আমার শৈশব জীবনে খালে ও বিলে মাছ ধরার স্মৃতিময় মুহূর্ত //পর্ব-০৭।

in hive-129948 •  6 months ago 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শুক্রবার। ৩১ ই মে, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।


fisherman-4305368_1280.jpg

Source



আমার বন্ধু বকুলের কথা শুনে আমরা সকলেই আমাদের মাছ ধরার জায়গাটিতে পুনরায় কচুরিপানা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম। একই সাথে মাছ ধরা স্থানের চারিদিকে কাদা দিয়ে যে বাঁধ বেঁধেছিলাম সেটাও ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। যাতে পরবর্তী কয়েকদিন পরে পুনরায় উক্ত স্থানে মাছ ধরা যায়। তারপর আমাদের মাছগুলো আমাদের অভিভাবকেরা তাদের হাড়ির মধ্যে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। আমরাও আমাদের অভিভাবকের সাথে বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। যতক্ষণ মাছ ধরেছিলাম ততক্ষণ কোন প্রকারের শীত আমরা অনুভব করেছিলাম না। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার সময় উত্তরের হালকা বাতাসে শীতে কেমন যেন শরীরের ভিতরে কাঁপুনি চলে এসেছিল।

এরপর মাছগুলো নিয়ে আমাদের বাড়িতে সকলেই এসেছিল। তারপর মাছগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করা হয়েছিল। মাছগুলো ধৌত করার পরে শোল মাছ, জিওল মাছ, কৈ মাছ এবং সাথে চ্যাং ও পাকাল মাছ দেখে আমাদের বাড়ির সকল অভিভাবকরা সম্পূর্ণরূপে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিল থেকে আমরা কি কি মাছ ধরে এনেছি সেগুলো দেখার জন্য বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিল। আমাদের প্রতিবেশীরা মাছ দেখে অবাক হয়েছিল। বিশেষ করে আমাদের মা-চাচিরা তো বলতেই শুরু করেছিল, এরা এতো ছোট মানুষ হয়েও এরকম বড় বড় মাছ কিভাবে ধরে আনলো? আবার আমাদের কয়েকজন চাচা এবং বড় ভাই বলেছিল, ওরা ছোট হলেও মাছ ধরতে বেশ দক্ষ আছে।

পাড়া-প্রতিবেশীদের মুখে আমাদের প্রশংসার কথাগুলো শুনে বেশ ভালো লেগেছিল। এবং আমি সহ আমার বাকি তিনজন বন্ধু সকলেই শুকনো মুখেই হাসি দিয়েছিল। আমাদের মাছের মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় মাছ ছিল দুইটা। সেটা হলো বড় বড় দুইটি শোল মাছ এবং অসংখ্য পরিমাণে ধরা জিওল মাছ। আর বিল থেকে শোল মাছ ও জিওল মাছ ধরা সব থেকে কঠিন। আর এজন্যই আমাদের অভিভাবকরা সহ পাড়ার প্রতিবেশীরাও আমাদের মাছগুলো দেখে আমাদেরকে প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিল। এদিকে বাড়িতে এসে আমরা সকল বন্ধুরা কেমন যেন শীতে কাঁপতে লাগলাম। মনে হচ্ছিল গোসল না করতে পারলেই বেশি ভালো হয়। কিন্তু আমাদের সকলের সারা শরীরে কাঁদা লেগেছিল। তাই গোসল করা আমাদের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক।

শীতের সময় একেবারেই পড়ন্ত বিকেলে গোসল করবো বলে, আমাদের প্রত্যেকের অভিভাবকেরা নিজ নিজ বাড়িতে গরম পানি করতে শুরু করেছে। এদিকে আমার বন্ধু বকুলের মা মাছগুলো সমান চার ভাগে ভাগ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। পাশাপাশি বকুলের মায়ের পাশে বসে আমার দাদী দুইটি শোল মাছ সুন্দরভাবে কাটতে শুরু করেছে। আমার দাদী এরকম মাছ ভাগ করায় অত্যন্ত দক্ষ ছিল। আমার দাদি দুইটি শোল মাছের আটটি চাকা এবং মাথা ও লেজ দিয়ে মোট বারো টুকরো করেছিল। তারপর ১২ টুকরো শোল মাছ খুবই সুন্দর ভাবে সাজিয়ে চার ভাগ করেছিল। আমি অবশ্য মোটা মাথা বিশিষ্ট শোল মাছের অংশটি নিয়েছিলাম। কারণ আমি যে কোন মোটা মাছের মাথা খেতে ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত পছন্দ করতাম।

মাছ ভাগ করার একেবারে শেষ প্রান্তে আমরা চার বন্ধু একত্রিত হয়ে ছোট্ট একটি আলোচনা সম্পূর্ণ করেছিলাম। আলোচনায় আমি সকল বন্ধুকে প্রস্তাব করেছিলাম যে, আমার বন্ধু বকুল তুলনামূলক আমাদের চেয়ে বেশি মাছ ধরেছে এবং বেশি পরিশ্রম করেছে, একই সাথে বকুলের হাতের আঙ্গুলে জিওল মাছের কাটা ঢুকেছে, তাই আমাদের তিনজনের পক্ষ থেকে বকুলকে কিছুটা মাছ বেশি দেওয়া হোক। আমার এই প্রস্তাবে আমার বাকি দুজন বন্ধু রাজি হয়ে গেল। তারপর আমাদের তিনজনের পক্ষ থেকে একটি করে মোট তিনটি মাঝারি সাইজের জিওল মাছ আমার বন্ধু বকুলকে দেয়া হলো। আমাদের পক্ষ থেকে একটি করে মোট তিনটি জিওল মাছ পেয়ে আমার বন্ধু বকুল যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছিল সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। আর এটাই ছিল আমাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।



ষষ্ঠ পর্বটি পড়ার লিঙ্ক



আমার শৈশব জীবনে খালে ও বিলে মাছ ধরার স্মৃতিময় মুহূর্তের বাকি কথাগুলো পঞ্চম পর্বে শেয়ার করা হবে।


আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

আসলে মাছ ধরতে কি যে ভালো লাগে তা বলে বুঝানো যাবে না। শৈশবে খালে এবং বিলে অনেক মাছ ধরেছি। ঐ মুহূর্ত গুলো এখনো মনে পড়লে বেশ ভালো লাগে ‌ । আপনার শৈশব জীবনে খালে ও বিলে মাছ ধরার আজকের পর্ব পড়ে ভালো লাগলো। দুর্দান্ত অনুভূতি শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য। ‌

শৈশবে খাল বিলে মাছ ধরার স্মৃতি আসলেই অনেক সুন্দর।যদিও আমার এই স্মৃতি নেই।তারপরেও লোকজনকে দেখেছি মাছ ধরতে।আপনার স্মৃতিময় অনুভূতিমূলক পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

আসলে ছোটবেলায় মাছ ধরেনি এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যায়৷ আপনাদের সেখানে তো দেখছি অনেক মাছ এখনো আছে৷ পূর্বেও ছিল যা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ আপনার আজকের এই ছোটবেলার খুব সুন্দর একটি মাছ ধরার মুহূর্ত শেয়ার করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগছে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে৷