এসো নিজে করি-আধুনিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষ-তাং:২৯/১০/২০২১ইং(10% beneficiary to @shy-fox)

in hive-129948 •  3 years ago 

আসসালামু আলাইকুম। নমস্কার এবং আদাব।

"আমার বাংলা ব্লগ"কমিউনিটির এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলার সকল সদস্যকে প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার পোস্ট শুরু করছি।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় অনেক ভাল আছেন এবং নিরাপদে আছেন।
[এই পোষ্টের সকল ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও স্থান হল:
গ্রাম: জুগিরগোফা, উপজেলা-গাংনী, জেলা-মেহেরপুর, বাংলাদেশ।

আমার আজকের পোস্ট এর বিষয়-আধুনিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষ। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, বর্তমানে আমি একজন সফল এবং স্বাবলম্বী মাছ চাষী। যদিও আমি এখন শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত হয়েছি। কিন্তু শিক্ষকতার চাকরি হওয়ার পূর্বে আমার আয়ের প্রধান উৎস ছিল মাছের চাষ।বর্তমানে আমার নিজস্ব মোট পাঁচটি পুকুর রয়েছে। তারমধ্যে চারটি পুকুরে রয়েছে পাঙ্গাস মাছ। তিনটা পুকুরে রয়েছে বড় পাঙ্গাস মাছ এবং একটি পুকুরে রয়েছে ছোট পাঙ্গাস মাছ। আজ আমি ছোট পাঙ্গাস মাছের চাষ পদ্ধতি আপনাদের নিকট তুলে ধরছি। যাতে পাঙ্গাস মাছের চাষ সম্পর্কে আপনারা পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে পারেন।

প্রিয় বন্ধুগণ, আমি ছাত্র জীবন থেকেই আমার লেখাপড়ার পাশাপাশি মাছ চাষ করে আসছি। আমি প্রায় ১১ বছর যাবৎ পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষ এর সাথে জড়িত আছি। পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষের বিষয়ে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের কাছে সংক্ষেপে কিছু বর্ণনা করছি।
IMG_20211027_172732.jpg
প্রিয় বন্ধুগণ,পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। কারণ, আমাদের দেশে মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবার, আমাদের চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন অনেক কম। তাছাড়াও মাছ হচ্ছে আমিষের অন্যতম প্রধান এবং সহজ উৎস। মাছ চাষ করে আমাদের দেশে অনেকেই তাদের দারিদ্রতা দূর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বর্তমান সময়ে মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।তাহলে আসুন জেনে নেই পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষে করণীয় সম্পর্কে-
![IMG_20211027_172357.jpg](
পুকুরে পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষে আমাদের করণীয়ঃ

চাষের স্থানঃ

বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে সফলভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, উৎপাদিত মাছ ও খাদ্য উপকরণ সহজে পুকুর পাড়ে পরিবহন করার মতো যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো দীর্ঘ সময় পুকুরে পড়ে এরূপ পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতিঃ

চাষের পুকুর অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর চুন প্রয়োগ করতে হবে শতকে এক কেজি হারে। পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থেকে যায়, তবে চুন কাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পুকুরে যদি ইতোপূর্বে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তবে চুনের পাশাপাশি শতকে ৫০০ গ্রাম হারে পটাশ সার দিতে হবে। চুন প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা এক মিটার হওয়া ভাল।পাঙ্গাস মাছের পোনাগুলো পাখিতে যেন খেয়ে না ফেলতে পারে বা নষ্ট না করতে পারে সেজন্য পুকুরের উপর দিয়ে প্যারাসুট সুতা টাঙিয়ে দিব। সবচেয়ে ভালো হয় পুকুরে উপর দিয়ে পাতলা জাল টাঙ্গিয়ে দিলে। এক্ষেত্রে আমি আমার পুকুরের উপর দিয়ে সুতা টাঙ্গিয়ে দিয়েছি ।আপনারা ছবিতে অবশ্যই দেখতে পারছেন।
IMG_20211027_173015.jpg

IMG_20211027_173008.jpg

IMG_20211029_123158.jpg

IMG_20211027_172357.jpg

IMG_20211029_123152.jpg

IMG_20211029_123203.jpg

IMG_20211027_172938.jpg

পাঙ্গাস মাছের পোনা মজুদঃ

IMG_20211027_172811.jpg

IMG_20211027_172814.jpg

IMG_20211027_172504.jpg

IMG_20211027_172514.jpg

IMG_20211027_172512.jpg
প্রায় তিন মাস আগে যশোরের মৎস্য খামার থেকে পাঙ্গাস মাছের পোনা গুলো আমি নিয়ে এসেছি। আপনাদেরও পোনা মজুদের জন্য পরিচিত মৎস্য খামার থেকে ভালোমানের পাংগাস মাছের(১৮-২০ সেমি)পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাথে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়তে হবে ১৪-১৬ সেমি আকারের। এ আকারের পোনা পাওয়া নিশ্চিত করা এবং চাষে অধিক লাভবান হবার জন্য ধানি পোনা সংগ্রহ করে নিজস্ব পুকুরে উপযুক্ত আকার পর্যন্ত বড় করে নিতে হবে। চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোমানের উপযুক্ত আকারের পোনার ওপর। একটি এক বিঘা পুকুরে সর্বোচ্চ ৩০০০০ হাজার পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষ করা যায়।

খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

IMG_20211027_172138.jpg

IMG_20211029_093830.jpg

IMG_20211029_093631.jpg

IMG_20211029_093615.jpg

IMG_20211029_093818.jpg
মাছের সুষম খাবারপ্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মাছের খাদ্য প্রদানের মূল নীতি হলো, মাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন সময়মত নির্ধারিত স্থানে প্রদান করা।
IMG_20211027_172831.jpg
IMG_20211027_172834.jpg
সে উদ্দেশ্যে পোনা ছাড়ার পর হতে নিয়মিতভাবে দিনে দুবার মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ১০-৩ ভাগ হারে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যে আমিষের ভাগ ৩০% হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বাণিজ্যিক খাবার (Pillet Feed) এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। এজন্য আমি কোয়ালিটি কোম্পানির ভাসমান এবং ডোবা খাবারগুলো ব্যবহার করে থাকি। খাদ্য প্রয়োগের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছ সবটুকু খাবার খেয়ে ফেলে। সব খাবার গ্রহণ না করলে খাদ্য প্রদান অবশ্যই কমিয়ে দিতে হবে।

পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষের বিশেষ যত্ন সমূহ:

  • পুকুরে তলদেশের গ্যাস প্রতিরোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্যাস দূর করার ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। পাঙ্গাস মাছের পোনা চাষে দেওয়ার দেড় মাস পরপর গ্যাস প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
    IMG_20211029_095827.jpg

IMG_20211029_100304.jpg
[পুকুরে প্রয়োগের নিয়মাবলী]
IMG_20211029_100334.jpg

IMG_20211029_123057.jpg

IMG_20211029_124623.jpg

IMG_20211029_124627.jpg

IMG_20211029_124816.jpg

IMG_20211029_124918.jpg

IMG_20211029_124601.jpg

IMG_20211029_124610.jpg

IMG_20211029_124616.jpg
আজ আমি আমার পাঙ্গাস মাছের পোনার পুকুরে গ্যাস নাশক ঔষধ প্রয়োগ করেছি। প্রথমে পরিমাণ মতো ওষুধ গুলো একটি হাঁড়িতে তিন লিটার পানিতে কুড়ি মিনিট মত সময় ভিজিয়ে রেখে পুকুরে ছিটিয়ে দিলাম।

  • পাঙ্গাস মাছের পোনার পুকুরে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ ঘটে। একই সাথে মাছের দেহে পরজীবী উকুনের আক্রমণ দেখা যায়। তাই প্রত্যেক মাসে একবার পোকা এবং উকুন নাশক ঔষধ পুকুরের প্রয়োগ করতে হবে। পোকা এবং উকুন নাশক ঔষধ পরিমাণমতো পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
    IMG_20211029_094403.jpg

IMG_20211029_100437.jpg
আজকে আমি আমার পাঙ্গাস মাছের পোনার পুকুরে পোকা এবং উকুন নাশক ঔষধ প্রয়োগ করেছি।

  • শীতের আগে এবং শীতের ভেতর পাংগাস মাছ লালচে দাগ রোগে আক্রান্ত হলে ত্বক ও পাখনার গোড়ায় লালচে দাগ স্পষ্ট দেখা দেয় এবং কখনও কখনও মুখে ঘা দেখা দেয়। এ রোগে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় মাছ অস্থির ও এলোমেলোভাবে সাঁতার কাটে।
    IMG_20211029_094147.jpg

IMG_20211029_094154.jpg
এ ধরনের রোগবালাই কে দমন করার জন্য আমি ইতিমধ্যে ঔষধের ব্যবস্থা করে রেখেছি।

  • আবহাওয়াগত কারণে অথবা পুকুরের বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাছের পুকুরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই মাছের জন্য অগ্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
    IMG_20211029_100033.jpg

IMG_20211029_100102.jpg

মাঝেমধ্যে পুকুরে সাঁতার দিতে হবে। পুকুরে সাঁতার কাটলে মাছগুলো দৌড়ে বেড়ায়। যা মাছের শরীরের জন্য এটি ব্যায়ামে পরিণত হয়। পুকুরে সাঁতার দেওয়ার ফলে পানিতে যে আঘাত লাগে তাতে পুকুরে অক্সিজেন তৈরি হয়। যাহা মাসের জন্য খুবই উপকারী।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, মাছের চাষ অত্যন্ত লাভজনক সত্যি কিন্তু মাছ চাষের নিয়ম গুলো আপনি যদি যথাযথভাবে না মেনে চলেন তাহলে মাছ চাষের লাভ আপনি কখনই করতে পারবেন না । তাই মাছ চাষে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এ নিয়মগুলো অবশ্যই মানতে হবে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমার মত আপনারা যারা গ্রামে বসবাস করেন এবং লেখাপড়া শিখে বেকার অবস্থায় বসে আছেন আমি তাদেরকে আহবান করে বলছি। আপনারা বসে থাকবেন না, আপনারা অল্প পুঁজি নিয়ে মাছ চাষে নেমে পড়েন। দেখবেন আপনি খুব সহজে স্বাবলম্বী হয়ে গেছেন। বেকারত্বের হতাশাকে ছুড়ে ফেলে দিন এবং আত্মনির্ভরশীল হতে চেষ্টা করুন মাছের চাষ করে।দেখবেন খুব সহজে আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন।

প্রিয় বন্ধুগণ, আমার এ পোস্টটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন। আমি মাছ চাষ নিয়ে পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি পোস্ট করবেন ইনশাআল্লাহ। আমি আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।

আমার বাংলা ব্লগ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

চমৎকার একটি পোস্ট করেছেন। যারা বেকার বসে আছেন এবং চিন্তা করছেন কি করা যায় তাদের জন্য এই পোস্টটি একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। আসলে বসে না থেকে কোন কিছু করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি খুব সুন্দর ভাবে মাছ চাষের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। তবে মাছের গায়ে যে উকুন হয় এটা আমি কখনো জানতাম না।

আপনি এই পোস্ট টা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়বেন। তাহলে আপনি অতি দ্রুত সফলতা লাভ করতে পারবেন। এই পোস্টে স্টিমিট এ কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু দেয়া আছে।

https://steemit.com/hive-129948/@moh.arif/amar-bangla-blog-tutorial-collection

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে। ভাইয়া আপনি আমার এ পোস্টটি পড়ে খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন। ভাইয়া, সকল প্রকারের মাছের পায়ুদ্বারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে উকুনে আক্রমণ করে। বিশেষ করে পাঙ্গাস মাছের উকুনের আক্রমণটা বেশি হয়ে থাকে। কারণ পাঙ্গাস মাছের দেহে কোন আঁইশ নেই এবং পাঙ্গাস মাছ রেডি খাবারের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

আপনার এই পোস্টটি সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে কারণ বাংলাদেশে এখন বেকারত্ব বেশি। বাংলাদেশের সহ অন্যান্য সকল দেশের মানুষ নিজে কিছু করে উদ্যোক্তা হতে হবে। উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হতে পাশা পাশি আরো কর্ম সংস্থা তৈরি করবে। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি আমার এ পোস্টটি পড়ে খুবই সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।