পুরাণের গল্প : "ঋষি ও ইঁদুরের গল্প" - পর্ব ০৯

in hive-129948 •  9 months ago 

book-794978_1280.jpg
Copyright Free Image Source: Pixabay


সঙ্গে সঙ্গে চিতাবাঘরূপী মূষিকের শরীরে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেলো । হালকা-পলকা শরীর ক্রমশ ভারী আর ইস্পাতের ন্যায় পেশীবহুল হয়ে উঠলো । লৌহ কঠিন লাঙ্গুর বারংবার মাটিতে আছড়ে পড়তে লাগলো । থাবার মধ্যে নখরগুলি আরো তীক্ষ্ণ, আরো দীর্ঘ হয়ে উঠলো । ঘাড়ের কাছটা সোনালী কেশরে ভরে গেলো । মুখটা বড় ধামার মতো হয়ে উঠলো, তাতে দু'টি হলদে ক্রূর চক্ষু, বিরাট হাঁয়ের মধ্যে দীর্ঘ আর ধারালো চারটি ঝকঝকে শ্বদন্ত ।

এইরূপে চিতাবাঘ থেকে মহাবলশালী পশুরাজ সিংহে পরিণত হয়ে মূষিক মুখটা আকাশের দিকে উঁচু করে একটা মৃদু হুঙ্কার দিলো । সেই মৃদু হুঙ্কারই বাজ পড়ার মতো শব্দে পরিণত হলো । মুনির শিষ্যবর্গ সেই গর্জন শুনে ভয়ে একদম কাঠ হয়ে গেলো । সিংহ হয়ে একটা বিশাল লাফ মেরে মূষিক তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লো সেই বিরাট বাঘটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য । মুনিকে পর্যন্ত একটিবারের জন্যও অভিবাদন জানাতে সে ভুলে গেলো ।

জঙ্গলে ঢুকেই সে বারংবার রণহুঙ্কার দিতে লাগলো ব্যাঘ্রের উদ্দেশ্যে । সেই হুঙ্কারে ছিল যুদ্ধের আহ্ববান । বাঘটি তখন একটা হরিণ শিকার করে তাকে খাচ্ছিলো । গর্জন শুনে চিনতে পারলো না এটা কোন প্রাণীর গর্জন । তবে, হিংস্র কোনো শ্বাপদ যে হবে সেটা তার হুঙ্কার শুনেই মালুম হচ্ছে ।

এই প্রথম নৈমিষারণ্য জঙ্গলের রাজার মনে কিছুটা হলেও উদ্বেগের সঞ্চার হলো । সেও খাওয়া ফেলে উঠে একটা দ্বন্দ্ব যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো । অনতিবিলম্বে খোলা মাঠের মাঝে আত্মপ্রকাশ ঘটলো বিশালকায় পশুরাজের । ঘাড়ের কাছে সোনালী কেশর তখন হওয়ার দমকে উড়ছে, বিশাল মুখব্যাদান করে ধারালো নিষ্ঠুর দাঁতের সারি দেখিয়ে মাটি কাঁপানো মেঘের ডাকের মতো গর্জন ছাড়ছে ।

বাঘটি ইতিপূর্বে কখনো সিংহ দেখেনি । তবে, জ্ঞাতিদের কাছে সিংহের যে বর্ণনা শুনেছে তার সাথে এই প্রাণীটির হুবহু মিল খুঁজে পাচ্ছে সে । সে শুনেছে সিংহও বনের রাজা । আর তাকে পরাস্ত করা ভীষণই কঠিন কাজ । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঘ সিংহের নিকট পরাস্ত হয়ে থাকে ।

ব্যাঘ্রের মনে বেশ ভীতির সঞ্চার ঘটলো হঠাৎ । হতভাগা চিতাটা তো বলেনি যে এই জঙ্গলে সিংহের বাস । ভারী ফ্যাসাদ হলো তো দেখছি এখন । বাঘের খুবই ইচ্ছে হলো পালিয়ে যায়, কিন্তু, সে যে একটা জঙ্গলের রাজা । রাজা যদি এই ভাবে ভীরু কাপুরুষের মতো পালিয়ে যায় তবে রাজার সম্মান যে ধুলায় লুটায় ।

অতএব, ব্যাঘ্রও পাল্টা রণহুঙ্কার ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো । তারপরে, শুরু হলো দুই বিশালকায় হিংস্র শ্বাপদের এক মরণপণ রক্তাক্ত লড়াই । সিংহের বিষাক্ত হিংস্র থাবার মুখে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হলো বাঘটি । জীবন বাঁচানোর তাগিদে একসময় রণে ভঙ্গ দিয়ে পেছন ফিরে দৌড় মারলো ।

সিংহটি কিছুক্ষণ পিছু ধাওয়া করে অবশেষে বিজয়ীবেশে জঙ্গলে প্রত্যাবর্তন করলো । সে এখন আবার এই জঙ্গলের একচ্ছত্র অধিপতি । আগের চাইতে আরো বেশি শক্তিশালী, আরো বেশি ক্ষমতাবান সে এখন । মুখটা আকাশের দিকে উঁচু করে ভয়ঙ্কর একটা গর্জন করে নিজের আধিপত্য ঘোষণা করলো সে । সারা বনভূমি সেই গর্জনে কেঁপে উঠলো ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমি আগেই ভেবেছিলাম যে, মূষিক সিংহে পরিণত হওয়ার পর আরও বেশি অত্যাচারী হয়ে উঠবে। সে যে ঋষির কাছে শপথ করেছিল, সেটা শুধুমাত্র ঋষির মন গলানোর জন্য। কারণ মূষিক অনেক অহংকারী। তবে সিংহ হোক আর যা ই হোক না কেনো, অহংকার কখনোই ভালো নয়। কথায় আছে বাপের উপরেও বাপ থাকে। মূষিকের অহংকারের কারণেই খুব শীঘ্রই মূষিক আবার ইঁদুরে পরিণত হবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

আমার মনে হচ্ছে, এখন থেকে আবারও মূষিকের অত্যাচার বেড়ে যাবে বনে, যেহেতু সে এখন সিংহ হয়েছে, তাই হয়তো, নিজের ভিতর অহংকারবোধ আরো বেশি জন্মাবে। অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বের জন্য।