এক রাত্রির গল্প- তাংঃ ০৭/১০/২০২১ ইং(10% Beneficiaries to @Shy-fox)

in hive-129948 •  3 years ago 

আসসালামু আলাইকুম।

পোস্টের শুরুতেই আমি "আমার বাংলা ব্লগ " সকল বন্ধুদের আন্তরিক ভালোবাসা ও সারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানায়।

এক রাত্রির গল্পঃ

Screenshot_20200314-074358~2.png

সাগরিকার সাথে একত্রে বিদ্যালয়ে গেছি এবং বউ বউ খেলেছি।তাদের বাড়িতে গেলে সাগরিকার মা আমাকে বড় যত্ন করতেন এবং আমাদের দুইজনকে এক সাথে করে আপনা-আপনি বলাবলি করতেন "আহা,দু' জনকে খু্ব মানায়।

ছোটো ছিলাম,কিন্তু কথাটার অর্থ এক রকম বুঝতে পারতাম।পাড়ায় সাগরিকার মতো সুন্দরী দ্বিতীয় কোনো মেয়ে ছিল না।তার রুপের প্রশংসা ছিল পাড়ার সকর মানুষের মুখে।কিন্তু সাগরিকার কাছে তার সৌন্দর্যের কোনো গৌবর ছিল না।

IMG_20200315_102229_7.jpg

আমার বয়স ছিল আঠারো বছর।সাগরিকার বয়স পনেরো বছর। মেট্রিক পরীক্ষা শেষ করেছি।সাগরিকার ওপর আমার আগ্রহ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। আমি কেবল জানিতাম- আমারই জীবন সঙ্গিনীর জন্য সৃষ্টিকর্তা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।

যাহোক,মেট্রিকে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের একটি কলেজে ভর্তি হইলাম। কলেজে লেখা - পড়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম।বিভিন্ন সভা- সমিতিতে যোগ দিতাম।মনে আছে, যখন আমি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সে বছর বন্যায় তলিয়ে যায় বিশ- পঁচিশটি জেলা।তখন, আমার দৈনন্দিন কাজ ছিল বন্যাদূর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করা।তাদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্টানের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা,বন্যাদূর্গত মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা,তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কাজ করেছিলাম।ঠিক এসময় খবর পেলাম,দারোগা রাজুর সাথে সাগরিকার বিবাহ হয়ে গেছে।বন্যাদূর্গত মানুষের জন্য এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম,এ সংবাদ অত্যন্ত তুচ্চ মনে হলো।

IMG_20210221_181322_3.jpg

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি।কিছু দিন পরে পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি পেলাম।মনে করিরাম,আমার উপযুক্ত চাকরি পেয়েছি। আমার পোস্টিং হলো টেকনাফ উপজেলায়। পুলিশের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে উপযুক্ত করে নিলাম।

এতক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আমি উল্লেখ করি নাই।কথাটি হলো,রাজু দারোগার অধীনেই আমি কনস্টেবলের দায়িত্বে ছিলাম। আমার ম্যাচটি ছিল বড় বাগানের ধারে।ম্যাচটির চারিদিকে সুপারি, নারিকেল ও মাদার গাছে ঘেরা ছিল।আর ম্যাচটির সামনে ছিল দুইটি বড়সড় কেয়াফুলের গাছ।আমার ম্যাচ থেকে সামান্য দুরে রাজু দারোগার বাসা।দারোগা রাজুর সাথে আমার প্রতিদিনই আলাপ হতো।তার স্ত্রী আমার বাল্যসখী ছিল দারোগা বাবু জানিতেন কিনা জানি না,আমিও নূতন পরিচয়ে সে সম্বন্ধে কোনো কথা বলা সংগত বোধ করিলাম না।

IMG_20200503_134925_9.jpg

একদিন ছুটির দিনে রাজু দারোগার বাসায় তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাক্ষাৎ করতে গিয়াছি।ঘন্টাখানেক পরে পাশের ঘর থেকে অত্যন্ত মৃদু একটু চুড়ির টুংটাং , কাপড়ের খসখস এবং পায়ের একটুখানি শব্দ শুনতে পাইলাম।বুঝিতে পারলাম সাগরিকা জানালা দিয়ে আমাকে নিরীক্ষণ করছে।

তৎক্ষণাৎ দু'খানি চোখ আমার মনে পড়ে গেল- বিশ্বাস,সরলতা এবং শৈশব প্রীতিতে ঢলঢল দু'খানি বড় বড় চোখ,কালো কালো তারা, ঘনকৃষ্ণ পল্লব স্থিরস্নিগ্ধ দৃষ্টি। সাথে সাথে হৃদপিণ্ডকে কে যেন একটা কঠিন মুষ্টির দ্বারা চেপে ধরলো এবং বেদনায় ভিতরটা টনটন করে উঠলো। ম্যাচে ফিরে আসলাম।কিন্তু সেই ব্যথা লেগে রইলো।

এ কথা সত্য।সাগরিকা আমার কী না হতে পারতো। আমার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ, আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী,আমার জীবনের সমস্ত সুখ- দুঃখভাগিনী হতে পারতো- কিন্তু সে আজ এত দূর,এত পর, আজ তাকে দেখা নিষেধ,তার সঙ্গে কথা বলা দোষ,তার বিষয়ে চিন্তা করা পাপ।রাজু দারোগা মোকদ্দমার কাজে কিছুদিনের জন্য অনত্র গেছে।আমার ম্যাচে আমি যেমন একলা ছিলাম সেদিন সাগরিকার ঘরেও সাগরিকা বোধ করি সেইরুপ একলা ছিল।

মনে আছে,সেদিন ছিল সোমবার।আমার শরীরে জ্বর ও হালকা সর্দি ছিল।তাই সেদিন আমি ছুটিতে ছিলাম।সেদিন সকাল হতেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে।বেলা সাড়ে নয়টা হতে টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করলো।বিকেলের দিকে মুষলধারে বৃষ্টি ও সঙ্গে সঙ্গে ঝড় আরম্ভ হলো।যত রাত্রি হতে লাগলো বৃষ্টি ও ঝড়ের বেগও বাড়তে লাগলো।প্রথমে পূর্ব দিক হতে বাতাস বইতেছিল, ক্রমে উত্তর ও উত্তর- পূর্ব দিয়ে বইতে লাগলো।এ রাত্রে ঘুমাইবার চেষ্টা করা বৃথা।মনে পড়িল,এই দুর্যোগে সাগরিকা ঘরে একলা আছে।আমার ম্যাচ ও সাগরিকার বাসা সাগরের সামনে।আর,আমার ম্যাচের পাশে বাগানের ভিতরে বিশাল উঁচু পাড় তৈরি করা আছে।কতবার মনে করলাম, সাগরিকাকে ডেকে এনে উঁচু পাড়ের উপর বসে কিছুক্ষণ গল্প করি।কিন্তু সাহস হলো না।

রাত্রি যখন একটা - দেড়টা হবে তখন হঠাৎ বানের ডাক শোনা গেল- সাগর ছুটিয়া আসতেছে।ম্যাচ ছেড়ে প্রথমে সাগরিকার বাসার দিকে ছুটিলাম।তারপর, বাগানের উঁচু পাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম পাড়ের দিকে যেতে না যেতেই হাঁটু পর্যন্ত জল হয়ে গেল।পাড়ের উপর উঠে যখন দাঁড়াইলাম তখন দ্বিতীয় আর- একটা তরঙ্গ এসে উপস্থিত হল।বাগানের পাড়ের উচ্চতা প্রায় এগারো -বারো হাত হবে।পাড়ের উপর আমি যখন উঠিলাম বিপরীত দিক হতে আর-একটি লোকও উঠিল।লোকটি কে, তা আমার সমস্ত অন্তরাত্মা,আমার মাথা হতে পা পর্যন্ত বুঝতে পারিল।এবং সেও যে আমাকে জানতে পারিল তাতে আমার সন্দেহ নাই।আর সমস্ত জলমগ্ন হয়ে গেছে,কেবল একটা পাড়ের উপর আমরা দু'টি প্রাণী আসিয়া দাঁড়াইলাম।

তখন প্রলয়কাল,তখন আকাশে তারার আলো ছিলো না এবং পৃথিবীর সমস্ত প্রদীপ নিবিয়া গেছে- তখন একটা কথা বলিলেও ক্ষতি ছিল না- কিন্তু একটা কথাও বলা গেল না,কেহ কাহাকেও একটু কুশলপ্রশ্নও করিল না।কেবল দুইজন অন্ধকারের দিকে চাহিয়া রইলাম।আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়া সাগরিকা আমার কাছে এসে দাড়িয়েছে।আজ আমি ছাড়া সাগরিকার আর কেহ নাই।আজ কত দিন পর সেই আলোকময় লোকময় পৃথিবী ছেড়ে এই জনশূন্য স্থানে আমারই সামনে সাগরিকা দাড়িয়ে। আমি এই এক রাত্রে মহাপ্রলয়ের তীরে দাড়াইয়া অনন্ত আনন্দের স্বাদ পেয়েছি।

রাত্রি প্রায় শেস হয়ে আসলো-ঝড় থেমে গেল,জল নেমে গেল,সাগরিকা কোনো কথা না বলে বাড়ি গেল,আমিও কোনো কথা না বলে আমার ম্যাচে গেলাম।আমার সমস্ত ইহজীবনে কেবল ক্ষণকালের জন্য একটি অনন্তরাত্রির উদয় হয়েছিল- আমার আয়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটি মাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা।

Screenshot_20200326-130805~2.png

১০% লাজুক খ্যাকের জন্য🦊🦊

প্রিয় বন্ধুগণ , আমি মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম বিদ্যুৎ (@bidyut01)।আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সুন্দর উপস্থাপনা ছিল। অনেক ভালো।

ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

ভাই গল্পটা পরে আমার ছোট বেলা মনে পরে গেলো।ছেলে বেলায় মামার বাসায় গেলে আমার এক মামাতো বন ছিলো ওর সুত্র ধরে বলতো এই তোর বড় আসছে যা বাতাস কর 😁😁😁😁😁।

অনেক সুন্দর করে লিখেছেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার মুল্যবান মতামত আমাকে নতুন পোস্ট করতে সহায়তা করবে।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল

ভাইয়া, আমার জীবনে কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতি আছে, সে সব স্মৃতি অবলম্বন করে এই লেখা।

ভালোই ছিল আপনার উপস্থাপনা ও আপনার মূহুর্ত ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার প্রতিটি সুপরামর্শ, আপনার প্রতিটি উপদেশ,মন্তব্য আমার এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার। তাই আমি সর্বদা আপনার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি। মনের অজান্তে কোনো ভুল-ভ্রান্তি করলে ক্ষমা শূন্য দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার জন্য কোটি কোটি শুভকামনা রইল, ভাইয়া।

আপনার পোষ্টের লেখাগুলো শতভাগই চৌর্যবৃত্তি করা।
আপনাকে mute করা হচ্ছে।

কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/privacy-policy-last-updated-privacy-policies-of-amar-bangla-blog-community-30-sep-21

যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।

Discord server link: https://discord.gg/h4hMjcuu

source :

ছোটগল্প-১

একরাত্রি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।