বিশ্বাস নাকি শুধুই মনের ভ্রান্ত ধারণা??

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার, আদাব। আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন? ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি।

শনিবার মানেই বড় ঠাকুরের বার তাই বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বেশিরভাগ মানুষ নিরামিষ খাওয়ার প্রথা মেনে চলেন। বড় ঠাকুর বা শনিদেব শনি গ্রহের ঐশ্বরিক রূপকে বোঝায়।জ্যোতিষশাস্ত্রে নয়টি স্বর্গীয় বস্তুর (নবগ্রহ) মধ্যে একটি। তাকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করা হয় ব্রক্ষবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণ বলেছেন যে গ্রহগুলোর মধ্যে তিনি শনি। তিনি কর্ম ন্যায়বিচার ও প্রতিশোধের দেবতা।মানুষের চিন্তা,কথা ও কর্মের উপর নির্ভর করে ফলাফল প্রদান করেন। শনিদেব দীর্ঘায়ু, দুঃখ মৃত্যু বার্ধক্য, শৃঙ্খলা, সীমাবদ্ধতা,দায়িত্ব
উচ্চাকাঙ্খা নেতৃত্ব নম্রতা সততা অভিজ্ঞতার জন্মগত জ্ঞানের নিয়ামক। তিনি আধ্যাত্মিক তপস্যা শৃঙ্খলা ও বিবেকপূর্ণ কাজকেও বোঝায়।
IMG_20220903_203811.jpg

আজ থেকে তেরো বছর আগের কথা। একদিন হঠাৎ এক শনিবারে আমার হাসবেন্ড আমাকে বললো পোস্তগোলা একটা শনিদেবের মন্দির আছে সেখানে তোমাকে নিয়ে যাবো চলো, শুনে আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম মন্দির বলে কথা না করার প্রশ্নই উঠেনা।বিকেলে রেডি হয়ে আমি আমার বড় মেয়ে এবং আমার হাসবেন্ড তিনজন মিলে মন্দিরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম। বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয় তাই যেতে খুব একটা সময় লাগলো না। প্রথমে মন্দিরে প্রবেশ করলাম তারপর ওখানে চাপকল ছিল হাত পা ধুয়ে মন্দিরের সামনে চেয়ার পাতা ছিল সেখানে গিয়ে বসলাম। বেশ কয়েকজন মহিলা মিলে পূজার আয়োজন করছে সন্ধ্যায় পূজা শুরু হবে।আমি কিছু করতে পারছিলাম না তার কারন আমি উপোস ছিলাম না তাই পূজার আয়োজন করতে পারবো না এবং সেদিন আমি আমিষ জাতীয় খাবার খেয়েছিলাম একদম ছুঁতেও পারবো না তাই দূর থেকে শুধু দেখছি তারা কি কি করছে। এক পর্যায়ে পূজার সময় চলে আসলো পুরোহিত মশাই সব গুছিয়ে নিয়ে পূজা আরম্ভ করল আমি দূর থেকে বসে সবকিছু দেখলাম, ঠিক ঐ মুহুর্তে কেন জানিনা আমার মনের মধ্যে একটা ভক্তির উদয় ঘটলো এবং মনে মনে ঠিক করলাম এখন থেকে প্রতিমাসে একবার এই মন্দিরে আসবো সেদিন উপোস থাকবো আর এসে সবার সাথে পূজার আয়োজনে সাহায্য করবো। আর প্রতি শনিবার করে নিরামিষ খাবার খাবো যাতে করে যেকোনো শনিবার ইচ্ছে করলেই যেন মন্দিরে আসতে পারি। তার কারন আমার হাসবেন্ড প্রায়ই সময়ই এই মন্দিরের আশেপাশে ডিউটিতে থাকে তাহলে আমি চাইলেই আসতে পারবো, মাছ মাংস খেয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা একদম ঠিক না, সেদিন থেকেই আমার প্রতি শনিবার করে নিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু হয়। যাইহোক এভাবেই প্রতি মাসে একটা শনিবার উপোস আর বাকি শনিবার গুলো নিরামিষ খাওয়া এবং মাঝে মাঝেই মন্দিরে যাওয়া সবমিলিয়ে ভালোই দুই বছর
চলছিল। তারপর আমার ছোট মেয়ের আগমন তখন থেকে নিয়মের একটু পরিবর্তন হয়ে গেলো,তখন আর উপোস থাকতে পারছিলামনা আবার নিরামিষ খাওয়াও হতো না এভাবে অনিয়মের মধ্যে এক বছর কেটে গেলো, আস্তে আস্তে আমি অসুস্থ হতে থাকলাম তারপর একদিন হঠাৎ করেই এত বেশি অসুস্থ হয়ে গেলাম যে একেবারেই বিছানায় কত ডাক্তার কত চিকিৎসা কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, ডাক্তার চিকিৎসা করতে করতে আমি সবদিক থেকেই একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমার হাসবেন্ড অনেক ভালো একজন মানুষ বলে বছরের পর বছর ধরে আমার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই চলছে চিকিৎসা ঔষধ নিয়েই আমার জীবন ।একদিন হঠাৎ আমার মনে হলো যে আমি মনে মনে যে মানত করেছিলাম সেটা আমি রাখতে পারিনি বলেই আজ আমার এই অবস্থা তারপর মন থেকে ঠাকুরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার শুরু করলাম, আগের মতো মাসে এক শনিবার উপোস আর বাকি শনিবার গুলো নিরামিষ খাবার খাওয়া। মাঝে মাঝে হয়তো হঠাৎ কোন কারনে ভুলবশত আমিষ জাতীয় কোন খাবার খেয়ে ফেলি তাহলে কিছুক্ষণ পর থেকেই আমার শরীর অসুস্থ হয়ে যায় এটা আমি একাধিক বার লক্ষ্য করেছি তাই আমি শনিবার বাসার বাইরে যাই না আমিষ জাতীয় কোন খাবার খাই না এবং ছুঁয়েও দেখিনা। জানিনা এটা কি আমার বিশ্বাস নাকি শুধুই মনের ভ্রান্ত ধারণা,,সে যাইহোক আমি এই বিশ্বাস নিয়েই চলছি এবং আগামী দিনগুলোতেও চলতে চাই।

আজকের নিরামিষ খাবার এর কিছু চিত্র।
IMG_20220903_203811.jpg

IMG_20220903_211617.jpg

IMG_20220903_211629.jpg

IMG_20220903_211646.jpg

আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন আবার দেখা হবে অন্য কোন সময়ে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। ধন্যবাদ সবাইকে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!