউ মরণের মুখে যেতে চায় ?
মাঝির মনের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করলো মোমোতারো । সে তখন মাঝিকে সব কিছু খুলে বললো । তাদের গাঁ ও আশেপাশের গাঁ থেকে চুরি যাওয়া মেয়েদের উদ্ধার করতে মোমোতারোর এই অভিযান । সে দেবতার সন্তান, দস্যুদের সে যেমন করেই হোক পরাজিত করে লুঠ হয়ে যাওয়া মেয়েদের উদ্ধার করে আনবে । এ ব্যাপারে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ।
আর মাঝি যদি তাকে ওনিদের দ্বীপে পৌঁছে দেয় তবে এই সমস্ত স্বর্ণমুদ্রা তার ।
মাঝি একটু আগের ঘটনার কথা মনে করলো । নাহ ! ছেলেটার সাহস আছে মানতেই হবে । সেই সাথে শারীরিক শক্তিও তার প্রচুর, না হলে এই রকম তিন ভয়ঙ্কর জন্তুকে সে কীভাবে পোষ মানালো ?
অনেক্ষণ দুলে দুলে ভাবলো মাঝি । তারপরে মোমোতারোর উদ্দেশ্যে বললো, "আচ্ছা ঠিক আছে, এতো করে যখন বলছো তখন আমি নিয়ে যাবো তোমাকে ওনি দস্যুদের দ্বীপে । কিন্তু, আমার একটি শর্ত আছে । আমি তোমাকে দ্বীপে নামিয়ে দিয়েই তৎক্ষণাৎ ফিরে আসবো । তোমাকে শুধু পৌছিয়ে দিতে পারবো, কিন্তু ফিরিয়ে আনতে পারবো না । তুমি আমার এই শর্তে রাজি হলে নৌকোয় উঠতে পারো । আর হ্যাঁ, নৌকোয় উঠেই স্বর্ণমুদ্রার থলিটি আমাকে দিয়ে দিও কিন্তু ।"
মোমোতারো উৎফুল্ল কণ্ঠে একটুও না ভেবে বলে উঠলো, "আমি রাজি ।"
[ক্রমশঃ]
নৌকার মাঝি অবশেষে তাহলে রাজি হলো ওনি দস্যুদের দ্বীপে মোমোতারো এবং তার সঙ্গীদেরকে নিয়ে যেতে। ধীরে ধীরে মোমোতারো মিশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে অবশ্যই ওনি দস্যুদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তারমানে অবশেষে মাঝি রাজি হয়ে গেল এবং মোমোতারো শেষমেশ ওনিদের দ্বীপে যেতে পারছে, বাহ এটা জেনে বেশ ভালো লাগলো, অপেক্ষায় থাকলাম ভাই পরে পর্বের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit