প্রিয় কমিউনিকেশন আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আপনাদের দোয়ায় ।আসলে ভালো থাকি বিধায়ই আপনাদের সামনে সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে হাজির হয় ।ঠিক তেমনি আজকে আমি আপনাদের সামনে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি যে বিষয়ে লিখব সেটি হচ্ছে ছোট একটি গল্প । এই গল্পটির নাম এক হাথ জমিন।
জমির উদ্দিন গ্রামের প্রভাবশালী এক প্রভাবশালী জোদ্দার। তার বাবাও ছিল একজন নামকরা জোরদার ।তিনি গরীব অসহায় মানুষকে দাদন হিসাবে টাকা দিয়ে থাকত এবং এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ মুনাফা লুটে নিত। বলতে গেলে সে মানুষকে নির্যাতন করেই তার জীবিকা নির্বাহ করত। তাই জমির উদ্দিন বংশ-পরম্পরায় গরিব অসহায় মানুষদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা জমির উদ্দিন এর মধ্যেও বহল আছে।
জমির উদ্দিন এখন তার নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে নতুন পন্থা বেছে নিয়েছে ।সেই পন্থার একমাত্র মাধ্যম হলো মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দেয়ার মাধ্যমে তাদের জমির কাগজ রেখে দেওয়া এবং সেই সাথে তাদের কাছ থেকে একটি করে টিপসই রেখে দেয়। এবং জমির উদ্দিন গরিব অসহায়দের বলে সুদে আসলে টাকা দিয়ে জমির দলিল ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
এভাবে করে সে সকল অসহায় দরিদ্র মানুষের সহায় সম্পদ লুটে নিত। বিশেষ করে জমির উদ্দিনের পাশে যাদের জমি থাকত সে তাদের জমি জোর করে দখল করতো দখল এভাবে করত যে একহাত করে সেই জমির মধ্যে ঢুকে যেত এভাবে এক হাত করতে করতে একটা পর্যায়ে সেই মানুষের সকল জমি সে নিয়ে নিত। এ যেন দেখার মতো কেউ ছিল না। প্রতিবাদ করলেই জমির উদ্দিনের লাঠিয়াল বাহিনী গরিব অসহায় মানুষদের উপর নির্যাতন চালাত।
তাই একপ্রকার ভয়ে এ সকল গরিব মানুষরা জমির উদ্দিন কে কিছুই বলতে পারতো না সবকিছু তারা মুখ বুজে সহ্য করতো। একেবারে নিরুপায় হয়ে গরিব অসহায় লোক গুলো সব সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে জমির উদ্দিন এর নামে বিচার দিতো।
জমির উদ্দিন যে এলাকাতে বসবাস করত সেই এলাকাটি ছিল নদী বহুল একটি জনপদ।এই জনপদের মানুষের প্রধান জীবিকার একমাত্র মাধ্যমিক ছিল নদী কেন্দ্রিক এই নদী থেকে তারা মাছ ধরে নিয়ে আসতো এবং সেই মাছ তারা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু গরিব অসহায় জেলেরা তাদের প্রাপ্য কখনোই পেত না ।কারণ জমির উদ্দিন তাদের সর্বোচ্চ উঠে নিতো আবার মাঝে মাঝে নদীর ভয়াল থাবায় নদীর দুই পাড় ভেঙে যেত।
যাই হোক জমির উদ্দিনের এক মেয়ে এবং দুইটি পুত্র সন্তান ছিল ।মেয়েটি ছিল জমির উদ্দিন এর বড় সন্তান ।মেয়েটি দেখতে দেখতেই বড় হয়ে গেল এবং বিবাহর উপযুক্ত হয়ে উঠলো ।এই পর্যায়ে জমির উদ্দিন ভালো একটি ছেলে দেখে মেয়েটিকে বিবাহ দিল। কিন্তু আসলে সেখানেও মেয়েটি খুব একটি ভালো ছিল না। ছেলেটি মাঝে মধ্যেই জমির উদ্দিন এর মেয়ের উপর নির্যাতন করতো।
মেয়েটি সবকিছুই মুখবিদ বুঝে সহ্য করতো কারণ তার বাবা জানতে পারলে তার স্বামীর রক্ষা নেই। এভাবে দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল ।পরবর্তীতে জমির উদ্দিন এর মেয়ে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যায়। বাবার চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু এটা দেখে জমির উদ্দিন এক প্রকার ভেঙে পড়ল। যাইহোক এবার সন্তানের দাফন কাফন করতে হবে কিন্তু সে দাফন কাফন করার জন্য যে স্থান নির্ধারণ করল সেই স্থানটি ছিল নদীর পাশে ।সেখানে মেয়েটিকে দাফন করা হলো ।কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারেই কবরের কিনারায় চলে আসলো ।তখন কবর ভাঙতে আর মাত্র এক হাত বাকি আছে ।
একহাত নদী ভাঙলে মেয়েটির কবর ভেঙে যাবে। তখন জমির উদ্দিন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল হায়রে নদী জীবনে কত মানুষের জমি একহাত করে করে দখল করে নিয়েছি ।আজকে তুই আমার মেয়েটির কবর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছিস। আসলে সবকিছুই আমার পাপের ফল। কারণ আমি সারা জীবন মানুষের জমিন দখল করেছি কিন্তু অবশেষে আমারই চোখের সামনে আমার মেয়ের কবরটি ভেঙে যাচ্ছে। আর মাত্র এক হাত ভাঙলেই আমার মেয়ের কবরটি নদীর বুকে বিলিন হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখে জমির উদ্দিন এক প্রকার সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং বললেন আমি আর কখনো অন্যায় ভাবে কারো জমি দখল করব না।