বিহাইন্ড দ্যা সিন।ট্রফি প্রজেক্ট।

in hive-129948 •  2 years ago 

♥️আসসালামুআলাইকুম♥️

আমি @bristy1, আমার বাংলা ব্লগ এর একজন সদস্য। আর আমার এই প্রিয় কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷তবে এই সময়ে ভালো থাকাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।যাইহোক,আজকে একদম ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

FrameArt_20231920647874.jpg

মাটির ট্রফি তৈরির বিহাইন্ড দ্যা সিন।

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে একেবারে ভিন্ন একটি টপিক নিয়ে আসলাম। আর এই বিষয়ে হয়তোবা এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো পোস্ট করেনি। যাইহোক আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এসেছি একটি পোস্ট। আজকে আমার পোস্টে আপনারা দেখবেন আমার ট্রফি তৈরির বিহাইন্ড দ্যা সিন 🤭।যদিও ট্রফি তৈরি করেছিলাম অনেক আগে যখন ট্রফির কনটেস্ট ছিল তখন।

20221225_123655.jpg

ট্রফিটি যখন তৈরি করেছিলাম তখন অনেক কষ্ট করে করেছি। প্রায় পাঁচ দিন ধরে এই ট্রফি তৈরির কাজ করেছি। পাঁচ দিন পর যখন শেষ দিন চলে আসল তখনই আমি শেয়ার করেছিলাম। তার পূর্বে যখন কনটেস্ট এনাউন্সমেন্ট করেছিল তখন বিভিন্ন ব্যস্ততা এবং বাসায় মেহমান থাকার কারণে আমি পোস্ট রেডি করতে পারিনি। তাও চেষ্টা করেছিলাম ক্লে দিয়ে কিছু তৈরি করে লাস্ট ডেট এ পোস্ট করব। কিন্তু যখন ওই দিনই দেখলাম সকাল বেলা আইরিন আপু অ্যানাউন্সমেন্টে দিয়েছিলেন কনটেস্টে প্রতিযোগী কম থাকার কারণে আবার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর সেটি দেখে তো আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম।

20221225_130243.jpg

20221225_124907.jpg

কারণ প্রথম সপ্তাহে তো কিছু করতে পারিনি। কিন্তু আর এক সপ্তাহ সময় পাওয়ার কারণে আমি ফ্রি ছিলাম আর আমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম, সেই হিসেবে আমি অনেকটা ফ্রি হয়ে কাজটাও খুব সহজেই করতে পারবো ভেবেছি। যে ভাবনা সেই কাজ করে ফেললাম। প্রথমবারই আমি চিন্তা করলাম মাটির ট্রফি তৈরি করব। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড বলেছিল এটি কষ্ট করে তৈরি করা যাবে কিনা? বললাম দেখি না কি হয়।যদি না হয় পরবর্তীতে অন্যকিছু করার চেষ্টা করব। ও যখন দেখল যে আমার ইচ্ছা আছে তখন সে আমাকে হেল্প করলো।

20221225_124253.jpg

20221225_124456.jpg

আমরা তখন প্রথমে চিন্তা করলাম কাঠি,ঢাকনা, মাটি দিয়ে তৈরি করব। কিছু কাঠিও জোগাড় করে নিলাম। তার পাশাপাশি আমার আম্মু চুলার জন্য কিছু মাটি রেখেছিল, যেগুলো একটু আঠালো রকমের হয়। উইপোকা যে মাটিগুলো নিচ থেকে উপরে উঠায় ওই মাটিগুলো দিয়ে কাজ করতে বেশি সুবিধা হয়। কারণ এগুলো একদম ফ্রেশ থাকে আর আঠালো হয় যার কারণে এটা দিয়ে কাজ করতে সুবিধা। কাঠি দিয়ে কাজ শুরু করার পর আব্বু একটি বোতল নিয়ে আসে। বলল এ বোতলটি দিয়ে শেপ সুন্দর হবে। তখন সে বোতলটি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিলাম। পাশে আবার একটি ছোট বক্স ছিল যেটা পুরনো। আর সেটা দিয়ে ট্রফির নিচের শেপটি তৈরি করার জন্য নিয়ে নিলাম।
IMG-20221228-WA0054.jpg

যাই হোক সে হিসেবে আমি মাটি গুলো নিয়ে নিলাম এবং কাজ করা শুরু করলাম। যেহেতু আমার হাতে মাটি ছিল তাই আমি ফটোগ্রাফি করতে পারিনি। সেই কাজে আমাকে সাহায্য করেছিল আমার হাজব্যান্ড এবং আমার ছোট আন্টি। আমার ছোট আন্টিও আমাদের বাড়িতে ছিল। যখন আমার হাজব্যান্ড নিজেও আমার সাথে মাটির কাজ ধরতে বসেছিল তখন আমার ছোট আন্টি আরও একটা ছবি তুলে নিয়েছিল🤣🤣।তখন আমি উঠিয়ে দিলাম তাকে।

20221225_130058.jpg

আর আমার ছেলেকে রেখেছিল আমার ছোট বোন, আম্মু আর আব্বু। যতদিন সকাল বেলায় আমি মাটি নিয়ে ট্রফি বানাতে বসে ছিলাম ততক্ষণ পর্যন্ত আমার আব্বু আমার ছেলেকে নিয়ে হাটাহাটি করেছে। আমি একদিকে কাজ করছি আর বাকিরা ছেলেকে সামলাচ্ছে😊। তারপর যখন কাজ করছি তখন সে মাটির দিকে তাকিয়েছিল। একটা পর্যায়ে ও কান্নাকাটি খুব বেশি শুরু করে দিয়েছিল। তখন গোসলের সময় ছিল তখন আমার আম্মু ওকে গোসল করিয়ে দিচ্ছিল। আর সে বসে বসে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, কখন আমি তাকে নিব।

20221226_121458.jpg

যাইহোক, যেহেতু রোদ নেই ভাবলাম কি করা যায়। আব্বু বলে ফ্যান দিয়ে বাতাস করতে। তারপর চিন্তা করলাম যেহেতু আগুন আছে, আগুনের পাশে রেখে দেই। তারপর আগুনের পাশে রেখে দিলাম। আমার হাজব্যান্ড বলল ভিতরে যে বোতল দেয়া আছে বোতলটা যদি কোন রকমে গলে যায় আগুনের তাপে, তাহলে তো কাজটা একদম নষ্ট হয়ে যাবে। আর সেটা চিন্তা করার পর পর সাথে সাথে চুলা থেকে নামিয়ে নিলাম এবং যতটুকু পরিমাণ রোদ লাগতো ততটুকু পরিমাণ দিতাম।কিন্তু সেই রোদে কোন কাজ হয়নি। তাও কি আর করার চুলার পাশে একটু দূরে রেখে দিলাম যাতে কিছুটা শক্ত হয়। এখানে আবার বলে রাখি আমি কিন্তু সবাইকেই বারবার করে বলে দিয়েছিলাম যাতে কেউই ট্রফির ধারে কাছে না যায়। ট্রফি যদি একবার পড়ে যায় তাহলে কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। তার পাশাপাশি বিড়াল কেউ পাহারা দিয়েছিলাম যদি সে আমার ট্রফিটাকে ভেঙে ফেলে, হাহাহা।

20221227_194815.jpg

20221227_195658.jpg

যাই হোক এরপর যখন রং করতে গেলাম তখন আমার কাছে থাকা পোস্টার রংগুলো দিয়ে রং করতে বসেছিলাম। কিন্তু দেখলাম যত বড় ট্রফি এই রঙ দিয়ে হবে না। তখন ভাবলাম কি করা যায়, আর অন্য কোন রং আছে কিনা। তারপর আমার মনে আসলো আমি যখন ব্লকের কাজ করতাম তখন কিছু রং কিনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো দিয়ে কাজ না করার কারণে এখন সেগুলো পড়েই রয়েছে, তাই আমি উঠে গেলাম।

20221228_191839.jpg

20221228_191824.jpg

সেই রংগুলো নিয়ে আসার পর দেখলাম এগুলো শক্ত হয়ে আছে। তারপরও খুব কষ্ট করে এগুলো বের করলাম এবং মিক্স করার পর কিছুটা নরম হলে এটি দিয়ে আমি রংয়ের কাজ করলাম। এর মাঝেই মনে আসলো যে গ্লিটার আছে,তাও মেকাপ বক্সের। ভাবলাম, এগুলোকে একটু গ্লিটারের ছোঁয়া লাগিয়ে দেই তাহলে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগবে। তারপর আমার ভাইয়ের লাইটিং সিস্টেম গুলো ছিল সেগুলো দিয়ে ফটোগ্রাফি করে শেষ করলাম আমার ট্রফির কাজ। যাই হোক ৫ দিন ধরেই অনেক কষ্ট করে করেছি।আবার শুধু যে কষ্ট করে করেছি তা কিন্তু নয়,আনন্দের সাথে এই কাজটা করেছি।

G3kJMwXodJhltsOQJstqNwoKQlT.jpg

অবশেষে ফলাফল পেয়ে তো খুব খুশি হয়েছিলাম,আর কষ্টটা সার্থক হয়েছে।

এটাই ছিল আমার ট্রফি তৈরির বিহাইন্ড দ্যা সিন।

সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

♥️আল্লাহ হাফেজ♥️

মোবাইল ও পোস্টের বিবরণ

ক্যামেরাস্যামসাং গ্যালাক্সি
ক্যামেরা.মডেলএম১২
ফটোগ্রাফার@bristy1
লোকেশনফেনী

images (4).png

20211121_200134.jpg

আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

images (4).png

💦

💦 BRISTY 💦

💦

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে আপনার এই পোস্ট দেখেই বুঝতে পারছি কতটা কষ্ট করে আপনি এটা তৈরি করেছেন। বিশেষ করে নিভৃতের কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগছিল। আপনার কাছে আসার জন্য খুব কান্নাকাটি করছিল। আসলে ওর এতো ছোট বয়সে ওকে রেখে এই কাজটা সম্পন্ন করলেন এটাই অনেক কষ্টের ব্যাপার। তবে আপনাকে সবাই মিলে সহযোগিতা করেছে এই বিষয়টা ভীষণ ভালো লাগলো। সবাই সহযোগিতা করলে সবকিছুই করা সম্ভব হয়। তাছাড়া মাটির কাজ করা কিন্তু ভীষণ কঠিন।

ঠিক বলছেন আপু আর আপনার করা ক্রাফটটিও বেশ সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

প্রতিযোগিতার জন্য যে ট্রফিটা বানিয়েছিলেন সেটি আমি দেখেছিলাম এবং খুবই ভালো ছিল সেটা দেখতে। ট্রফি তৈরির পেছনে এত কষ্ট দেখে আরও ভাল লাগছে যে এত কষ্ট করে আপনি সুন্দর একটা মাটির তৈরি ট্রফি বানিয়েছিলেন। ধন্যবাদ আপু ট্রফি বানানোর পেছনের গল্পটা আজকে শেয়ার করার জন্য।

অনেক সময় কষ্ট করে কোন কিছু তৈরি করলে শুধু সেই ফলাফল দেখা যায়।কিন্তু তার পেছনে কষ্টগুলো এবং আনন্দগুলো লুকায়িত থাকে। আর তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

আপু সত্যি আপনার এত পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। কথায় আছে কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে। আপনার সাথে এই প্রবাদ একদম মিলে গিয়েছে। আজ আপনার সেই ট্রফি বানানোর বিহাইন্ড দ্যা সিন দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আপনার কাজ করার সময় আপনার পরিবার আপনাকে সহযোগিতা করেছে শুনে অনেক ভালো লাগলো। ছোট বাচ্চাদের রেখে কাজ করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। আপনার বাচ্চাকে রেখে এত কষ্ট করে এত সুন্দর একটি কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

চেষ্টা করেছিলাম সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার। আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে এটাই তো আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

প্রতিযোগিতার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করেছেন। পরিশেষে সফল হয়েছে এইটা খুবই ভালো লাগলো। মাটি দিয়ে ট্রফি তৈরি বেশ কষ্টের কাজ। ট্রফি বানানোর বিহাইন্ড দ্যা সিন দেখে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া সবসময় সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

আপু আপনি ট্রফি বানাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন, তা আগেই বলেছিলাম।আর এজন্য পুরষ্কারও পেয়েছেন।এই ঠান্ডায় মাটি দিয়ে কাজ করা সত্যি ই খুব কঠিন ছিল।ছেলেকে রেখে সময় দিয়ে এটাকে দাঁড় করানো সত্যি কঠিন ছিল।আর সবার সহযোগিতায় আপনি পেয়েছেন এটা বেশ ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ আপু।

হ্যাঁ আপু কষ্ট করে করেছি আর ফলও পেয়েছি। কিন্তু ছেলেকে রেখেই এখন এখানে সময় দিতে হয় তা না হলে কোন কাজ করা যাবে না।

ট্রফি তৈরির বিহাইন্ড দা সিন এর গল্পটা কিন্তু সত্যিই দুর্দান্ত ছিল। হা হা হা...🤣 আসলে মাটির জিনিস শুকাতে একটু টাইম লাগে, সেক্ষেত্রে পাঁচ দিন ঠিকই আছে। এবার যদি আঠালো মাটি হয় তাহলে আরো একটু বেশি সময় লাগে। তবে আরো একটা ব্যাপার করা যেত, সেটা হলো আগুনের কয়লার ভিতর দিয়ে পোড়ানো তবে যেহেতু ভেতরে প্লাস্টিকের বোতল ছিল সে ক্ষেত্রে সেটাও সম্ভব না।

যেকোনো কিছুর বিহান্ড দা সিন গুলো একটু বেশি মজার হয়, আর আমাদেরটাও বেশ মজা করেই করেছিলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার বিশ্বকাপ ট্রফি বানানোর পিছনে ত দেখছি বিশাল ইতিহাস। অনেক পরিশ্রম করেছেন এই ট্রফি বানানোর জন্য। নিভলু ভাই পাশে থাকাতে আপনার আরো ভাল হয়েছে। তবে খারাপ লেগেছে নিভৃত এর জন্য। বেচারা মায়ের থেকে অনেকক্ষণ দূরে ছিল। ভাগ্যিস আপনার আব্বু আম্মু নিভৃত এর পরিচর্যা করেছিল তা না হলে ত আরো ঝামেলায় পড়তে হত। ৫ দিন কেন ৫ সপ্তাহেও শেষ হত না।ধন্যবাদ আপু।

জি ভাই ঠিক বলেছেন। ট্রফি তৈরির পিছনে বিশাল ইতিহাস। আর এটাও ঠিক বলেছেন সাহায্য সহযোগিতা না পেলে কোন কাজে এগিয়ে যাওয়া যায় না।