হ্যালো
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমি ও পরিবারের সকলেই ভালো আছি।
জীবন নামক যুদ্ধে অনেকে খুব ছোট্টোবেলা থেকেই যুদ্ধ করে বড় হয়, এবং অভ্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। আমার জীবন নামক যুদ্ধটা শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে। আমার জীবন নামক যুদ্ধের কিছু মুহুর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন বাংলাদেশ প্রথম করোনা সনাক্ত করা হয় তখন আমি ঢাকায় আমার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতেই ছিলাম। আস্তে আস্তে যখন করোনা বাড়তে থকলো তখন চিন্তার পরিমানটাও বেড়ে গেলো তখন চারিদিকে আতঙ্ক শুরু হয়ে গেলো দিন দিন করোনা যখন মহা মারিতে পরিনত হলো তখন আমাদের জীবনেও অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করলো।
চারিদিকে মৃত্যুর আতঙ্ক কেউ কারো সংস্পর্শে আসেনা সবাই গৃহবন্দী হয়ে গেলাম। আমার হাসবেন্ড ডিফেন্স এর চাকরি করে।দেশে যত অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে তাদের দায়িত্ব ততটাই বেড়ে যাবে। রোগী সনাক্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় কেউ মারা গেলে সেখানে যেতে হয়। নিজের জীবনের পরোয়া না করেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রথম প্রথম ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে বাসায় আসতো বাজারঘাট করে আনতো তখন আমাদের খুব একটা সমস্যা হতো না কিন্তু সেটা আর বেশিদিন সম্ভব হলোনা।ডিউটির পর বাসায় আসাটা বিল্ডিং এর লোকজন খুব একটা ভালো চোখে দেখতো না সবাই বাড়িওয়ালার কাছে সবাই অভিযোগ করলো যে সে বাইরে চলাচল করে বিভিন্ন লোকজনের সাথে থাকে তার দ্বারাই আমাদের বিল্ডিং এ করোনা ছড়িয়ে পড়বে। ভাড়া বাসা বলে কথা বাড়িওয়ালা তো চাইবে না একজন ভাড়াটিয়ার জন্য আর দশজন ভাড়াটিয়ার অসুবিধা হোক তখন একদিন বাড়িওয়ালা আমার হাসবেন্ড কে ফোন করে বাসায় আসতে না করে দিলো। সেই দিনটা ছিল আমাদের জীবনের খুব খারাপ মুহুর্ত অনেকটা পায়ের নিচে থেকে মাটি সড়ে যাওয়ার মুহুর্ত। কিন্তু কিছু করার নেই আমাদের কথা ভেবে অন্য দশ জনের কথা ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিলো যে আর বাসায় আসবেনা না সপ্তাহে একদিন এসে বাজার করে বাইরের গেইটের সামনে দিয়ে চলে যাবে। আর তাই করলো। আমরা বন্দি কারাগারে দিন কাটালাম আর আমার হাসবেন্ড নিজের জীবন বাজি রেখে দিন রাত পার করতে থাকলো দিন রাত যায় সে আর বাসায় আসেনা আমরা চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি এভাবেই এক মাস কেটে গেলো। তারপর একদিন খবর পেলাম আমার হাসবেন্ড করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এই খবর শুনে আবারও পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে গেলো কি করবো বুঝতে পারছি না আমি চাইলেও সেখানে যেতে পারবো না।বাসায় বসে সারাদিন রাত শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকলাম তার যে বেশিকিছু না হয় ঈশ্বর হয়তো আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তখন চারদিকে মৃত্যুর মিছিল অথচ আমার হাসবেন্ড এর তেমন কোন জটিল সমস্যা হয়নি কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সুস্থ হওয়ার পরও কয়েকদিন থাকতে হলো মোট ১৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের কে আর ঢাকায় রাখবে না দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে , আবারও পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যাওয়ার মুহুর্ত তৈরি হলো বিয়ের পর থেকে ১৫ টা বছর একসাথে কাটিয়েছি তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছিনা, শুধুমাত্র সন্তানের ভালোর জন্য চলে আসতে হয়েছে। আমার দুই মেয়ের জন্ম ঢাকায় বড় হওয়া ঢাকায় তারা গ্রামের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়তো সমস্যা হবে তাই তাদের কথা চিন্তা করে শহরে বাসা ভাড়া নেওয়া হলো আমার হাসবেন্ড এর বড় দাদা শহরে থাকে তার বাসার পাশেই ভাড়া নেওয়া হলো।হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ২১ দিনের ছুটি নিয়ে আমাদের কে রাখার জন্য নিজ এলাকায় আসলাম। সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে ২১ দিন পর সে আবার অনিশ্চিত জীনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলো আর আমার আবার শুরু হলো চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে দিন পার করা। কয়েকদিন পর আমার মা এসে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো যাওয়ার তিন চার পরেই একদিন দুপুর বেলা খাওয়ার পর একটু বাইরে গিয়ে কয়েকজন মিলে গল্প করছিলাম অনেক সময় ধরে বসে থাকার পর মনে হলো এবার রুমে গিয়ে একটু রেস্ট করি।যেই উঠে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য দুই এক পা এগিয়ে গেছি অমনি হঠাৎ করেই মাথা ঘুড়ে পড়ে সুপারির গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাম পা বাঁকা হয়ে পড়ে গেলাম তারপর কি হয়েছে আমি জানিনা। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে এসে ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে মাথায় জল ঢালাঢালি শুরু করেছে কিছুক্ষণ পরে আমার জ্ঞান ফিরে তারপর দেখি লোকজন দিয়ে ভরে গেছে আমার মা তো সেই কান্নাকাটি করছে জ্ঞান ফেরার পর অনুভব করলাম পায়ে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে পা নাড়াতে পারছি না সাথে সাথে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো ডাক্তার দেখানো এক্সরে করানো হলো ডাক্তার বললো পা ভেঙে গেছে, পুরো পা প্লাস্টার লাগানো হলো বেন্ডেজ করে ঔষধ পত্র নিয়ে বাড়িতে আসা হলো খাওয়া দাওয়া দাঁত মাজা মুখ ধোয়া সমস্ত কিছু বিছানায় আমার মা দিন রাত আমার সেবা করতো আমি শুধু শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলতাম একদিকে স্বামী নিয়ে চিন্তা তারমধ্যে আমার এই অবস্থা সবকিছু মিলিয়ে খুব খারাপ পরিস্থিতি দেড় মাস পর আবার ডাক্তার দেখানো হলো ডাক্তার দেখে বললো অনেকটাই ভালোর দিকে শুনে অনেকটা আশার আলো জ্বলে ওঠার মতো অবস্থা হলো।
ডাক্তার বললো আরও কিছুদিন প্লাস্টার রাখতে হবে আবার কিছু ঔষধ পত্র দিলো এভাবেই দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেলো। তিন মাস পর পায়ের প্লাস্টার খুলে দেওয়া হলো ডাক্তার বলছে খুব বেশি হাঁটার চেষ্টা করা যাবে না প্রতিদিন দুই এক পা করে হাঁটতে হবে, প্লাস্টার খোলার পর আমি হাঁটতে পারছি না তিন মাসে হাঁটা ভুলে গেছি এরকম অবস্থা আমার দুই বৌদির দুই কাঁধে হাত দিয়ে ওদের উপরে পুরো ভর করে এক পা দুই পা হাঁটার চেষ্টা করলাম এভাবে প্রতিদিন বৌদিদের সাহায্যে একটু একটু করে হাঁটা শিখছি। কিছুদিন পর একটু স্বাভাবিক হতে লাগলো একটু সুস্থ হওয়ার পর আমার বাসায় মা সহ চলে আসলাম সব কাজ কর্ম মা করে আমি তেমন কিছু করতে পারিনা এভাবেই ছয় মাস কেটে গেলো।
জীবন নামক যুদ্ধ পার্ট-২ তে
দেখা হবে আবার সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি
আপু জীবন নামক যুদ্ধ পার্ট ১ পড়ে বেশ বুঝতে পারছি আপনার উপর দিয়ে কি পরিমান মানসিক চাপের ঝড় বয়ে চলেছিল করণাকালীন সময়ে। আর সেই করোনা কালীন সময়ে আপনার হাজব্যান্ড করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল জেনে বেশ খারাপ লাগলো। আবার যখনই ভাবছি করোনার ভয়েল থাবা থেকে আপনার হাসবেন্ড পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে এটা ভেবেও খুবই ভালো লাগলো। খুবই দুর্বিষহ দিন যাপন করেছেন সেই সময়টাতে। অপরদিকে আপনার পা ভাঙ্গার ব্যাপারটাও খুবই মর্মান্তিক ছিল। যাইহোক আপু বিপদে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হয় আর আপনিও অনেকটাই ধৈর্য ধরে সেই দিনগুলোর মোকাবেলা করেছেন খুবই সাহসিকতার সাথে। জীবন নামক যুদ্ধ পার্ট ২ পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্য পড়েই বুঝতে পারছি আপনি আমার গল্পটা খুবই মনোযোগ সহকারেই পড়েছেন।আমার গল্প পড়ার জন্য আপনাকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit