মুভি রিভিউ // "হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড"।

in hive-129948 •  8 months ago 



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।





আজ মঙ্গলবার। ২৬ ই মার্চ, ২০২৪ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট "হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড" মুভিটির রিভিউ উপস্থাপন করছি। আশা করি নাটকটির রিভিউ আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।


Screenshot_20240326-193659.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।


নাটকটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:-

মুভিটির নামহাঙ্গর নদীর গ্রেনেড।
পরিচালকচাষী নজরুল ইসলাম।
অভিনয়েসোহেল রানা, সুচরিতা, অরুনা বিশ্বাস, অন্তরা,রাজীব, নাসির খান, মিজু আহমেদ ও অন্যান্য জন।
ভাষাবাংলা।
দৈর্ঘ্য০১:৪৮ মিনিট।
দেশবাংলাদেশ।


নাটকটির সারসংক্ষেপ।

Screenshot_20240326-190459.jpg

Screenshot_20240326-190521.jpg


youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মুভিটির শুরুতেই দেখা যায় যে সুন্দর একটি গ্রামের বুড়ি নামের ছোট একটি মেয়ে তার পরিবারের সাথে বসবাস করতো। খেলা করার সময় খেলার সাথীরা তাকে বুড়ি বলে খ্যাপাতো। এতে বুড়ি মনে মনে খুবই কষ্ট পেতো। মাঝেমধ্যে বুড়ি তার মায়ের কাছে বুড়ি নামটি পরিবর্তন করার আবদার করতো। এদিকে বুড়ি তার মায়ের রান্নার কাজে বেশ সহযোগিতা করতো। পাশাপাশি বুড়ি ধান ক্ষেতে ধান কুড়াতো, হাঁসের ডিম কুড়াতো, গুলটি দিয়ে পাখি মারতো। বুড়ির খুব কাছের একজন বন্ধু ছিল জলিল। বুড়ি যখন বড় হয়ে গেল তখন একদিন পথে যেতে বুড়ির পায়ে কাটা ঢুকেছিল। সেই কাঁটা জলিল বুড়ির পা থেকে বের করে দিয়েছিল। মুভিটিতে বুড়ির সাথে জলিলের এক অন্যরকম অর্থাৎ ভালবাসার মতো সম্পর্ক হতে দেখা যায়।

Screenshot_20240326-190908.jpg

Screenshot_20240326-191356.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গফুর তার দুটি সন্তানকে নিয়ে যখন বাজার থেকে বাড়িতে আসছিল তখন এক হুজুরের সাথে দেখা হল। হুজুর গোফরকে পরামর্শ দিল তার নাবালক সন্তানদের লালন-পালন করার জন্য একটি বিয়ে করার। এদিকে গফুরের দুই সন্তান সলিম ও কলিমকে দেখে বুড়ি খেলা করার জন্য ডাক দিল। তখন সলিম ও কলিম তার ফুফু বুড়ির কাছে দৌড়ে চলে গেল। এভাবে সকলের জীবন স্বাভাবিকভাবে চলছিল তখন হঠাৎ করে একদিন বুড়িয়ে বাবা মারা গেল।



Screenshot_20240326-191427.jpg

Screenshot_20240326-191819.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তারপরে সকলের পরামর্শ মতো বুড়ির সাথে গফুরের বিয়ে হয়ে গেল। সলিম ও কলিম বুড়িকে মা হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। তারপর একদিন বুড়ির সই গান গাইতে গাইতে তাদের বাড়িতে আসলো এবং বুড়ির সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলতে লাগলো। তারপরে সুখের সাথে তাদের জীবন অতিবাহিত হতে লাগলো। একদিন মাজারে মান্নত করার মধ্য দিয়ে বুড়ির পেটে বাচ্চা এলো। তারপর বুড়ি রইস নামে একটি ছেলে সন্তানের মা হলো। কিন্তু রইস ছিল বাক প্রতিবন্ধী। বাক প্রতিবন্ধী সন্তান পেয়ে বুড়ি মানসিকভাবে সবসময় কষ্ট পেতো। এমন এক মুহূর্তে বুড়ির স্বামী গফুর মৃত্যুবরণ করে।



Screenshot_20240326-192541.jpg

Screenshot_20240326-192613.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এরপর সলিম, কলিম ও রইস বড় হয়ে যায়। তারপর সলিমকে দেখে শুনে একটি মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে সলিমের ছোট ভাই কলিম ও রইসকে অত্যন্ত আনন্দিত দেখায়। এরপর পরপরই দেশের মধ্যে পাকিস্তান বিরোধী গণ আন্দোলন সৃষ্টি হয়। এবং সেই আন্দোলন গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সকলেই পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দিতে লাগে, সাথে জয় বাংলা স্লোগান দিতে লাগে। সলিমদের গ্রামের রমজান ছিল একজন দেশ প্রেমিক এবং সচেতন নাগরিক। তিনি গ্রামের সকল মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে পাকিস্তান পার্লামেন্টে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েও তারা বাংলার প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করছে না। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে গ্রামের সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়।



Screenshot_20240326-192725.jpg

Screenshot_20240326-192811.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সলিম ও কলিম সহ সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। রমজান ছিল সলিমদের গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। যখন সবাই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল ঠিক সেই সময় সলিমের স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। তারপর সলিম ও কলিম সহ সকলেই নিজ নিজ মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সকলের উদ্দেশ্যে ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।



Screenshot_20240326-193148.jpg

Screenshot_20240326-193214.jpg

Screenshot_20240326-193250.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এসে সলিমদের গ্রামে তান্ডব চালাতে শুরু করে। সলিমদের এলাকার বিখ্যাত রাজাকার ছিল মনসুর আলী। মনসুর আলী হানাদার বাহিনীর প্রধানকে রিপোর্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সলিম ও কলিম নামের দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তারপর হানাদার বাহিনী এসে কলিমকে ধরে নিয়ে যায় এবং প্রচন্ড পরিমাণে নির্যাতন করে। তারপর কলিমকে তার মায়ের সামনে রেখে গুলি করে হত্যা করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কোণঠাসা হতে থাকে। এদিকে বুড়ির সেই বাউল সই বুড়ির কাছে দেখা করতে আসে এবং বুড়িদের বাড়িতেই থেকে যায়।



Screenshot_20240326-193532.jpg

Screenshot_20240326-193624.jpg

Screenshot_20240326-193659.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

চারিদিকে যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, চারিদিক থেকে গোলাগুলি প্রচন্ড শব্দ আসতেছে ঠিক সেই মুহূর্তে দুজন মুক্তিযোদ্ধা বুড়ির দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো। বুড়ি তাদের কণ্ঠ শুনে তাদেরকে চিনতে পারলো এবং দরজা খুলে দেখলো যে তারা হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ জায়গা খুঁজছে। তারপর বুড়ি তার ঘরের বড় দুইটি মাটির পাত্রের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের লুকিয়ে রাখলো। তারপর হানাদার বাহিনী এসে যখন মুক্তি দের খোঁজ করলো তখন বুড়ি তার বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে রইস এর হাতে মুক্তি বাহিনীর অস্ত্র তুলে দিয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিল। তারপর মায়ের সামনে বাক প্রতিবন্ধী সন্তান রইসকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। এর পরে হানাদার বাহিরে যেদিকে গেল দুই মুক্তিযোদ্ধাকে সেদিকে যেতে বললো বুড়ি। তারপর শুরু হলো প্রচন্ড যুদ্ধ এবং যুদ্ধের সমস্ত হানাদার বাহিনী মৃত্যুবরণ করলো। তারপর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হলো। এরপরেই মুভিটি শেষ হয়ে যায়।



মুভিটি সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামত।

Screenshot_20240326-193615.jpg

youtube থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া হয়েছে।

"হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড"একটি মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক চলচ্চিত্র। মুভিটির মধ্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা যেভাবে শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং মাকে রক্ষা করার জন্য যেভাবে জীবন বিসর্জন দিয়েছে সেই চিত্রটুকু খুবই সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এই মুভিটির মধ্যে। একই সাথে আমি মনে করি এই মুভিটির সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য হলো যখন বুড়ি তার বাকপ্রতিবন্ধী সন্তানকে হানাদার বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা বলে তুলে দিল তখন হানাদার বাহিনী মায়ের সামনে প্রতিবন্ধী সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করলো। কিন্তু বাংলার মা তারপরেও নিজ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের সন্তানের বিনিময়ে রক্ষা করলো। মুভিটির মধ্যে এই দৃশ্যটি দেখে সত্যি আমার পুরো শরীর শিহরিত হয়ে উঠেছে। তাই আমি মনে করি এটাই ছিল এই মুভির সব থেকে সেরা দৃশ্য।



ব্যক্তিগত রেটিং

আমি মুভিকে ৯.৫/১০দিচ্ছি।



মুভিটি দেখার লিংক।



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।


সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

এই মুভিটি আমি কয়েকবার দেখেছি। আমার কাছে মুভিটি ভীষণ ভালো লেগেছে। আবার খুব কষ্ট ও লেগেছে শেষে।আপনি মুভিটির চমৎকার রিভিউ করলেন।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে মুভির রিভিউটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

অনেক সুন্দর কমেন্ট করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

হাঙর নদী গ্রেনেড আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ কে কেন্দ্র করে তৈরি করা অন্যতম একটি সিনেমা। এই সিনেমাটা সেই ছোট্ট বেলায় দেখা হয়েছিল। আজ আপনার রিভিউ পড়ে আরো একবার দেখতে ইচ্ছে করছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, দারুণ ভাবে সিনেমাটির রিভিউ আমাদের সকলের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

মুভিটি দেখবেন অনেক ভালো লাগবে। দেশের প্রতি অন্যরকম এক ভালোবাসা জন্মাবে।