গল্প: মামা ও ভাগ্নে। পর্ব: ১০ || তাং: ২৪/০৩/২০২৩ ইং।

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শুক্রবার। ২৪ ই মার্চ, ২০২৩ ইং।




আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট আমার লেখা একটি গল্প শেয়ার করছি। আমার গল্পের নাম- 'মামা ও ভাগ্নে', পর্ব-১০। আমি আশা করি আমার লেখা গল্পের পর্ব-১০ আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।


sunset-g5f78888ca_1280.jpg

Source



গল্পের নবম পর্বটি পড়ার লিঙ্ক



সুজনের মুখে এমন কথা শুনে তার ভাগ্নে মিটমিট করে হাসি দিল। তারপর হৃদয় তার মামাকে জিজ্ঞেস করল, মামা তুমি কিভাবে এই মাদক ব্যবসায়ীদেরকে উচিত শিক্ষা দিবে? সুজন বলল, আমরা এখনই থানায় চলে যাব। তারপর পুলিশদের কাছে বিস্তারিত খুলে বলবো। যাতে রাতের আঁধারে পুলিশ এসে এই মাদক ব্যবসায়ীদেরকে হাতেনাতে ধরতে পারে এবং উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে। সুজনের মুখে এরকম কথা শুনে হৃদয় বললো, মামা তাহলে আমাদের এখন আর দেরি করা উচিত হবে না। এখান থেকে দ্রুত আমাদের থানায় যাওয়া উচিত। ভাগ্নের মুখে এমন কথা শুনে সুজন একটু শুকনো হাসি দিল। তারপর সুজন বলল, পুলিশের কাজ জনগণের সেবা করা, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং দুশমনকে দমন করা। কিন্তু আজকের পুলিশরা কি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে?


সুজনের মুখে এমন কথা শুনে হৃদয় কিছুটা হতবাক হয়ে গেল এবং সে তার মামাকে জিজ্ঞেস করল, তাহলে তুমি কি করতে চাও? ভাগ্নের কথার কোন উত্তর না দিয়ে সুজন বলল তুমি আমার সাথে আসো এবং আমি যা করি তুমি দেখতে থাকো। একই সাথে চারিদিকে একটু লক্ষ্য রাখো যাতে কোন মানুষ আমাদেরকে দেখতে না পারে। সুজন প্রথমে হেরোইন বোঝায় দুটি বাক্স দুই হাতে নিয়ে ভুট্টা ক্ষেত থেকে একটু দূরে তামাক ক্ষেতের মধ্যে চলে গেল। তারপর, সুজন বক্সের মধ্যে থাকা সমস্ত হেরোইনের প্যাকেট গুলো ছিড়ে মাটিতে ফেলে দিতে লাগলো। দুই বাক্স থেকে মোট চারটা প্যাকেট অক্ষত রেখে সব প্যাকেটের হেরোইন গুলো মাটিতে একটি জায়গায় ঢেলে দিল। এদিকে মামার এরকম কাজ দেখে হৃদয় তো পুরো আশ্চর্য হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয় কোন ধরনের প্রশ্ন করার সাহস হলো না। সে শুধু তার মামাকে পাহারা দিতে লাগলো।


এমন সময় হৃদয়ের কাছ থেকে সুজন একটি দিয়াশলাই চাইলো। হৃদয় বলল মামা, তুমি দিয়াশলাই কি করবে? উত্তরে সুজন বলল, আগুন দিয়ে হেরোইন গুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিব। সুজন আরো বলল, আমার বুকের উপর দিয়ে এই বিষের ব্যবসা করে আমার দেশের ক্ষতি করবে, সেটা কখনোই আমি হতে দেব না। তাই এই বিষগুলো আগেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আমি ছাই করে দিব। হৃদয় বললো মামা এগুলো না পুড়িয়ে আমরা তো পুলিশের হাতে সরাসরি দিয়ে দিতে পারি। সুজন বলল, তা তো আমরা অবশ্যই পারি কিন্তু পুলিশ যে শতভাগ সৎ সে বিষয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ এটা কোটি কোটি টাকার হেরোইন। পুলিশরা যদি ঘুষ গ্রহণ করে হেরোইন গুলো হেরোইন ব্যবসায়ীদের কাছে ফিরে দেয়। তাহলে এই হেরোইনগুলো হাজার হাজার যুবক-যুবতীর জীবন নষ্ট করে দিবে। একই সাথে তাদের পরিবারে নেমে আসবে চির অশান্তি।


তাই এই সুযোগে সুজন চার প্যাকেট হেরোইন বাদে সমস্ত হেরোইন গুলো তামাক ক্ষেতের মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চার প্যাকেট হেরোইন রেখে দেওয়ার বুদ্ধিটা হৃদয় জানতে পেরে খুবই আনন্দিত হল। তারপর সুজন এবং হৃদয় মিলে দুইটি বাক্সের মধ্যে পুড়িয়ে ছাই করা হেরোইন গুলো এবং সাথে শুকনো মাটি দিয়ে দুটি বাক্স বোঝাই করে দিল। তারপর দুই প্যাকেট করে চার প্যাকেট হেরোইন দুটি বাক্সে ভাগ করে দিয়ে দিল। এই হেরোইনের প্যাকেটগুলো তারা অক্ষত রাখল। তারপর মাদক ব্যবসায়ীরা যেভাবে বাক্স দুটি মাটির নিচে পুঁতে রেখে গিয়েছিল, তারা ঠিক সেভাবেই সুন্দর করে বাক্স দুটি মাটির নিচে পুঁতে রাখলো। তারপর হৃদয় তার মামাকে জিজ্ঞেস করল, মামা মদের বোতলগুলো কি করবে? সুজন কোন উত্তর না দিয়ে হৃদয়কে বলল, মদের বোতল ভর্তি এই বাক্সটি তুমি এক পাশে ধরো। তারপর তারা দু'জন মদের বোতল ভর্তি বাক্সটি ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যেই একটু দূরে নিয়ে গেল। তারপর সুজন রাগে গজগজ করে একটি বোতলের সাথে আরেকটা বোতল আঘাত করে মদের বোতল গুলো ভাঙতে শুরু করলো। সুজন যখন মদের বোতলগুলো ভাঙছিল তখন কাঁচ ভাঙ্গার কচ কচ শব্দ হচ্ছিল। শব্দটি বেশ জোরেই শোনা যাচ্ছিল।


তাই হৃদয় তার মামাকে বলল, মামা একটু আস্তে ভাংগো, আশপাশে মানুষজন থাকলে তারা শুনতে পাবে। হৃদয় তার কথা শেষ না করতেই সে খুবই দুর্গন্ধ অনুভব করতে লাগলো। সে ভাবতে লাগলে এত দুর্গন্ধ কোথা থেকে আসছে। তারপর সে তার মামা সুজন কে জিজ্ঞেস করতেই দেখল যে, সুজনের নাক এবং মুখ গামছা দিয়ে জড়ানো। সুজন ইশারায় তার ভাগ্নেকে বোঝানো এখান থেকে দূরে যেতে। তারপর হৃদয় বুঝতে পারল যে এই মারাত্মক দুর্গন্ধ মদের। মদের বোতলগুলো ভাঙ্গার ফলে মদের দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যেতে লাগলো। তারপর সুজন সেখান থেকে সরে এসে তার ভাগ্নের কাছে আসলো। তারপরে,দু'জন বলাবলি শুরু করল যে, দুনিয়ার বুকে প্রচুর সুন্দর সুন্দর সুস্বাদু খাবার থাকতে এত দুর্গন্ধ মদ মানুষ হাজার হাজার টাকা খরচ করে কি করতে কিনে খায়। কিন্তু মামা ও ভাগ্নের এই প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো আমাদের কারো জানা নেই।


[গল্পটি চলমান থাকবে]



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বর্তমান সমাজে এই নেশাদ্রব্য গুলো আমাদের কোমলমতি ভাই-বোন অনেককেই ঠেলে দিচ্ছে অকালমৃত্যুর দিকে।দেশের সম্পদকে নষ্ট করছে দেশেরই মানুষ।তবে সুজন আর তার ভাগ্নে মিলে হেরোইন পুড়িয়ে দিল আর মদের বোতলগুলো ভেঙে ফেলল, সেই হিসেবে ভালোই করেছে।কারণ পুলিশ যেভাবে ঘুষ নেয় সেখানে হয়তবা সুজন আর তার ভাগ্নেই ফাঁদে পড়ে যেতে পারে।যাইহোক আজকের পর্বটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।

অনেক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।