রাতে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা দেখার অনুভূতি।

in hive-129948 •  last year 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ সোমবার । ২০ ই নভেম্বর, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20231021_225126_037.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, যাত্রাপালা আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্য। যাত্রাপালা আমাদের সংস্কৃতির বিরাট একটি অংশ। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশের পাড়াগাঁয়ে রাতের বেলায় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত যাত্রাপালায় আমাদের গ্রামাঞ্চলের কৃষক, জেলে, কামার-কুমোর, দিনমজুর সহ সকল শ্রেণীর মানুষেরা একত্রে বসে যাত্রাপালা দেখতো এবং আনন্দ উপভোগ করতো। যাত্রাপালা দেখার সময় মানুষে মানুষে তেমন কোন ভেদাভেদ হতো না বরং পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হতো। যাত্রাপালার কাহিনী শুনে ও অভিনয় দেখে কখনো গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা একত্রে বসে হাসতো, আবার কখনো তারা কান্নায় ভেঙে পড়তো। আসলে আমরা বাঙালি জাতি মনের দিক দিয়ে যতটা কঠিন ঠিক ততটাই নরম ও কোমল। অতীতে আমাদের সমাজে ছিল না ডিস এন্টেনা, ছিল না টেলিভিশনের প্রচলন। তাই তারা এই যাত্রাপালা দেখার মধ্যেই মনের হাসি-আনন্দ সঞ্চয় করতো।

বর্তমান সময়ে আমাদের গ্রামাঞ্চলের সেই যাত্রাপালা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। এখন আর আমাদের গ্রাম-অঞ্চলে যাত্রাপালা হয় না বললেই চলে। যাহোক, কিছুদিন আগে আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তারপর জানতে পারলাম আমাদের শ্বশুরের গ্রামের পাশের গ্রামে জমজমাট এক যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে। তাই ভাবলাম রাত্রে এই যাত্রাপালা দেখতে যাব। কারণ সেই ছোটবেলা থেকে যাত্রাপালার অনেক কথা শুনেছি আমার দাদা-দাদীর মুখে। এমনকি আমার বাবা ও চাচাদের মুখেও যাত্রাপালার অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু নিজে উপস্থিত থেকে এর আগে কখনো যাত্রাপালা দেখার সুযোগ আসেনি। তাই সেদিন যাত্রাপালা দেখার সুযোগ আর মিস করিনি। তাই রাত্রে চলে গিয়েছিলাম যাত্রাপালা দেখতে।

IMG_20231021_222029_341.jpg

IMG_20231021_222009_954.jpg


রাত্রে যাত্রাপালা দেখতে যাওয়ার মুহূর্তে আমার সাথে ছিল আমার ছেলের মামা। যাত্রাপালা শুরু হয়েছিল রাত সাড়ে আটটার সময়। কিন্তু আমরা পৌঁছেছিলাম রাত দশটা পনেরো মিনিটে। যাত্রাপালার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আমি তো যথারীতি অবাক হয়ে গেছি। দেখলাম আশপাশের চারপাশ গ্রামের প্রায় এক থেকে দুই হাজার মানুষ যাত্রাপালা দেখতে এসেছে। রাতের বেলায় এক জায়গায় এত মানুষ জড়ো হয়ে যাত্রাপালা দেখার মুহূর্তটা সকলের জন্যই খুবই উপভোগ্য ছিল। যাত্রাপালা দেখার স্থানে বেশিরভাগ ছিল পুরুষ মানুষ এবং বাড়ির আড়াল থেকে এবং ঘরের ছাদের উপর থেকে অনেক মহিলা মানুষ যাত্রাপালা দেখছিল। সকল মানুষ একেবারেই চুপচাপ অবস্থায় যাত্রাপালা উপভোগ করছিল। আমিও তাদের মাঝে বসে যাত্রাপালা দেখছিলাম এবং মাঝেমধ্যে ফটোগ্রাফি করার চেষ্টা করেছিলাম।

IMG_20231021_225041_561.jpg

IMG_20231021_222444_302.jpg

IMG_20231021_222440_103.jpg


যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি ঘরের মধ্যে। ঘরের চারিদিকে ছিল বাশের বেড়া এবং উপরে ছিল টিনের চালা। উক্ত ঘরের মধ্যে যাত্রাপালায় অভিনয় করা অভিনেতাগণ ছিল। তারা পর্যায়ক্রমে এসে যাত্রাপালার অভিনয় করছিল। যাত্রাপালা দেখার পরে বুঝতে পারলাম যে, কমলার বনবাস শিরোনামের যে কাহিনীটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেই কাহিনী অবলম্বন করে যাত্রাপালাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাত্রাপালায় অভিনয় করছিল একটি ছেলে এবং তার সাথে অভিনয় ছিল আরো একটি মেয়ে। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে মাঝেমধ্যে নায়ক-নায়িকার রূপ নিয়ে অভিনয় করছিল। আবার মাঝে মধ্যে রাজা এবং সেনাপতি সেজে, কেউ মাঝি সেজে, কেউ বা কৃষক সেজে এবং আরো অন্যান্য অভিনেতাগণ তাদের অভিনয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।

IMG_20231021_225102_029.jpg

IMG_20231021_225126_037.jpg

IMG_20231021_225123_099.jpg


যাত্রাপালা দেখার সময় যখন দুঃখের কাহিনী অবলম্বন করে অভিনয় চলছিল ঠিক তখন আমি সহ সকল দর্শকগণ একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে অভিনয় দেখছিলাম। অভিনয়ের মধ্যে মাঝেমধ্যে ঢোল ও তবলা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের শব্দ আমাদের মনের মধ্যে কেমন যেন নাড়া দিয়ে উঠছিল। আসলে এতো কাছ থেকে এরকম যাত্রাপালার অভিনয় দেখার সুযোগ এইটাই আমার প্রথম ছিল। তারপর যখন হাসির অভিনয় হচ্ছিল তখন সাধারণ দর্শকগণ সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। আবার যখন বাদ্যযন্ত্রের বাজনার সাথে গান হয়েছিল তখন চারপাশে বসে থাকা দর্শকেরা বসে বসে শরীর নাড়িয়ে নাচের ভঙ্গি করছিল। সত্যি জীবনে অন্যতম একটি অসাধারণ মুহূর্ত উপভোগ করেছিলাম সেদিন যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে। ঠিক এভাবেই যাত্রাপালার বিভিন্ন কাহিনীর অভিনয় গুলো দেখতে দেখতে কখন যে রাত দেড়টা বেজে গেছে একেবারেই বুঝতে পারিনি।

আমার ছেলের মামার নিকট থেকে জানতে পারলাম যে যাত্রাপালা শেষ হতে এখনো প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগতে পারে। তাই যাত্রাপালা শেষ হওয়ার আগেই বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলাম। আসলে অনেক ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল সরাসরি যাত্রাপালা দেখার। সেই ইচ্ছেটা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হল। আসলে যাত্রাপালা অত্যন্ত উপভোগ্য একটি অনুষ্ঠান। এই যাত্রাপালা আমাদের সংস্কৃতির বিরাট একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত আমাদের এই ঐতিহ্য, আমাদের এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে এগিয়ে আসা উচিত ।এবং কর্তৃপক্ষের উচিত এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।





১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

যখন ছোট ছিলাম সেই সময় প্রচুর যাত্রা পালা গান হতো যেগুলো মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেগুলো একদমই কমে গিয়েছে বিশেষ করে মেলা বাজারে এই ধরনের যাত্রাপালা গান বেশি হতো। তারই এক স্মৃতিচারণ হল আপনার পোস্টের মাধ্যমে ভালো লাগলো।

Posted using SteemPro Mobile

যাত্রা পালা বেশ কয়েক যুগ আগের বিনোদ। যা আগের মানুষদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলো।যাত্রা পালা আমিও কোনদিন দেখিনি।শুনেছি গল্প অনেক।আপনার যাত্রা পালা দেখার ও ফটোগ্রাফি গুলো বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ সুন্দর ঐতিহ্যবী পোস্ট করার জন্য।

বাহ্ সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি।এখনো যাত্রা পালা চালু রয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগলো।যাত্রা পালা হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য।এই যাত্রা পালায় বেশ ২ হাজার মানুষ হয়ে জানতে পেরে আরো ভালো লাগলো। আমি এখনো এইরকম যাত্রা পালা দেখি নাই। আগের মানুষের কাছ থেকে শুধু শুনছি।যাইহোক সুন্দর ভাবে যাত্রা পালা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছেন। আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।